নাসিখ মানসুখ জানার প্রয়োজনীয়তা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মূনীর
নাসিখ মানসুখ জানার প্রয়োজনীয়তা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মূনীর এর মাজহাব বনাম আহলে হাদীস গ্রন্থ হতে হুবহু সংকলন করা হয়েছে
নাসখ (نسخ ) অর্থ রহিত বা বাতিল হয়ে যাওয়া। আর মানসুখ (منسوخ ) অর্থ যে আয়াতটি বাতিল হয়ে যায় আর নাসিখ (ناسخ )অর্ত যে আয়াতির মাধ্যমে কোনো আয়াত বাতিল হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্তৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান? (সূরা বাকারাহ-১০৬)
তিনি আরো বলেন, আর যখন আমি এক আয়াতের পরিবর্তে অন্য আয়াত আনয়ন করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন। তখন তারা বলে, আপনি তো মনগড়া কথা বলেন। আসলে তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না। (সূরা নাহল-১০১)
ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃ এর সাহাবারা তার কথার মধ্যে সর্বশেষ কথাটি গ্রহণ করতেন। (সহীহ বুখারী)
অর্থাৎ রসুলুল্লাহ সাঃ এর একটি আদেশ অন্যটি দ্বারা রহিত হয়ে যেতো সেক্ষেত্রে সাহাবায়ে কিরাম শেষের আদেশটি অনুসরণ করতেন। সুতরাং এটা প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত অন্য আয়াত দ্বারা মানসুখ হয়ে যেতে পারে একইভাবে রসুলুল্লাহ সাঃ এর একটি কথা পরবর্তী আরেকটি কথার মাধ্যমে মানসুখ হতে পারে। কোরআন-হাদীসে এর প্রচুর উদাহরণ রয়েছে। ইমাম সূয়ূতির মতে মানসুখ আয়াত ২০ টি, মুল্লা জিয়ূন বলেছেন ৪০ টি, অন্যান্য ওলামায়ে কিরাম মানসুখ আয়াতের সংখ্যা অনেক বেশি বলে উল্লেখ করেছেন। নাসিখ মানসুখ সম্পর্কে না জানলে কিরুপ বিভ্রান্তির সম্ভাবনা আছে তা বোঝার জন্য আমরা একটি উদাহরণ পেশ করবো। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
তোমাদের কারো যখন মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়, সে যদি কিছু ধন-সম্পদ ত্যাগ করে যায়, তবে তার জন্য ইনসাফের সাথে ওসীয়ত করা বিধিবদ্ধ করা হলো, পিতা-মাতা ও নিকটাত্নীয়দের জন্য। পরহেযগারদের জন্য এ নির্দেশ মান্য করা জরুরী। (সূরা বাকারা-১৮০)
এই আয়াতে পিতামাতার জন্য ওসীয়ত করার স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একজন কোরানে হাফিজ যদি সমগ্র কোরআন তালাশ করেন তবু এই নির্দেশের বিপরীত কোনো নির্দেশ খুজে পাবেন না। এই আয়াতটি মানসুখ কিনা বা মানসুখ হলে এটার কোন অংশ মানসুখ সমগ্র কোরআন পড়ে মুখস্ত করে নিলেও তিনি সেটা বুঝতে পারবেন না। কিন্তু বিশ্বস্ত কোনো একটি তাফসীর গ্রন্থ হতে এই আয়াতটির তাফসীর দেখে নিলেই জানা যাবে যে, এই আয়াতের “পিতামাতার জন্য” অংশটুকু মানসুখ হয়ে গেছে। কেননা রসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, যার যা পাওনা আল্লাহ তাকে তা দিয়েছেন অতএব এখন আর কোনো ওয়ারিসের জন্য ওসীয়ত করা যাবে না। (আবু দাউদ-আলবানী সহীহ বলেছেন)।
আলী রাঃ একবার একজন কাজী (বিচারক) কে ডেকে বললেন, তুমি কি নাসিখ মানসুখ সম্পর্কে জানো?
উক্ত কাজী না সূচক উত্তর দিলে তিনি বললেন, তুমি তো নিজেও ধ্বংস হয়েছো অন্যকেউ ধ্বংস করেছো। (আলইতকান, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)
অন্য বর্ণনায় এসেছে তিনি একজন বক্তাকে একই প্রশ্ন করেছিলেন। সে না সূচক উত্তর দিলে তিনি বললেন, তাহলে তুমি আমাদের মসজিদ হতে বের হয়ে যাও। এখানে কোনো আলোচনা করো না। (কানযুল উম্মাল)
আলী রাঃ এর এই কথাটি উপরে বর্ণিত সবগুলো বিষয়ের উপর সমানভাবে প্রযোজ্য। নাসিখ-মানসুখ সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যাক্তি যেমন ফতওয়া দেওয়া ও দ্বীনী বিষয়ে আলোচনা করার অযোগ্য একইভাবে আম-খাছ, হাকীকত-মাযাঝ ইত্যাদি বিষয় সমূহের মধ্যে কোনো একটি সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একই বিধান। কেননা এই সব বিষয়ের কোনো একটির ব্যাপারে অজ্ঞ থাকলে কোরআন ও হাদীস সঠিকভাবে উপলদ্ধি করা সম্ভব নয় আর যে কোরআন হাদীস নিজেই বুঝতে সক্ষম নয় তার জন্য অন্য কাউকে বোঝাতে যাওয়া শোভা পায় না।