বালাগাল উলা বিকামালিহি – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনির

বালাগাল উলা বিকামালিহি শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনির এর বিদয়াতে দ্বালালা গ্রন্থ হতে হুবহু নেয়া হয়েছে।

মীলাদে অনেক সময় “বালাগাল উলা বিকামালিহি…..” পাঠ করা হয়। বর্তমানে আহলে হাদীসগণ এবং তাদের মতাদর্শে প্রভাবিত কিছু আলেম-ওলামা এই কবিতাটিকে শিরকী কবিতা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে। তারা বলে “বালাগাল উলা বিকামালিহি” এর অর্থ “রাসুলু্ল্লাহ সাঃ নিজ যোগ্যতার বলে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেছেন।” একারণে এটা একটি শিরকী বাক্য। এই সকল লোকেরা বিপরীতমুখি রোগে আক্রান্ত। একদিকে যেমন তাদের জ্ঞান-গরিমা কম ও গবেষণা শক্তি দূর্বল বিপরীত দিকে কোনো ব্যক্তি বা বিষয় সম্পর্কে মন্তব্য করার ব্যাপারে তাদের সাহস অতিরিক্ত বেশি। আমি একটা বিষয় ভেবে পায় না যে এই বাক্যটির ভিতরে যোগ্যতা কথাটি কোথা থেকে আসল। আরবী ভাষা সম্পর্কে যৎসামান্য জ্ঞান রাখে এমন যে কারও নিকট স্পষ্ট যে এখানে ব্যবহৃত (كمال)  ‘কামাল’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে পরিপূর্ণতা। লিসানুল আরবে বলা হয়েছে, ‘কামাল’ অর্থ হলো পরিপূর্ণতা। তাজুল উরুসে বলা হয়েছে, ‘কামাল অর্থ হলো তামাম (পরিপূর্ণতা) এ দুটি পরষ্পর সমার্থবোধক শব্দ। সিহাহ ও অন্যান্য গ্রন্থে এমনটিই বলা হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো রাসুলুল্লাহ সাঃ কি পুরিপূর্ণতার দিক থেকে সর্বোচ্চ স্থানের অধিকারী ছিলেন না? স্বয়ং রব্বুল আলামীন বলেন,

হে নবী নিঃসন্দেহে আপনি সর্বোত্তম চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন। (সুরা কালাম-০৪)

রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, আমাকে পাঠানো হয়েছে উত্তম চরিত্রকে পরিপূর্ণতা দেওয়ার জন্য।

হাকিম মুস্তাদরাকে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদিসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ, ইমাম জাহাবীও তার সাথে ঐক্যমত পোষণ করেছেন, শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহা-৪৫।

কবি নিজেও এই অর্থে রাসুলুল্লাহ সাঃ পরিপূর্ণতার সর্বোচ্চ স্তরে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন। তাইতো পরবর্তীতে তিনি বলেন,

(خصاله مجع حسنت) “তার সকল স্বভাব-চরিত্র অতীব সুন্দর”। সুতরাং এই কবিতাটিতে যা বলা হয়েছে সেটি পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস হতে চয়ন করা হয়েছে আর নির্বোধরা এটার বিপক্ষে প্রচারে লিপ্ত হয়ে গেছে।

আমার বিশ্বাস, আরবী ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞ কিন্তু উর্দু ভাষায় দক্ষ কোনো ব্যক্তি এ বিষয়ে প্রথম জটিলতা সৃষ্টি করেছে। যেহেতু উর্দু ভাষায় কামাল (کمال) শব্দটি দক্ষতা, যোগ্যতা, কারামতি ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। বলা হয়, “তোমহারা কামাল দেখাও” অর্থাৎ তোমার কামাল (দক্ষতা, যোগ্যতা, কারামতী, তেলেসমাতী ইত্যাদি) প্রদর্শন করো।

( ف ی ات غ ل ال روز ) নামক উর্দু ডিকশোনারীতে ‘কামাল’ শব্দের অর্থ সম্পর্কে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ হওয়া, তেলেসমাতি বা কারামতি, যোগ্যতা, বিস্ময়কর কাজ, উস্তাদী তথা কর্মদক্ষতা ইত্যাদি।

সেখানে আরও বলা হয়েছে, “কামাল দেখানো” এর অর্থ হলো ‘তেলেসমাতি ও দক্ষতা প্রদর্শন করা, কারামতী দেখানো।

পাঠক চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন যারা “বালাগাল উলা বিকামালিহি” এর অর্থ করেন, নিজ যোগ্যতায় সর্বোচ্চ মাকামে পৌঁছে যাওয়া তারা বুঝে হোক, না বুঝে হোক আসলে উর্দু অভিধান হতে অর্থটি প্রহণ করেছেন, আরবী অভিধান হতে নয়। আর বলাই বাহুল্য যে, একটি আরবী কবিতা উর্দু অভিধানের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতা ছাড়া কিছু নয়।

এই হচ্ছে এদের ভাষাজ্ঞান! আর শরীয়তের মুলনীতি সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা আরো বেশি মারাত্মক। ওলামায়ে কিরামের নিকট স্বীকৃত মূলনীতি হলো, কোনো একটি কথা যখন একাধিক অর্থ বহন করে যার একটি অর্থ কুফরী আর অন্য অর্থটি উত্তম তখন মুসলিমের উপর সুধারনা করতে হবে এবং উত্তম অর্থটি গ্রহণ করতে হবে।

বাহরুর রায়েকে বলা হয়েছে, যদি দেখা যায় কোনো একটি বিষয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে কুফরী প্রমাণিত হচ্ছে কিন্তু একটি ‍ৃদৃষ্টিকোন থেকে দেখা যায় কুফরী প্রমাণিত হচ্ছে না তবে মুফতীর উচিৎ যে দৃষ্টিকোন থেকে কুফরী প্রমাণিত হচ্ছে না সেটি গ্রহণ করা। এভাবে মুসলিমের প্রতি সুধারণা বজায় রাখতে হবে।

অন্যান্য ওলামায়ে কিরামও অনুরুপ কথা বলেছেন। অথচ এই সকল হতভাগারা কল্পিত অর্থের উপর নির্ভর করে উপমহাদেশের হাজার হাজার আলেম-ওলামা ও সাধারন মানুষ শিরকে লিপ্ত আছে এমন মন্তব্য করছে যেহেতু তারা ‘বালাগাল উলা’ পাঠ করে।

এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তারা ‘কামাল’ শব্দের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পরিত্যাগ করে এখন ’বাগালা’ শব্দের পিছনে লেগেছে। তাদের যুক্তি হলো বালাগা ফি’লে লাযিম যার অর্থ পৌঁছে যাওয়া। এখানে বলা উচিৎ ছিল আল্লাহ তার রাসুলকে পরিপূর্ণতার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন, রাসুল সাঃ পরিপূর্ণতার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছেন এভাবে বলা সঠিক নয়। অন্য লোকের ছিদ্রান্বেষণে যে ব্যক্তি ব্যস্ত থাকে তার বুদ্ধি যে কি পরিমাণ লোপ পায় তা এই সকল নির্বোধদের কার্যকলাপ না দেখলে কখনও অনুধাবন করা সম্ভব নয়। যখন একজন মুসলিম বলে, আমি বাড়ি পৌঁছে গেছি। এটা কি শিরক হবে? এর অর্থ কি এটাই বুঝতে হবে যে, সে বলতে চাচ্ছে আমি নিজ যোগ্যতায় ও সক্ষমতায় বাড়ি পৌঁছে গেছি এখানে আল্লাহর কোনো ভূমিকা নেই? (নাউযু বিল্লাহ) সব সময় কি এমন বলতে হবে যে, আল্লাহম আমাকে পৌঁছে দিয়েছেন, আজ সকালে ভাত খেয়েছি এমন না বলে বলতে হবে আল্লাহ আমাকে খাওয়ালেন? এভাবে প্রতিটি ক্ষেতে আমি করেছি, আমি বলেছি, আমি গিয়েছি এগুলো বাদ দিয়ে বলতে হবে আল্লাহ আমাকে দিয়ে করিয়েছেন, আল্লাহ আমাকে দিয়ে বলিয়েছেন ইত্যাদি। এর অন্যথা হলে কি ঈমান নষ্ট হবে? এ ধরণের চিন্তাধারা সুস্পষ্ট ভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতা ছাড়া কিছু নয়।

আল্লাহ বলেন, হে নবী নিঃসন্দেহে আপনি সর্বোত্তম চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন। (সুরা কালাম-০৪)

এখানে তিনি কেনো বললেন না, হে নবী আমি আপনাকে সর্বোত্তম চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছি? রাসুল সাঃ সর্বোত্তম চরিত্রের উপর আছেন এর অর্থ যে আল্লাহই তাকে এর উপর রেখেছেন এটা কি না বললে বোঝা যায় না?

মহান আল্লাহ এই সকল নির্বোধদের চক্রান্ত থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *