শব্দের অর্থ নির্ণয় সংক্রান্ত – সমস্যা দ্বৈত অর্থবোধক শব্দসমূহ – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর

শব্দের অর্থ নির্ণয় সংক্রান্ত – সমস্যা দ্বৈত অর্থবোধক শব্দসমূহ – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর মাজহাব বনাম আহলে হাদীস গ্রন্থ হতে হুবহু সংকলিত

অন্যান্য ভাষার মতো আরবী ভাষাতেও এমন কিছু শব্দ রয়েছে যা একাধিক অর্থে ব্যাবহৃত হয়। বাংলাতে যেমন তীর শব্দটি একই সাথে নদীর তীর ও ধনুকের তীর অর্থে ব্যাবহৃত হয়। এধরণের শব্দকে উসুলের পরিভাষায় মুশতারাক বলা হয়। যার অর্থ দৈত অর্থবোধক শব্দ। মুশতারাক শব্দ কোরআনের কোনো আয়াতে বা রসুলুল্লাহ সাঃ এর কোনো হাদীসে ব্যাবহৃত হলে শব্দটির কোন অর্থ উদ্দেশ্য সে বিষয়ে দ্বিমত হতে পারে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

তালাক প্রাপ্ত মহিলারা তিন কুরু অপেক্ষা করবে। (সূরা বাকারা-২৮৮)

আয়াতের কুরু শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। প্রথমতঃ হায়েজকে কুরু বলা হয় দ্বিতীয়তঃ দুই হায়েজের মাঝে যে সময়টুকুতে একজন মহিলা সলাত ও সওম পালন করতে পারে সেই পবিত্র সময়কে কুরু বলা হয়। ইমাম আবু হানীফা প্রতম অর্থ গ্রহণ করেছেন আর ইমাম শাফেঈ ও অন্যান্যরা দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করেছেন। দেখা যাচ্ছে কুরু শব্দটির একাধিক অর্থ থাকার কারণে তাদের মধ্যে দ্বিমত হয়েছে।

একইভাবে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

তোমাদের পিতারা যেসকল নারীদের সাথে নিকাহ্ করেছে তোমরা তাদের সাথে নিকাহ্ করো না। (সূরা নিসা-২২)

নিকাহ্ শব্দটি একদিকে যেমন বিবাহ অর্থে ব্যাবহৃত হয় অপরদিকে বিবাহ পরবর্তী বা বিবাহ ছাড়াই কোনো নারীর সাথে মিলিত হওয়াকেও নিকাহ্ বলা হয়। এই আয়াতে দুটি অর্থের কোনটি উদ্দেশ্য করা হয়েছে তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম শাফেঈ মনে করেছেন এখানে প্রথম অর্থটি উদ্দেশ্য তাই পিতা যে মেয়ের সাথে জিনা করে তার সাথে পুত্রের বিবাহ করা তিনি হারাম মনে করেন নি। কিন্তু ইমাম আবু হানীফার মতে এখানে দ্বিতীয় অর্থ উদ্দেশ্য সে কারণে যে কোনো ভাবে কোনো পুরুষ কোনো মেয়ের সাথে সহবাস করলে তার পুত্রের জন্য উক্ত মেয়ের সাথে বিবাহ করা হারাম হবে বলে মত দিয়েছেন।

ওযুর আয়াতে আল্লাহ বলেন,

এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করো। (সুরা মায়েদা-৬)

ওযুর সময় মাথার সম্পূর্ণ অংশ মাসেহ করতে হবে নাকি কিছু অংশ মাসেহ করাই যথেষ্ট হবে সে বিষয়ে আলেমদের মাঝে মতপার্থক্য আছে। মতপার্থক্যের কারণ এই আয়াতে “রুউসাকুম” এর পরিবর্তে “বিরুউসিকুম” বলা হয়েছে। আরবীতে বি (ِب ) শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যাবহৃত হয়। এই আয়াতে দুটি সম্ভবনা রয়েছে। হয়তো এটা মিন ( نѧم ) অর্থ বোঝাবে যে সে ক্ষেত্রে কিছু অংশ মাসেহ করা ফরজ হবে অথবা এটা অতিরিক্ত গুরুত্ব বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হবে সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা ফরজ হবে। ইমাম মালেক দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করেছেন এবং ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আবু হানীফা প্রথম অর্থটি গ্রহণ করেছেন। দেখা যাচ্ছে একটি শব্দের দৈত্ব অর্থের কারণে এই বিষয়ে মতপার্থক্য হয়েছে।

হাদীসে এসেছে রসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, শাফাক অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের ওয়াক্ত বিদ্যামান থাকে। (সহীহ মুসলিম)

শাফাক (شفق ) শব্দটি দুটি অর্থে ব্যাবহৃত হয়। সূর্য ডুবে যাওয়ার পরপরই যে লাল আভা দেখা যায় সেটাকে শাফাক বলে। আবার উক্ত লাল আভা অদৃশ্য হওয়ার পর সে সাদা আলো বিদ্যমান থকে সেটাকেও শাফাক বলে। হাদীসে মাগরিবের সলাতের ওয়াক্ত নির্ধারণ করার সময় কোন শাফাকের কথা বলা হচ্ছে সে বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। ইমাম আবু হানীফর মতে এখানে সাদা শাফাক উদ্দেশ্য অন্যান্য ওলামায়ে কিরামের মতে এখানে লাল শাফাক উদ্দেশ্য। এধরণের আরো অনেক উদাহরণ দেওয়া যায় যা এখানে বিস্তারিত বর্ণনা করা সম্ভব নয়।

সমস্যা দ্বৈত অর্থবোধক শব্দসমূহ

শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মূনীর এর ফেসবুক পেজে ঘুরে আসতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *