সূরা দুখানের ৩নং আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর

সূরা দুখানের ৩নং আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর লায়লাতুল বারায়াত গ্রন্থ হতে হুবহু সংকলন করা হয়েছে এছাড়াও শায়েখের বিবিন্ন

সূরা দুখানের ৩নং আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি এই কুরআন এক বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা দুখান-৩)

এই আয়াতে  (مباركة لیلة) বা বরকতময় রাত বলতে কোন রাতকে বোঝানো হয়েছে সে বিষয়ে আলেমদের বিভিন্ন মত পাওয়া যায়।

আল কুরতুবী বলেন, এই আয়াতে উল্লেখিত লাইলাতুল মুবারাকা হচ্ছে কদরের রাত কেউ কেউ বলেছেন বরং শা’বান মাসের মাঝের রাত। এই দিবসটির চারটি নাম রয়েছে (১) লাইলাতুল মুবারাকা (২) লাইলাতুল বারায়া (৩) লাইলাতু আস-সাক্ক (৪) লাইলাতুল কদর। (তাফসীরে কুরতুবী)

পরে তিনি বলেন, ইকরিমা বলেছেন এই আয়াতে লাইলাতুল মুবারাকা বলতে শাবান মাসের মাঝ রাতকে বোঝানো হয়েছে তবে প্রথম মতটিই (অর্থাৎ শবে কদর) বেশি সঠিক যেহেতু আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আমি এই কোরআনকে কদর রজনীতে নাযিল করেছি। (তাফসীরে কুরতুবী)

ইমাম ইবনে জারীর তাবারী বলেন, অন্য অনেকে বলেছেন এই আয়াতে শাবান মাসের মাঝ রাতকে বোঝানো হয়েছে তবে তাদের কথাই সঠিক যারা বলেছেন এখানে শবে কদর উদ্দেশ্য। (তাফসীরে তাবারী)

উপরে উল্লেখিত আয়াতের পরের আয়াতে এসেছে। উক্ত রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী বন্টন করা হয়। (সুরা দুখান-৪)

কোনো কোনো দূর্বল বর্ণনাতে এসেছে, এক শা’বান হতে অন্য শা’বান পর্যন্ত মানুষের কে কে মারা যাবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। এমনকি একজন ব্যক্তি বিবাহ করে বা তার সন্তান হয় অথচ তার মৃত্যু লেখা হয়ে গেছে।

(তিবরানী তার তাফসীরে, বাইহাকী শুয়াবুল ঈমানে, তাফসীরে ইবনে কাছীর ইত্যাদি)

এই হাদীস থেকে কেউ কেউ প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, উক্ত আয়াতে লাইলাতুল মুবারাকা বলতে শাবান মাসের মাঝ রাতকেই বোঝানো হয়েছে। ইবনে কাছীর বলেন,

ইকরামা বা অন্য যারা বলেছেন, উক্ত আয়াতে শা’বান মাসের মাঝ রাত্রি উদ্দেশ্য তবে তারা সত্যতা হতে বহু দূরে কেননা কোরআনে বলা হয়েছে উক্ত রাত রমযান মাসে। আর যে হাদীসটি বর্ণনা করা হয়… (এরপর তিনি আমরা পূর্বে যে হাদীসটি বর্ণনা করেছি সেটি উল্লেখ করে বলেন) হাদীসটি মুরসাল। এধরনের হাদীস স্পষ্ট আয়াতের বিপরীতে উল্লেখ করার মতো নয়। (তাফসীরে ইবনে কাছীর)

ইমাম আন-নাব্বী বলেন,

আমাদের মাযহাবের আলেমরা প্রত্যেকে বলেছেন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা লাইলাতুল কদরেই করা হয়ে থাকে। এই মতটিই সঠিক এটিই বেশিরভাগ আলেমের মত তবে কোনো কোনো তাফসীরকারক বলেছেন ঐ রাত হলো শা’বান মাসের মাঝ রাত। এই মতটি ভুল কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি বরকতময় রাতে কোরআন নাযিল করেছি যে রাতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করা হয় (সূরা দুখান-৩/৪) অন্য আয়াতে বলেন আমি এই কুরআন কদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি। অতএব এই আয়াত পূর্বের আয়াতের ব্যাখ্যাস্বরুপ। (আল মাজমু) সুতরাং সূরা দুখানের উক্ত আয়াতে (مباركة لیلة )  বলতে শবে কদরকে বোঝানো হয়েছে শবে বরাতকে নয় এটিই আলেমদের নিকট সঠিক মত যদিও ইকরিমা ও অন্যান্য কিছু আলেম বলেছেন আয়াতে শা’বান মাসের মাঝ রাত উদ্দেশ্য। অতএব সঠিক মতে উক্ত আয়াত হতে শা’বান মাসের মাঝ রাতের কোনো ফজীলত প্রমাণিত হয় না।

সূরা দুখানের ৩নং আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *