তাদের উপাস্যদের মন্দ বলোনা – #শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মুনীর#

তাদের উপাস্যদের মন্দ বলোনা – আল্লাহর বাণী “তাদের উপাস্যদের মন্দ বলোনা” এর সঠিক অর্থ – #শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর# এর গবেষণা মূলক প্রবন্ধটি পড়ুন এবং আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।

যে আয়াতে অন্য ধর্মের সমালোচনা করতে নিষেধ করা হয়েছে সেখানে এই নিষেধাজ্ঞার কারণও বলে দেওয়া হয়েছে, আল্লাহ বলেছেন, “তাহলে তারা শত্রুতা ও অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে মন্দ কলবে”। এই আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ ও তার সাহাবায়ে কিরাম মুশরিকদের উপাস্য সমূহের সমালোচনা করতেন। এ অবস্থায় কাফিররা বলে,

হে মুহাম্মাদ, তুমি যদি আমাদের উপাস্যসমূহের নিন্দা করা হতে বিরত না হও তবে আমরাও তোমার ইলাহকে নিন্দা করবো। (ইবনে কাছির)

অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাঃ ও তার সাহাবারা কাফিরদের উপাস্যসমূহের নিন্দা-মন্দ করেই আসছিলেন।  এটা বন্ধ করার জন্য মুশরিকরা বলে, যদি তোমরা আমাদের উপাস্যদের নিন্দা করা হতে বিরত না হও তবে আমরাও তোমাদের উপাস্য সম্পর্কে মন্দ কথা বলবো। এই পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তাদের উপাস্য সম্পর্কে মন্দ কথা বলতে নিষেধ করেন। আল্লাহর সম্মান সুরক্ষিত রাখার জন্যই এটা করা হয়েছে বাতিল উপাস্য সমূহকে সম্মান প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যে নয়।

নিতান্ত ঝগড়াটে ও নির্বোধ প্রকৃতির লোকদের এড়িয়ে চলা উচিৎ এই অর্থে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “যখন তাদের সাথে মুর্খ লোকেরা কথা বলে তখন তারা বলে সালাম” (সূরা ফুরকান-৬৩)

এখানে সালাম অর্থ অবজ্ঞাভরে এড়িয়ে চলা, সম্মান প্রদর্শন বা সম্ভাষণ করা নয়। এই বাচনভঙ্গি যারা বোঝে না তারাই সূরা আনয়ামের উপরোক্ত আয়াতে কাফিরদের উপাস্যদের সম্মান প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে এমন মনে করে।

প্রকৃত কথা হলো, কাফিরদের ধর্ম ও তাদের উপাস্যদের সম্পর্কে সমালোচনা করা নিজে একটি বৈধ ও উত্তম কাজ। কিন্তু এর ফলস্রুতিতে আল্লাহর সম্মানে আঘাত আসতে পারে এই আশঙ্কায় এটা পরিত্যাগ করতে বলা হয়েছে। ইমাম বায়দাবী রঃ এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, এই আয়াত প্রমাণ করে একটি অপছন্দনীয় কাজ ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় অনেক সময় একটি উত্তম কাজ পরিত্যাগ করতে হয় কেননা যা কিছু খারাপের দিকে নিয়ে যায় তা খারাপ বলে গণ্য।

কাজি ইবনুল আরবী রঃ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহ তায়ালা তার কিতাবে প্রতিটি ব্যক্তিকে এমন কাজ করতে নিষেধ করেছেন যা আসলে বৈধ কিন্তু তা অন্য আরেকটি অবৈধ কাজের কারণ হয়। (আহকামুল কুরআন)

এরপর তিনি বিষয়টির আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন,

এই আয়াত প্রমাণ করে যে, একজন ব্যক্তির উচিৎ কোনো একটি সঠিক কাজ পরিত্যাগ করা যদি তার মাধ্যমে দ্বীনের কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। সংক্ষেপে কথা হলো, যদি বিষয়টি ফরজ হয় তবে যে কোনো অবস্থায় তা আদায় করতে হবে আর যদি এমন হয় যে, বিষয়টি করলে করা যায় কিন্তু না করলেও দোষ নেই তবে তার উপর এই কথা (সতর্কতার কারণে পরিত্যাগ করা) প্রযোজ্য হবে। আর আল্লাহই ভাল জানেন। (আহ্কামুল কুরআন)

ইমাম ইবনুল আরাবীর এই ব্যাখ্যাটি এই বিষয়ে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কাফিরদের উপাস্যসমূহের নিন্দা-মন্দ করা নিজে একটি ভাল কাজ তবে কাফিররা আল্লাহকে নিন্দা-মন্দ করবে এই কারণে এটা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এই বিধান কেবল সেখানে প্রযোজ্য হবে যেখানে মনগড়া ধর্ম-বিশ্বাস ও বাতিল উপাস্যদের সমালোচনা করা ফরজ বা আবশ্যক না হয়। কিন্তু যখন দা’ওয়াতের উদ্দেশ্যে ও ইসলামের প্রচার করার স্বার্থে ঐ সকল বিষয়ের সমালোচনা জরুরী হয়ে পড়ে তখন কে কি বলবে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে শিকর-কুফরের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে যেতে হবে। একারণে পবিত্র কুরআনে এবং রাসুলের হাদীসে বহুভাবে কাফিরদের ধর্ম-বিশ্বাস ও তাদের উপাস্যদের সমালোচনা করতে দেখা যায়।

পবিত্র কুরআনে কাফিরদে উপাস্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ওরা কি শুনতে পায়? (সূরা শোয়ারা-৭২) ওদের কি হাত-পা আছে? (সূরা আ’রাফ-১৯৫) ওরা তো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে সক্ষম নয়, মাছি কিছু ছিনিয়ে নিলে তা ফিরিয়ে নিতেও সক্ষম নয়। এই উপাস্যরা এবং তাদের পূজারীরা কত দূর্বল।! (হাজ্জ-৭৩) ইত্যাদি।

মুশরিকদের উদ্দেশ্যে দ্যার্থহীনভাবে বলা হয়েছে,

তোমরা এবং তোমাদের উপাস্যরা জাহান্নামের খড়ি। (আম্বিয়া-৯৮)

ইব্রাহীম আঃ মূর্তি পূজারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ধিক! তোমাদের এবং তোমরা যা কিছুর উপসানা কর তাদের। তোমরা কি কিছুই বোঝো না? (আম্বিয়া-৬৭)

বিধর্মীদের ধর্ম ও উপাস্য সম্পর্কে এই প্রকৃতির সমালোচনা থেকে মুমিনরা কখনই বিরত হবে না যেহেতু শিরক-কুফরের বিরুদ্ধে যথাসাধ্য প্রচার প্রচারনা চালানো তাদের উপর অর্পিত ঈমানী দায়িত্ব। এ ধরণের সমালোচনার কারণে যদি কাফিররা রাগান্বিত হয়ে আল্লাহ-রাসুল বা ইসলাম সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করে তবে তার জন্য তারা দ্বিগুণ অপরাধী হবে। যেহেতু একদিকে তারা নিজেরা বাতিলের উপর টিকে রয়েছে এবং অন্য দিকে সত্য ধর্মকে বাতিল বলে আখ্যায়িত করছে।

এখন পাঠক চিন্তা করে দেখতে পারেন, “তোমরা তাদের উপাস্যদের মন্দ বলো না” এই আয়াতের মধ্যে আদৌ কাফিরদের ধর্ম-বিশ্বাস ও উপাস্যদের সম্মান প্রদর্শন করতে বলা হচ্ছে কি না।

তাদের উপাস্যদের মন্দ বলোনা – আল্লাহর বাণী “তাদের উপাস্যদের মন্দ বলোনা” এর সঠিক অর্থ – #শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর# এর গবেষণা মূলক প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *