রব শব্দের অর্থ – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর
রব শব্দের অর্থ – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর তাওহীদ আর রহমান বই থেকে নেয়া হয়েছে এছাড়াও দ্বীন, ইলাহ্, ইবাদত ইত্যাদি শব্দের অর্থ জানুন
রব (رب) অর্থ কোনো কিছুর মালিক হওয়া এবং সেটার রক্ষনাবেক্ষন করা। কোনো কিছুর উপর কর্তৃত্ব করা এবং তার উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করা।
আরবী ভাষায় রব শব্দটি মালিক, মনিব, পরিচালক, প্রতিপালক, তত্ত্বাবধায়ক, অনুগ্রহকারী ইত্যাদি অর্থে ব্যাবহৃত হয়। (লিসানুল আরব)
এই সকল অর্থে ‘রব’ শব্দটি আরবী ভাষায় আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো প্রতি ব্যাবহার করার রীতি প্রচিলিত ও প্রশিদ্ধ। সাধারনভাবে বলা হয়, “সম্পদের মারিক” “উটের মালিক” ইত্যাদি। কিয়ামতের আলামাত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, “দাসী তার মনিবকে জন্ম দেবে” (বুখারী ও মুসলিম)। হারিয়ে যাওয়া উট সম্পর্কে তিনি বলেন, “তাকে ছেড়ে দাও তার মালিকেই তাকে খুঁজে নেবে।” (বুখারী ও মুসলিম) পবিত্র কুরআনে এসেছে ইউসুফ আঃ অন্য আরেকজনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তোমাদের মধ্যে একজন তো তার মনিবকে মদ পান করাবে” (ইউসূফ-৪১) এই সকল স্থানে মালিক বা মনিব অর্থে রব শব্দটি ব্যাবহার করা হয়েছে। এই বিশ্লেষণের পর এটা সহজেই অনুমেয় যে, রব শব্দটির শাব্দিক অর্থের উপর শিরক-কুফরের বিধান আরোপ করা সম্ভব নয়। যেহেতু কাউকে কোনো কিছুর মালিক ও মনিব হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া উক্ত ব্যক্তিকে প্রকৃত অর্থে রব হিসেবে গ্রহণ করা বলে গণ্য হতে পারে না। আল্লাহকে যে অর্থে রব বলা হয় সেটিই মূলত ঈমান ও কুফরের সাথে সম্পর্কিত।
আল্লাহ ‘রব’ এর অর্থ হলো, তিনি মহাবিশ্বের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, সুবিশাল সৃষ্টিরাজির উপর স্বয়ংক্রিয় ও স্বয়ংসম্পূর্ণরুপে কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণের অধিকারী, অদৃশ্য হতে সৃষ্টিরাজির রক্ষনাবেক্ষন ও প্রতিপালনকারী। তিনি প্রতিটি সৃষ্টির প্রয়োজন পূর্ণ করেন এবং বিপদ-আপদে আশ্রয় প্রদান করেন ইত্যাদি।
এই অর্থের উপর সামান্য চিন্তা করলে দেখা যাবে উপরে ‘ইলাহ’ শব্দের যে ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে ‘রব’ শব্দটির অর্থ ও ব্যাখ্যা তার চেয়ে কিছুমাত্র আলাদা নয়। প্রকৃতপক্ষে যে ধরণের ক্ষমতা ও শক্তিকে বিশ্বাস করলে কাউকে ‘ইলাহ’ হিসেবে গ্রহণ করা হয় সেই একই পরিমান ও প্রকারের ক্ষমতাতে বিশ্বাস করলেই তাকে ‘রব’ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। অন্য কথায় কাউকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করা অর্থ তাকে রব হিসেবে গ্রহণ করা একইভাবে কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করা অর্থ তাকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করা। এ দুটি বিষয়ের একটিকে আরেকটি হতে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। অতএব, আলাদাবাবে ‘রব’ শব্দটির বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই।
মক্কার মুশরিকরা যাদের পূজা করতো ঐ সকল মূর্তিদের তারা যেমন ‘ইলাহ’ হিসেবে আখ্যায়িত করতো একইভাবে তারা তাদের ‘রব’ নামেও আখ্যায়িত করতো। লিসানুল আরবে বলা হয়েছে তারা লাত নামক যে, পাথরের মূর্তিটিকে পূজা করতো সেটাকে রব্বা (ربهت) হিসেবে আখ্যায়িত করতো যা মূলত রব শব্দের স্ত্রী লিঙ্গ। (লিসানুল আরব)
যারা মনে করে মক্কার মুশরিকরা আল্লাহর রুবুবিয়্যাতে শিরক করতো না। অর্থাৎ তাদের উপাস্য সমূহকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছিল রব হিসেবে নয়। তাদের এই দাবী নিতান্তই অযৌক্তিক। পূর্বে আমরা স্পষ্ট দলিল-প্রমাণের আলোকে তা প্রমাণ করেছি।