মজলিসে হাজির হওয়ার বিধান বা কাফিরদের ভূখন্ডে বসবাস করার বিধান শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর গবেষণা মূলক প্রবন্ধটি পড়ুন এবং শেয়ার করুন

মজলিসে হাজির হওয়ার বিধান বা কাফিরদের ভূখন্ডে বসবাস করার বিধান #শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর# এর গবেষণা মূলক প্রবন্ধটি পড়ুন এবং শেয়ার করুন

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

তোমাদের উদ্দেশ্যে পূর্বেই এ হুকুম নাযিল হয়েছে যে, যখন তোমরা কোথাও আল্লাহর আয়াতের সাথে কুফরী করতে ও তা নিয়ে তামাশা করতে দেখো তবে অন্য প্রসঙ্গ না আসা পর্য্ন্ত তোমরা তাদের সাথে বসবে না তাহলে তোমরা তাদের মতো হয়ে যাবে। (সূরা নিসা-১৪০)

রসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, যদি কেউ মুশরিকদের সাথে একত্রিত হয় বা তাদের সাথে বসবাস করে তবে সে তাদের মতই। (আবু দাউদ)

এই হাদীসের সনদ সম্পর্কে দ্বিমত রয়েছে তবে এটা ঐ হাদীসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যা আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি, যাতে রসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যে মুসলিম মুশরিকদের মধ্যে অবস্থান করে আমি তার সাথে সম্পর্কহীন।

বর্তমান সময়কার তাকফীরি চিন্তাধারার লোকেরা এই সকল আয়াত ও হাদীসের সঠিক অর্থ এবং এগুলোর ব্যাপারে ওলামায়ে দ্বীনের মতামত কি সেটা লক্ষ্য না করে এগুলোর স্পষ্টভাষ্যের উপর নির্ভর করে যে কেউ কাফিরদের মজলিসে হাজির থাকে বা হিজরত না করে কাফিরদের ভুখন্ডে বসবার করে তাকে কাফির বলে আখ্যায়িত করে থাকে। এ চিন্তাধারা সঠিক নয়। কাফিরদের মজলিসে হাজির থাকা বা কাফিরদের ভুখন্ডে বসবাস করা কুফরী নয় যদি না কুফরীর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

আবু বকর আল জাসসাস রঃ বলেন, আল্লাহ তায়ালা যে বললেন তাদের সাথে বসলে তোমরা তাদের মতো হয়ে যাবে এর ব্যাখ্যায় দুধরণের কথা বলা হয়েছে।

এক. তোমরা পাপী হবে যেমন তারাও পাপী যদিও তোমাদের পাপ কুফরীর পর্যায়ে নয়।

দুই. তোমরা তাদের মতই যেহেতু বাহ্যিকভাবে বোঝা যাচ্ছে তোমরা কুফরীর উপর সন্তুষ্ট রয়েছো আর কুফরী ও আল্লাহর আয়াত নিয়ে তামাশার উপর সন্তুষ্ট থাকাটা কুফরী। তবে যদি কেউ তাদের সাথে বসে কিন্তু এ অবস্থাকে অপছন্দ করে সে কাফির হবে না যদিও তাদের সাথে বসা তার জন্য বৈধ নয়। (আহকামুল কুরআন)

ইবনে হাযার আল আসকালানী রঃ বলেন, এই আয়াত হতে বোঝা যায় কাফির ও জালিমদের নিকট হতে দূরে থাকতে হবে। কেননা তাদের ভিরতে অবস্থান করাটা নিজেকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করা। এটা তখন যখন সে তাদের সহযোগীতা না করে বা তাদের কাজে সন্তুষ্ট না থাকে। আর যদি সে তাদের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে যায় তবে সে তাদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত বলেই গণ্য হবে। (ফতহুল বারী)

ইমাম আল বায়দাবী রঃ বলেন, তোমরা তাদের মতো এর অর্থ হলো পাপের দিক হতে তোমরা তাদের মতো। যেহেতু ইচ্ছা করলে তোমরা তাদের কাজের প্রতিবাদ করতে পারতে বা কমপক্ষে তাদের পরিত্যগ করতে পারতে। আর যদি তোমরা তাদের কফরীকে মেনে নাও তবে তোমরা কুফরীর দিকে হতে তাদের মতো। (তাফসীরে বায়দাবী)

ইমাম বাগাবী রঃ বলেন, যখন তারা আল্লাহর দ্বীন নিয়ে তামাশা করে তখন যদি তোমরা তাদের মজলিসে বসে থাকো এবং এ কাজে সন্তোষ প্রকাশ করো তবে তোমরা তাদের মতোই কাফির। (তাফীরে বাগাবী)

ইমাম ইবনে জারীর তাবারী রঃ বলেন, (তাদের সাথে বসে) তোমরাও আল্লাহর অবাধ্য হয়েছো যেভাবে তারাও অবাধ্য হয়েছে। অতএব পাপে লিপ্ত হওয়ার দিক থেকে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিষিদ্ধ তাতে লিপ্ত হওয়ার দিক হতে তোমরা সমান। (তাফসীরে তাবারী)

ইবনে কাছীর রঃ তার তাফসীরে অনুরুপ কথা বলেছেন, এখানে তোমরা তাদের মতো এই অংশের ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন পাপে লিপ্ত হওয়ার দিক থেকে তোমরা তাদের মতো।

ইমাম কুরতুবী রঃ বলেছেন, (তোমরা তাদের মতো) এই কথার মধ্যে যে তুলনা করা হয়েছে তা সকল দিক থেকে নয়।

অর্থাৎ তারা যেমন কাফির তোমরাও অনুরুপ কাফির এমন নয় বরং তারাও অপরাধী তোমরাও অপরাধী এখানে এই ধরনের তুলনা বোঝানো হয়েছে।

উপরে আমরা যা কিছু বর্ণনা করলাম তার আলোকে যে বিষয়টি স্পষ্ট প্রমাণিত হয় তা হলো-যে মসলিসে কুফরী কথা-বার্তা আলোচিত হয় শুধুমাত্র সেখানে উপস্থিত থাকার মাধ্যমে একজন মুসলিম কাফির হবে এমন নয় যদি না সে কোনোভাবে ঐ সকল কাজের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদান করে।

সূরা তাওবাতে আল্লাহর দ্বীন নিয়ে তামাশা করা কুফরী এটা বর্ণনা করার পর যারা তামাশা করে তাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, তোমাদের একদলকে আমি ক্ষমা করতে পারি কিন্তু অন্য দলকে শাস্তি দেবো যেহেতু তারা পাপী ছিল। (সুরা তাওবা-৬৬)

এ আয়াত সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়া রঃ বলেন, কুফরী তো ক্ষমা করা হয় না অতএব এটা নিশ্চিত বোঝা যায় যে, যে দলটিকে ক্ষমা করার কথা বলা হচ্ছে তারা পাপী ছিল কাফির নয়। হয়তো তারা যারা কুফরী করেছিল তাদের সাথে বসেছিল এবং কোনো প্রতিবাদ না করেই কুফরী কথা শুনেছিল অথবা তারা এমন কিছু কথা বলেছিল যা কুফরী নয় তবে পাপ বা এই প্রকার কিছু ঘটেছিল। (আস সারিম আল-মাসলুল)

ইমাম ইবনে তাইমিয়ার এই কথার মাধ্যমে বোঝা যায় সেখানে কুফরী কথা বলা হয় সেখানে বসা বা বিনা প্রতিবাদে কুফরী কথা শোনার মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি কাফিরে পরিনত হয় না।

তবে যদি কোনভাবে কুফরীর প্রতি সমর্থন প্রমাণিত হয় তবে তা কুফরী হবে। যেহেতু কুফরীর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করা কুফরী। যেমন, কাফিরদের ধর্মীয় উৎসবে তাদের সাথে আনন্দে মেতে ওঠা তাদের পোষাকে সজ্জিত হওয়া ইত্যাদি। কাজি ইয়াদ ও হানাফী মাজহাবের ওলামায়ে কিরাম হতে এ বিষয়ে কিছু বর্ণনা পূর্বে গত হয়েছে।

মোট কথা কাফিরদের মজলিসে হাজির হওয়া নিজেই কুফরী নয় যতক্ষণ না তার মাধ্যমে কুফরীর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করা হচ্ছে এমন বোঝা যায়। এ বিষয়টি স্মরণ রেখে বিভিন্ন অবস্থার আলোকে সিদ্ধান্ত প্রহণ করতে হবে। সাধারণভাবে পুথিবদ্ধ একটি নিয়ম সর্বাবস্থায় সকল মানুষের উপর প্রয়োগ করা সঠিক পন্থা নয়। কাফিরদের রাষ্ট্রে বসবাস করার বিধানও একই। সামার্থ থাকা সত্ত্বেও হিজরত করে ইসলামী রাষ্ট্রে গমন না করে কুফরী রাষ্ট্রে বসবাস করার কারণে কোনো মুসলিমকে কাফির বলা যেতে পারে না যদিও এটা অপরাধ হিসেবে গণ্য। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কথা, “যে মুশরিকদের সাথে অবস্থান করে সেও তাদের মধ্যে গণ্য” এর মাধ্যমে সে কাফির এটা উদ্দেশ্য নয়। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা বলেন,

যারা ঈমান এনেছে কিন্তু (সামার্থ থাকা সত্ত্বেও) হিজরত করে নি তাদের সাথে তোমাদের কোনো সম্পর্ক নেই যতক্ষণ না তারা হিজরত করে চলে আসে। তবে যদি তারা দ্বীনের খাতিরে তোমাদের সহযোগিতা চায় তবে তাদের সহযোগিতা করা তোমাদের দায়িত্ব। (সুরা আনফাল-৭২)

এই আয়াতে যারা হিজরত করেনি তারা ঈমান এনেছে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে সেই সাথে মুসলিমদের নিকট দ্বীনের খাতিরে সাহায্য প্রার্থনা করার অধিকারও তাদের দেওয়া হয়েছে। অতএব, তারা যে কাফির নয় সে ব্যাপারে এই আয়াত স্পষ্ট দলিল।

যে হাদীসে বর্ণিত আছে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যে কাফিরদের সাথে বসবাস করে সে তাদের মতো ঐ হাদীসের ব্যাখ্যায় আজীম আবাদী বলেন, “সে তাদের মতো এর অর্থ হলো, কিছু দৃষ্টি কোন থেকে (সার্বিকভাবে নয়)” [আওনুল মা’বুদ] অর্থাৎ সে তাদের মতোই কাফির এমন নয়। এ বিষয়ে অনেকে আরেকটি আয়াত উল্লেখ করে থাকেন। আল্লাহ বলেন,

যেসব লোকেরা নিজেদের উপর জুলুম করেছেন ফেরেস্তারা তার জান কবজের সময় প্রশ্ন করে তোমরা কি অবস্থায় ছিলে? তারা বলে আমরা তো ঐ এলাকায় (কাফিরদের এলাকায়) দূর্বল অবস্থায় ছিলাম। ফেরেস্তারা তখন বলেন, আল্লাহর জমিন কি প্রশস্ত ছিল না? তোমরা হিজরত করতে। এই সকল লোকের স্থান হবে জাহান্নাম আর তা খুবই নিকৃষ্ট স্থান।(নিসা-৯৭) লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই আয়াতে হিজরত না করলে তাদের জাহান্নামের শাস্তি দেওয়া হবে এমন বলা হচ্ছে এখানে ঐ ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে এমন বলা হয় নি। এটা তো নিশ্চিত যে কাফিরদের এলাকা হতে হিজরত করে ইসলামী রাষ্ট্রে গমণ করা ফরজ। যারা সামার্থ থাকা সত্ত্বেও হিজরত না করে তারা শাস্তি হিসাবে জাহান্নামে প্রবেশ করতে পারে কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তারা কাফির হয়ে যাবে বা জাহান্নামে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে।

কাফিরদের মজলিসে হাজির হওয়ার বিধান বা কাফিরদের ভূখন্ডে বসবাস করার বিধান #শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর# এর গবেষণা মূলক প্রবন্ধটি পড়ুন এবং শেয়ার করুন এবং কাফিরদের মজলিসে হাজির হওয়ার বিধান প্রবন্ধ সম্পর্কে আপনার মতামত ব্যক্ত করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *