আল্লাহর কিতাব ও রসুলের হাদীসে কোনো কিছু উল্লেখ আছে বলে দাবী করা অথচ তা উল্লেখ নেই – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মূনীর কুরআন হাদিসে নেই কিন্তু আছে বলে দাবী করার বিধান

আল্লাহর কিতাব ও রসুলের হাদীসে কোনো কিছু উল্লেখ আছে বলে দাবী করা অথচ তা উল্লেখ নেই – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মূনীর কুরআন হাদিসে নেই কিন্তু আছে বলে দাবী করার বিধানর প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে শেয়ার করতে ভূলবেন না।

এ বিষয়ের উদাহরণ হলো, না জেনে কোনো বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন, রসুল বলেছেন এমন মন্তব্য করা। জাল হাদিস বর্ণনা করা ইত্যাদি।

আল্লাহ্ ও রসুলের নামে মিথ্যা কথা প্রচার করা তখন কুফরী হবে যখন এর মাধ্যমে শরীয়তের স্পষ্ট প্রমাণিত কোনো বিষয় অস্বীকার করা হয়। যদি কেউ দাবী করে, আল্লাহ বা তার রসুল বলেছেন মদ পান করাতে দোষের কিছু নেই বা সলাত আদায় না করলে সমস্যা নেই অথবা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন বা সৃষ্টিজগতের পরিচালনায় তার সাথে অন্য কারো অংশিদারিত্ব রয়েছে তবে এই প্রকৃতির মিথ্যাচার কুফরী হিসেবে গণ্য হবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

কিয়ামতের দিন আপনি দেখবেন যারা আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলেছিল তাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে। জাহান্নামই কি অহংকারীদের যোগ্য বাসস্থান নয়! (সুরা যুমার-৬০)

এই আয়াতে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলা সম্পর্কে ইমাম বাগাবী রঃ বলেন,

“তারা দাবী করতো আল্লাহ্ সন্তান গ্রহণ করেছেন বা তার কোনো শরীক রয়েছে” (তাফসীরে বাগাবী)

ইমাম বায়দাবী রঃ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, “আল্লাহর ব্যাপারে তারা এমন সব কথা বলে যার যোগ্য তিনি নন যেমন সন্তান গ্রহণ করা”

আল্লাহ ও তার রসুলের নামে এই প্রকার মিথ্যাচার কুফরী হিসেবে গন্য হবে। কিন্তু যেসব বিষয়ে শরীয়তের স্পষ্টভাবে প্রমাণিত কোনো বিষয়কে অস্বীকার করা হয় না ঐ সকল বিষয়ে আল্লাহ ও তার রসুলের নামে মিথ্যা কথা প্রচার করা কুফরী নয় যদিও এটা সর্বাপেক্ষা মারাত্নক পাপ সমূহের মধ্যে একটি।

রসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,

আমার ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলা তোমাদের কারো ব্যাপারে মিথ্যারোপ করার মতো নয় যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নামে মিথ্যা কথা বলে তার স্থান জাহান্নামে। (সহীহ্ বুখারী)

এই হাদীসটির উপর নির্ভর করে কেউ কেউ মনে করেছেন, আল্লাহর রসুলের নামে মিথ্যা হাদীস তৈরী করা কুফরী। যেহেতু এখানে বলা হয়েছে অন্য কারো উপর মিথ্যারোপ করা আর রাসুলুল্লাহ সাঃ এর উপর মিথ্যারোপ করা একই বিষয় নয়। আর এটা সবাই জানে যে, অন্য কারো ব্যাপারে মিথ্যা বলাও পাপ সুতরাং রসুলের উপর মিথ্যারোপ করা কেবল পাপ নয় বরং কুফরী।

ইবনে হাযার আল-আসক্বালানী রঃ বরেন, “ইমাম জুয়াইনী রঃ অনুরুপ বলেছেন তবে তার পুত্র ইমামুল হারামাইন রঃ স্বীয় পিতার এ মতকে দূর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন।” এরপর তিনি বলেন, “তবে বেশিরভাগ আলেমের মতে এই ব্যক্তিকে কাফির বলা হবে না যদি না সে বিষয়টিকে হালাল মনে করে” (ফাতহুল বারী)

ইমাম ইবনে তাইমিয়া আস-সারিম আল-মাসলুলে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন মতামত উল্লেখ করার পর তিনি সরাসরি রসুলুল্লাহ সাঃ এর নামে মিথ্যা বলা কুফরী হওয়ার মতটিকে শক্ত বলেছেন। তবে এ বিষয়ে জমহুর ওলামায়ে কিরামের মতই অধিক গ্রহণযোগ্য। রসুলুল্লাহ সাঃ এর ব্যাপারে মিথ্যা বলা কুফরী প্রমাণ করে না। যেহেতু পাপ কাজেরও বিভিন্ন স্তর রয়েছে। বিভিন্ন হাদীসে একটি পাপকে অন্য পাপের তুলনায় বেশি ভয়াবহ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। অর্থাৎ অন্য কারো ব্যাপারে মিথ্যা বলার পাপের তুলনায় রসুলুল্লাহ সাঃ এর উপর মিথ্যারোপ করার অপরাধ বহুগুণ বেশি হওয়ার কারণে একটি আরেকটির সমান নয়। তবে রসুলুল্লাহ সাঃ এর উপর মিথ্যারোপ করা কুফরী নয় যতক্ষণ না অকাট্যভাবে প্রমাণিত কোনো বিধান অস্বীকার করা হয়। আর আল্লাহই ভাল জানেন।

উপরের আলোচনাতে আমরা ঈমান ভঙ্গের দ্বিতীয় কারণ “আল-ইনকার” এর তিনটি প্রকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সেগুলো হলো,

(ক) আল্লাহর অস্তিত্ব, রসুলের রিসালাত বা আল্লাহর কিতাব ও রসুলের হাদীসের মাধ্যমে অকাট্যভাবে প্রমাণিত বিধি-বিধানকে অস্বীকার করা।

(খ) আল্লাহর বিধানকে ত্রুটিপূর্ণ ও অযৌক্তিক আখ্যায়িত করা।

(গ) নিজের পক্ষ থেকে আল্লাহ ও রসুলের নামে মিথ্যা কথা প্রচার করা।

এ তিনটি বিষয়ে আমরা যে আলোচনা উপস্থাপণ করেছি তার উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে দেখা যাবে প্রতিটি বিষয় কোনো না কোনো ভাবে আল্লাহ ও তার রসুলের স্পষ্ট কথার মাধ্যমে প্রমাণিত বিধি-বিধান ও মতামতকে অস্বীকার করার সাথে সংশ্লিষ্ট। ইসলামী পরিভাষায় এ ধরণের অস্বীকারকে বলা হয় তাকযীব যার অর্থ কোনো কিছুকে অসত্য ও অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যায়িত করা।

উপরের তিনটি বিষয়ই আল্লাহর শরীয়তকে অসত্য ও অপ্রহণযোগ্য সাব্যস্ত করার সাথে সংশ্লিষ্ট। যেহেতু এখানে আল্লাহর অস্তিত্ব, রসুলের রেসালাত বা প্রমাণিত কোনো বিধি-বিধানকে অস্বীকার করা হচ্ছে অথবা এসব বিধি-বিধানকে ত্রূটিপূর্ণ আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এসব বিধি-বিধানকে ত্রূটিপূর্ণ আখ্যায়িত করাও একপ্রকার অস্বীকার করা যেহেতু এর মাধ্যমে আল্লাহর বিধানের যৌক্তিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা অস্বীকার করা হয়। প্রমাণিত কোনো বিধানের বিপরীতে নিজের পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কোনো বিধান বর্ণনা করা কুফরী হওয়ার কারণও মুলত এই যে, এর মাধ্যমে প্রমাণিত বিধানটিকে অস্বীকার করা হয়।

অতএব, ঈমান ভাঙ্গের দ্বিতীয় কারণ আল-ইনকার মূলত আল-তাকযীব তথা আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করা ও অগ্রহণযোগ্য সাব্যস্ত করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

উপরের আলোচনাতে ইনকার বলতে কি বোঝায় সে বিষয়ে সুবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। আলোচনার ধারাবাহিকতায় এ বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা দেওয়া হয়েছে। তবে এর সাথে সংশ্লিষ্ট আরো কিছু বিষয় রয়েছে যে সম্পর্কে পৃথকভাবে আলোচনা করা প্রয়োজন। পরবর্তী পোষ্টে সেসব সিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করা হলো।

আল্লাহর কিতাব ও রসুলের হাদীসে কোনো কিছু উল্লেখ আছে বলে দাবী করা অথচ তা উল্লেখ নেই – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মূনীল – কুরআন হাদিসে নেই অথচ আছে বলে দাবী করার বিধান। কুরআন হাদিসে নেই অথচ আছে বলে দাবীর করার বিধান প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *