আদ-দালালাহ্ আলা বিদয়াতে দ্বলালাহ্ – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মনীর

আদ-দালালাহ্ আলা বিদয়াতে দ্বলালাহ্ গ্রন্থটি লিপিবদ্ধ করেছেন শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মুনির এই গ্রন্থের পাঠ গুলো পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে। এই বই হতে যে সমস্ত পাঠ শিখতে পারবেন:

*কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিদয়াতের ভয়াবহতা

*বিদয়াতের প্রচলিত সংগা খন্ডায়ন ও প্রকৃত সংগা নিরুপণ

* যেসব কাজ বিদয়াত হিসেবে প্রচলিত কিন্তু প্রকৃত বিদয়াত নয়

* প্রকৃত বিদয়াতের কিছু উদাহরণ

লেখকের কথা:

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর এবং সর্বোত্তম সলাত ও সালম পেশ করছি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাঃ এর উপর যিনি সত্য দিন ও সীরাতে মুস্তাকীমের দিকে সমগ্র মানবতাকে আহ্বান করার জন্য মহান রব্বুল আলামীরে পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছিলেন। পর কথা হলো, যারা আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করেন এমন প্রতিটি দাঈর উপর অবশ্য কর্তব্য হলো, কুরআন-হাদীসের উপর জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি যুগের চাহিদাকে উপলব্ধী করার চেষ্টা করা। একজন দাঈর ভূমিকা অনেকটা ডাক্তারের মতো। রোগীর সর্ব শরীরে মলম লাগানো ডাক্তারের কাজ নয় বরং তাকে লক্ষ্য করতে হবে প্রকৃত রোগ কোথায় এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। কোন রোগটির গুরুত্ব কতটা এবং কিচিৎসার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে কোনটি সেটিও এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। দুঃখজনক হলো, বর্তমানে যারা দাওয়াতে দ্বীনের সাথে যুক্ত আছেন তাদের একটি বিরাট অংশ এ বিষয়ে সচেতন নয়। এটা অবশ্যই সঠিক যে, রসুলুল্লাহ সাঃ এবং তার নিকটবর্তী সোনালী যুগসমূহ অতিবাহিত হওয়ার পর হতে আজ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ্ বিভিন্ন প্রকার বিভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস ও অসঙ্গত কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে রয়েছে। বিপরীত দিকে এটাও ঠিক যে, রসুলুল্লাহ সাঃ এর ওফাতের পর হতে আজ পর্যন্ত যুগের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন নতুন জিনিসের উদ্ভব ঘটেছে। এই সকল নতুন সৃষ্ট বিষয়ের সবটা যে মন্দ তা নয় বরং তার মধ্যে একটি বিরাট অংশ ইসলামের সাথে সংঘর্ষের পরিবর্তে সদ্ভাব রেখে চলে। এমতবস্থায় অভিজ্ঞ ওলামায়ে কিরাম ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের দায়িত্ব ছিল, নতুন সৃষ্ট মন্দ বিষয়গুলো চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া এবং উত্তম বিষয়গুলোর ব্যাপারে মানুষকে উৎসা দেওয়া বা কমপক্ষে সেগুলোর বিপক্ষে কঠোরতা না করা। বাস্তবে ঘটলো এর বিপরীত। বর্তমান যুগের আলেম-ওলামাদের একটি অংশ “রাসুলের যুগে যা ছিল না তা বিদয়াত” এই স্লোগান দিয়ে নতুন সৃষ্টি প্রতিটি বিষয়কে বর্জন করার নীতি অবলম্বন করলো এবং যারা এসবের কোনোটিতে লিপ্ত হয় তাদের পথভ্রষ্ট বিদয়াতী হিসেবে আখ্যায়িত করে কঠোর ভাষায় সমারোচনা করতে লাগলো। এদের অবস্থা হলো ঐ ডাক্তারের মতো যে রোগীর সার শরীরে মলম লাগায়। আলেম-ওলামাদের আরেকটি অংশ প্রথম দলটির বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হলো। তারা বলল, সব নতুন সৃষ্ট বিষয়ই যদি বিদয়াত হয় তবে, বাস-ট্রাক, ট্রেন ও প্লেন কি বিদয়াত! পবিত্র কুরআনে যের-যবর যোগ করা বা মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা কি বিদয়াত! এই প্রশ্নটি যৌক্তিক কিনা সেটা লম্বা আলোচনার বিষয়, পরবর্তীতে পাঠক সে বিষয়ে জানতে পারবেন কিন্তু এই দলটির মূল সমস্যা হলো তারা প্রথম দলের সমালোচনা ও তাদের মতামত খন্ডায়ন করেই থেমে যায়। বিদয়াতের প্রকৃত সংজ্ঞা কি এবং তার বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ সে ব্যাপারে তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় বিদয়াত বলে আসলে কিছু নেই বা থাকলেও তার তেমন একটা গুরুত্ব নেই। বলা বাহুল্য যে, এই দুটি কর্ম পদ্ধতিই শরীয়তের নির্দেশনার সাথে সমানভাবে বৈপরিত্ব রাখে। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাঃ বিদয়াত সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বনের কঠোর নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বিদয়াতকে পথভ্রষ্টতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আর শাব্দিকভাবে বিদয়াত অর্থ- “যে কোনো নতুন সৃষ্ট বিষয়।” ওলামায়ে কিরাম একমত হয়েছেন যে, বিদয়াতের এই অর্থ উক্ত হাদীসে উদ্দেশ্য নয়। যেহেতু সকল নতুন আবিষ্কারই পথভ্রষ্ট বিদয়াত নয়। একারণে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যাবস্থা, পবিত্র কুরআনে যের-যবর সংযুক্ত করা সহীহ হাদীসের গ্রন্থ প্রনয়ণ করা বা চার মাজহাবের অনুসারী হওয়া বিদয়াত নয়। এ দুটি চিন্তাধারার বাইরে সঠিক কর্মপন্থা হলো, নতুন সৃষ্ট বিষয়াবলীর মধ্যে পথভ্রষ্ট বিদয়াত কোনটি তা চিহ্নিত করা এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া। বর্তমান গ্রন্থে এটিই আমাদের উদ্দেশ্য। একারণে আমরা গ্রন্থটির নামকরণ করেছি, “আদ-দালালাহ্ আলা বিদয়াতে দ্বালালাহ্ অর্থাৎ- পথভ্রষ্ট বিদয়াতের পথনির্দেশ। মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করি, তিনি যেনো গ্রন্থটিকে মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণময় করেন এবং গ্রন্থটি প্রণয়নে যারা সহযোগিতা করেছেন বা উৎসাহ যুগিয়েছেন, সরাসরি বা ফোনে যোগাযোগ করে বারবার তাগাদা দিয়েছেন তাদের সকলের আমলনামায় এটাকে সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করেন। আমীন।

আদ-দালালাহ্ আলা বিদয়াতে দ্বলালাহ্ গ্রন্থের পরবর্তী পর্ব পড়তে আমাদের সাইটে চোখ রাখুন এবং

আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিতে এখানে ক্লিক করুন….

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *