দ্বীন শব্দের অর্থ – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর

দ্বীন শব্দের অর্থ – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর তাওহীদ আর রহমান বই থেকে হুবহু তুলে ধরা হয়েছে একই সাথে তাওহীদের সাথে সম্পৃক্ত শব্দের অর্থ জানুন এবং আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।

আরবী দ্বীন (دىن)  শব্দটি একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ যার একটি অর্থ অন্যটির বিপরীত। একদিকে যেমন দ্বীন অর্থ আনুগত্য করা বিপরীত দিকে এর অর্থ অন্যের উপর কর্তৃত্ব করা। বলা হয়, আমি তার উপর কর্তৃত্বশীল হয়েছি ফলে সে আমার অনুগত হয়েছে। এখানে কর্তৃত্ব করা ও আনুগত্য করা উভয় অর্থে দ্বীন শব্দটি ব্যাবহার করা হয়েছে। একইভাবে দ্বীন শব্দটি কর্ম ও কর্মফল তথা ভাল-মন্দ আমল করা এবং কারো ভাল-মন্দের বিচার করা ইত্যাদি অর্থে ব্যাবহৃত হয়। বলা হয়, “তুমি যেমন কর্ম করবে তেমন ফল পাবে।” এখানে কর্ম করা ও ফল পাওয়া উভয় অর্থে দ্বীন শব্দটি প্রয়োগ করা হয়েছে। একটি হাদীসে এসেছে, “নিশ্চয় আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন মানুষের বিচার করবেন” এছাড়া কোনো মতবাদ গ্রহণ করা বা কোনো কাজ অভ্যাসে পরিনত করা অর্থেও দ্বীন শব্দটি ব্যাবহৃত হয়। আল্লাহ বলেন, “তারা সত্য দ্বীন গ্রহণ করে না” (সুরা তাওবা-২৯) রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, “মানুষ তার বন্ধুর দ্বীন গ্রহণ করে” (আবু-দাউদ, তিরমিযী)

এই হাদীসে দ্বীন গ্রহণ করে এর অর্থ সম্পর্কে আওনুল মা’বুদে বলা হয়েছে, “অর্থাৎ তার বন্ধুর স্বভাব-চরিত্র ও মতবাদ গ্রহণ করে”।

এই হলো, দ্বীন শব্দটির শাব্দিক ব্যাখ্যা। এই সকল ব্যাপক ও বিপরীত অর্থসমূহকে একত্রিত করে দ্বীন শব্দটির প্রকৃত অর্থকে বিকৃত করা বা শব্দিক জটিলতার সৃষ্টি করা আমাদের ইচ্ছা নয়। এখানে আমাদের উদ্দেশ্য হলো, দ্বিন শব্দটির ঐ অর্থ নির্ধারন করা যে অর্থে ইসলামকে দ্বীন বলা হয় এবং ইসলাম ছাড়া অন্য সকল দ্বীন শিরক-কুফর এবং সেসব দ্বীরেন অনুসারীদের কাফির ও মুশরিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনিত করেছি” (সুরা মায়েদা-৩) “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হলো ইসলাম” (সুরা আলে-ইমরান-১৯) “যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অনুদ্ধান করে আল্লাহ তা গ্রহণ করবেন না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হবে।” সুরা আলে-ইমরান-৮৫)

রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, যে দ্বীন পরিবর্তন করে (দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করে অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করে অর্থাৎ কাফির হয়ে যায়) তাকে হত্যা করো। (সহীহ্ বুখারী)

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস সমূহতে দ্বীন শব্দটি যে অর্থে ব্যাবহার করা হয়েছে তা নির্ণয় করা কঠিন কাজ নয়। দ্বীন শব্দটি এখানে নিয়ম-নীতি, পন্থা-পদ্ধতি ও বিধি-বিধান অর্থে ব্যাবহার করা হয়েছে। ফিকহুল আকবারে এসেছে, দ্বীন বলতে বোঝায় ঈমান, ইসলাম ও আল্লাহ প্রদত্ত যাবতীয় বিধি-বিধানকে। মোল্লাহ্ আলী কারী রঃ এই কথাটির ব্যাখ্যায় বলেন, দ্বীন শব্দটি যখন সাধারনভাবে ব্যাবহার করা হয় তখন এর অর্থ হয় নবীদের উপর যেসব বিধি-বিধান অবতীর্ণ করা হয়েছে সেগুলো মেনে নেওয়া তার উপর বিশ্বাস স্থাপণ করা এবং স্বীকৃতি দেওয়া।( শারহে ফিকহে আকবার- পৃষ্ঠা-১৩১)

মোট কথা, ইসলাম আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ একমাত্র সত্য দ্বীন এর অর্থ পবিত্র কুরআন ও রাসুলুল্লাহ্ সাঃ এর হাদীসে যেসব নিয়ম-নীতি ও বিধি-বিধান বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলো চিরন্তন সত্য আর তার বিপরীতে যেসব মতবাদ ও চিন্তাধারা আছে তা ভ্রান্ত ও পরিত্যাক্ত। যে কেউ কুরআন-হাদীসে বর্ণিত আল্লাহ প্রদত্ত যাবতীয় নিয়ম-নীতি ও বিধি-বিধান সত্য হিসেবে স্বীকার করে নেয় সে ইসলাম গ্রহণ করেছে বলে গণ্য হয়। বিপরীত দিকে যদি কেউ কুরআন হাদীসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত কোনো একটি বিধানকে অস্বীকার করে বা ইসলামের বিপরীত কোনো বিধানকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করে তবে সে দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করেছে বলে গণ্য হয় এবং কাফির হয়ে যায়। সুতরাং বিষয়টি ঈমান ভঙ্গের দ্বীতিয় মূলনীতি তথা আল-ইনকার অর্থাৎ আল্লাহর বিধান অস্বীকার করার সাথে সম্পর্কিত। পূর্বে এ বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়াবলী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা গত হয়েছে। আল্লাহর বিধান অস্বীকার করা বলতে কি বোঝায় এবং কি ধরনের বিধান অস্বীকার করলে কুফরী হয় সেসব বিষয়ের বিভিন্ন মূলনতি সম্পর্কে আমরা আলোচনা করেছি। তাছাড়া কিভাবে একজন ব্যক্তি দ্বীন ইসলামে প্রবেশ করে এবং কিবাবে দ্বীন ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় সে বিষয়ে পূর্বে সুবিস্তারে আলোচনা করেছি। উপরোক্ত আলোচনার আলোকে দ্বীন বলতে কি বোঝোয় এবং দ্বীন ইসলাম কিভাবে গ্রহণ করতে হয় আর কিভাবে একজন ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম হতে বের হয়ে যায় এসব বিষয়ে সহজে ও সুস্পষ্টভাবে ধারনা লাভ করা সম্ভব। সুতরাং দ্বীন শব্দটির অর্থ সম্পর্কে নতুন কোনো জটিল আলোচনার অবতারণা করা বুদ্ধি সম্মত নয়। যেহেতু এটা সময়ের অপচয় ও বাক্যের আলাপ ছাড়া কিছু নয়।

দ্বীন শব্দের অর্থ – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর তাওহীদ আর রহমান বই থেকে হুবহু তুলে ধরা হয়েছে একই সাথে তাওহীদের সাথে সম্পৃক্ত শব্দের অর্থ জানুন এবং আপনার বন্ধদের মাঝে শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *