বাধ্য হয়ে কুফরীতে সুযোগ গ্রহণ বা কুফরী কাজে বাধ্য হলে সুযোগ গ্রহণ করা উত্তম না কি যে কোনো মূল্যে ঈমানের উপর টিকে থাকাই উত্তম?
বাধ্য হয়ে কুফরীতে সুযোগ গ্রহণ বা কুফরী কাজে বাধ্য হলে সুযোগ গ্রহণ করা উত্তম না কি যে কোনো মূল্যে ঈমানের উপর টিকে থাকাই উত্তম? – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর
ইবনে বাত্তাল রঃ বলেন, আলেমরা ইজমা করেছেন যে, যদি কাউকে কুফরী করতে বাধ্য করা হয় তবু সে কুফরী না করে বরং নিহত হওয়াকেউ পছন্দ করে সে আল্লাহর নিকট তারচেয়ে অধিক পুরুষ্কার পাবে যে বাধ্য হয়ে কুফরী করে। (শারহে বুখারী)
ইমাম কুরতুবীও অনুরুপ কথা বলেছেন। এ ব্যাপারে তারা ইজমা উল্লেখ করেছেন কিন্তু কেউ কেউ এ বিষয়ে কিছু দ্বিমতও উল্লেখ করেছেন। শাফেঈ মাজহাবের আলেম আল-মাওরুদী রঃ বলেন,
যদি প্রশ্ন করা হয় এখানে সবর করা উত্তম না কি সুযোগ গ্রহণ করা উত্তম তবে বলবো, এটা ব্যক্তি বিশেষে বিভিন্ন রকম হতে পারে। (হাবিল ফাতওয়া)
এরপর তিনি বলেন, যদি এমন হয় যে, উক্ত ব্যক্তি বেঁচে থাকলে ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠিত করতে বা শত্রুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম হবে তবে তার জন্য সুযোগ গ্রহণ করাই উত্তম হবে আর যদি সে এই পর্যায়ের না হয় বা এমন আশঙ্কা থাকে যে, সে কুফরী কথা উচ্চারণ করলে ইসলাম গ্রহণ করতে চাচ্ছিল এমন অনেক অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ থেকে দূরে থাকবে তবে তার জন্য ধৈর্য্য অবলম্বন করাই উত্তম হবে।
ইমাম নাব্বীও মাজহাবের কিছু কিছু আলেম এমন মন্তব্য করেছেন বলে উল্লেখ করার পর বলেন, “তবে শাফেঈ মাজহাবে গ্রহণযোগ্য মত হলো আগেরটি” (আল-মাজমু)
অর্থাৎ কুফরী না করে ধৈর্য্য অবলম্বন করার মতটিকেই তিনি শাফেঈ মাজহাবের গ্রহণযোগ্য মত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মোট কথা কিছু দ্বিমত ছাড়া সকল আলেমই একমত যে, হত্যা ও কুফরী করার মধ্যে ইখতিয়ার দেওয়া হলে একজন মুসলিমের উচিৎ নিহত হওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া।
হানাফী মাজহাবের ওলামায়ে কিরামও অনুরুপ মত দিয়েছেন। মালিকুল ওলামা আল-কাসানী রঃ বলেন, যদি সে (বাধ্য হওয়ার পরও) কুফরী না করে তবে সেটা উত্তম এমনকি যদি কুফরী না করার কারণে তাকে হত্যা করা হয় তবে সে পুরষ্কার পাবে। (বাদাইউস সানায়ি)
হাম্বালী মাজহাবের ফকীহ্ ইবনে কুদামা রঃ বলেন, যাকে কুফরী কথা বলতে বাধ্য করা হয় তার জন্য উত্তম হলো তা উচ্চারণ না করে সবর করা। (আল-মুগনী)
এরপর তিনি সাহাবায়ে কিরামের ধৈর্য্য অবলম্বন সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো উল্লেখ করেছেন। এবং ঐ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন যেখানে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, তিনটি গুন যার মধ্যে থাকবে সে ঈমানের স্বাদ পাবে। তার মধ্যে ঐ ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে যেমন ভয় করে কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারেও অনুরুপ ভয় করে।
সন্দেহ নেই যে, সাধারনভাবে কুফরী কথা উচ্চারণের তুলনায় নিহত হওয়াকে প্রাধান্য দেওয়াই অধিক ঈমানের পরিচয়। তবে সর্বাবস্থায় ও সকল ব্যক্তির ক্ষেত্রে একই সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য না হওয়ার মতটিই অধিক সঙ্গত মনে হয়। একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে এমন অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে যে, তার ক্ষেত্রে কুফরী কথা উচ্চারণ করে হলেও নিজের জীবন বা অন্যান্য মুসলিমদের জীবন রক্ষা করা অধিক উত্তম বলে বিবেচিত হতে পারে। কা’ব বিন আশরাফকে হত্যা করা সংক্রন্ত হাদীসটির দিকে মনযোগ নিবদ্ধ করলেই বিষয়টি অনুধাবন করা সম্ভব। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা রঃ কা’ব বিন আশরাফকে হত্যা করার জন্য এমন কথা উচ্চারণ করেছেন যা সাধারন অবস্থায় ুউচ্চারণ করা কুফরী ছিল। এখন প্রশ্ন হলো,এধরণের কথা উচ্চারণ করে কা’ব বিন আশরাফের মতো লোককে হত্যা করা উত্তম নাকি এসব থেকে বিরত থাকা উত্তম? তবে নিশ্চয় উত্তর হবে এধরণের ব্যক্তিদের হত্যা করাই উত্তম যদিও এ উদ্দেশ্য কৌশল হিসেবে কোনো কুফরী কথা উচ্চারণ করতে হয়। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাঃ নিজেই এটা করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং এ উদ্দেশ্যে প্রয়োজন মতো যা খুশি বলার অনুমতি দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাঃ যার নির্দেশ দেন তা অবশ্যই অধিক উত্তম। একইভাবে যদি কোনো মুসলিম মহিলাকে কাফিররা সম্ভ্রম নষ্ট করার ভয় দেখিয়ে কুফরী করতে বাধ্য করে এবং কুফরী করলে তার সম্ভ্রম অক্ষত থাকবে এমন প্রমাণিত হয় তবে উক্ত মহিলার ব্যাপারে সম্ভ্রম নষ্ট করে হলেও কুফরী কথা উচ্চারণ না করার সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মনে হয় না।
মোট কথা, সাধারনভাবে নিজের জীবন, সম্পদ ও সম্মানের ক্ষতি হলেও কুফরী কথা উচ্চারণ না করাই উত্তম এটা নিঃসন্দেহে সঠিক কিন্তু সর্বক্ষেত্রে এবং সর্বাবস্থায় এটা প্রযোজ্য নয় বরং ক্ষেত্র বিশেষে আল্লাহ্ প্রদত্ত সুযোগ গ্রহণ করে নিজের জীবন ও সম্মান-সম্ভ্রম রক্ষা করা বা মুসলিমদের জীবনকে নিরাপদ করা উত্তম হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আর আল্লাহই ভাল জানেন।
বাধ্য হয়ে কুফরীতে সুযোগ গ্রহণ