আম খাছ – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মুনির

আম খাছ – ক্বোরআন হাদিস বোঝার ক্ষেত্রে ত্রূটি বিচ্যুতি সময়হ – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মুনির এর মাজহাব বনাম আহলে হাদীস গ্রহন্থ হতে সংকলিত

আম (العام ) বলতে বোঝায় কোনো কিছু সাধারণভাবে সবার জন্য প্রযোজ্য হওয়া আর খাছ (الخاص ) বলতে বোঝায় কোনো কিছু বিশেষভাবে কারো উপর প্রযোজ্য হওয়া। যেমন যে দা’ওয়াতে ধনী গরীব সবাইকে নিমন্ত্রণ করা হয় তাকে আমরা বলি আম দা’ওয়াত আর যে দা’ওয়াতে কেবল বিশেষ বিশেষ ব্যাক্তিদের নিমন্ত্রণ করা হয় সেটাকে বলি খাছ দা’ওয়াত। একই ভাবে যে বৈঠকে সবাইকে বসতে দেওয়া হয় সেটাকে বলা হয় আম বৈঠক আর যেখানে কেবল গণ্য মান্য ব্যক্তিদের বসতে দেওয়া হয় সেটাকে বলে খাছ বৈঠক। এ ব্যাপারে সমস্যা হলো কোরআন-হাদীসে অনেক বিধিবিধান আমভাবে বলা হয়েছে কিন্তু সেগুলোর উদ্দেশ্য খাছ। আবার এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা খাছভাবে বলা হয়েছে কিন্তু উদ্দেশ্য আম। প্রথম প্রকারের উদাহরণ প্রচুর। কোরআন-হাদীসে যে বিধানই বর্ণনা করা হয়েছে তা কোনো না কোনো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যেমন আল্লাহ বলেন সলাত কায়েম করো। হায়েজগ্রস্ত মহিলা, পাগল, নাবালেগ ইত্যাদি ব্যক্তিরা এই নির্দেশের মধ্যে অন্তর্ভূ্ক্ত নয়। আল্লাহ তায়ালা জেনাকারীকে বেত মারার আদেশ দিয়েছেন কিন্তু বিবাহিত জেনাকারী এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত নয়। হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত যে, বিবাহিত জেনাকারীকে রজম (পাথর নিক্ষেপ) করে হত্যা করতে হবে। খারেজীরা বলে এই হাদীস কোরআনের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে অগ্রহণযোগ্য। তারা রজমের বিধানকে অস্বীকার করে। এভাবে প্রায় প্রতিটি বিধান কোনো না কোনোভাবে খাছ হয়ে গেছে।

ইমাম সুয়ূতি বলেন, এমন কোনো আম নেই যা কোনো না কোনো ভাবে খাছ হয়ে যায় নি। (আল ইনকান) বিপরীত দিক হতে অনেক সময় কোনো কিছু খাছভাবে বলা হয় কিন্তু উদ্দেশ্য হয় আম। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মতো নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। কেননা এতে তারা সুযোগ পেয়ে যায় যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে। আর তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলো। (সুরা আহযাব-৩২)

এই আয়াতে বিশেষভাবে নবীর স্ত্রীদের উদ্দেশ্য পরপূরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করা হচ্ছে কিন্তু এই আয়াতের বিধান সকল মেয়েদের উপর প্রযোজ্য। পূরুষদের জন্য কোন মেয়েকে বিবাহ করা হারাম এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, এবং তোমাদের স্ত্রীদের ঐ সকল মেয়েরা যারা তোমাদের কোলে লালিত পালিত হয়। (সূরা নিসা-২৩)

আয়াতে খাছ ভাবে স্ত্রীর অন্য পক্ষের যেসব মেয়েরা পরবর্তী স্বামীর কোলো পালিত হয় উক্ত স্বামীর জন্য তাকে বিয়ে করা হারাম বলা হচ্ছে। খাছ ভাবে বলার কারণে কেউ কেউ মনে করেছেন যেসব মেয়েরা পরবর্তী স্বামীর গৃহে পালিত হয় না তাদের বিয়ে করা হারাম নয়। সাহাবায়ে কিরামের মধ্যেও এ বিষয়ে কিছু দ্বিমত ছিল। তবে জমহুর (বেশিরভাগ) আলেম বলেছেন এখানে খাছভাবে বলা হলেও উদ্দেশ্য আম। সেকারণে কোলে পালিত হোক বা অন্য কোথাও পালিত হোক স্ত্রীর অন্য পক্ষের মেয়ে বিবাহ করা বৈধ নয়। দেখা যাচ্ছে আম-খাছের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত না থাকলে। কোরআন-হাদীস সঠিকভাবে বোঝা সম্ভব নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *