ভয়, খুশিতে কুফরী বলা বা অতিরিক্ত ভয় বা খুশির কারণে বেহুশ হয়ে কুফরী কথা উচ্চারণ করা

ভয় খুশিতে কুফরী বলা বা অতিরিক্ত ভয় বা খুশির কারণে বেহুশ হয়ে কুফরী কথা উচ্চারণ করা শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর তাওহীদ আর রহমান গ্রন্থ হতে হুবহু তুলে ধরা হয়েছে

অনেক সময় অত্যাধিক ভয়, ভালবাসা, সুখ-দুঃখ ইত্যাদিতে হতবিহ্বল হয়ে বা সাধারনভাবে ভুলক্রমে মুখে কুফরী কথা উচ্চারিত হয়। যেমন, সে হয়তো বলতে চেয়েছিল, শয়তান জাহান্নামে প্রবেশ করবে কিন্তু হঠাৎ বলে ফেলল, শয়তান জান্নাতে প্রবেশ করবে। এভাবে কুফরী কথা উচ্চারণ করলে তা ধার্তব্য হবে না। যেহেতু এই ব্যক্তি সজ্ঞানে একথা উচ্চারণ করে নি তাই তাকে অজ্ঞতার কারণে ওযর দেওয়া হবে। এ বিষয়ে দলিল হলো, রাসুলুল্লাহ সাঃ এর হাদীস,

আল্লাহ্ আমার উম্মাতকে ভুলে যাওয়া বা ভুলক্রমে ঘটে যাওয়ার ঘটনার কারণে পাকড়াও করবেন না। যে কাজ তারা বাধ্য হয়ে করে সে বিষয়েও তাদের পাকড়াও করা হবে না। (ইবনে হাযার আল-আসক্বলানী এই হাদীসটি সম্পর্কে বলেন, এর রাবীরা বিশ্বস্ত {ফাতহুল বারী}। ইমাম নাব্বী রঃ হাদীসটিকে হাসান বলেছেন{আর-রাওদা} কিন্তু শায়েখ আলবানী এই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন{সহীহু ইবনে মাযা-১৬৬২}[ইবনে মাযা]

অন্য হাদীসে এসেছে, নিঃসন্দেহে কোনো গোনাহগার বান্দা তাওবা করলে আল্লাহ্ ভীষণ খুশি হন। যেমন তোমাদের কেউ যখন নির্জন প্রান্তরে উটে চড়ে ভ্রমণ করে। এমতবস্থায় তার উটটি পালিয়ে যায়। ঐ ব্যক্তি খাদ্য-খাবার সবই উটের সাধে বেঁধে রেখেছিল। সে অনেক তালাস করেও উটটি সন্ধান না পেয়ে নিরাশ হয়ে একটি গাছের নিচে শুয়ে পড়ল। এই সময় হঠাৎ দেখতে পেল উটটি তার সামনে রয়েছে সে উটটির লাগাম ধরে ফেলল। এসময় অতিরিক্ত খুশির কারণে সে বলে উঠল, হে আল্লাহ তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার রব। সে ভীষণ খুশির কারণে ভুল করে ফেলল। (বুখারী ও মুসলিম)

এই ব্যক্তি আসলে বলতে চেয়েছিল, হে আল্লাহ্ আমি তোমার বান্দা আর তুমি আমার রব। কিন্তু অতিরিক্ত খুশির কারণে হুশ হারিয়ে সে উল্টা বলে ফেলেছে। অন্য হাদিসে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,

পূর্বযুগে একজন ব্যক্তি ছিল আল্লাহ্ তাকে সম্পদ দিয়েছিলেন, সে মৃত্যুর সময় তার সন্তানদের উদ্দেশ্যে বলল, আমি পিতা হিসেবে তোমাদের সাথে কেমন আচরণ করেছিল? তারা বলল, আপনি আমাদের সাথে সর্বোত্তম আচরণ করেছেন। সে বলল, শোনো, আমি জীবনে কোনো ভাল আমল করিনি, অতএব, আমি যখন মারা যাবো তোমরা আমার লাশ পুড়িয়ে ফেলবে তার পর হাড়গুলো গুড়ো করে প্রচন্ড ঝড়ের দিন বাতাসে উড়িয়ে দিবে। তারা তাই করেছিল। পরে আল্লাহ তায়ালা তাকে প্রশ্ন করেন, তুমি এমন করেছিলে কেন? সে বলে, আপনার ভয়ে। ফলে আল্লাহ তার উপর দয়া করেন। (সহীহ বুখারী)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, সে বলেছিল, “তোমাদের পিতাকে যদি আল্লাহ ধরতে পারেন তবে ভীষণ শাস্তি দেবেন।” এরপর সে উপরোক্ত পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়। (সহীহ বুখারী) অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে, “যাতে করে আমি আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারি”। (শারহে সুন্নাহ্, মু’জামে কাবীর)

অর্থাৎ উক্ত ব্যক্তি এই পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছিল যাতে আল্লাহ্ তাকে ধরতে না পারেন। সে ভেবেছিল আগুণে পুড়িয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিলে আল্লাহ আর হিসাব গ্রহণ করতে পারবেন না। এটা নিঃসন্দেহে কুফরী আক্বীদা যেহেতু এর মাধ্যমে আল্লাহর অক্ষমতা প্রমাণ করা হয়। কিন্তু এই ব্যক্তিকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। এর অর্থ আল্লাহ্ তাকে কাফির হিসেবে গণ্য করেননি। উক্ত ব্যক্তি এধরণের সুস্পষ্ট কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার পরও কাফির হিসেবে গণ্য হয়নি কেন, সে বিষয়ে ওলামায়ে কিরাম বিভিন্ন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ উল্লেখ করেছেন। ইবনে হাযার আসক্বালানী রঃ বলেন, সম্ভবত এই ব্যাক্তি অতিরিক্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়ার কারণে ভুলক্রমে একথা বলে ফেলেছে, যেমন আরেকজন অতিরিক্ত খুশির কারণে বলেছিল, হে আল্লাহ তুমি আমার বান্দা আমি তোমার রব।

 এরপর তিনি বলেন, এমনও হতে পারে যে, উক্ত ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তাতে বিশ্বাস করতো কিন্তু তার সময় কোনো রসুল ছিল না তাই ঈমানের শর্তসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতো না। তবে বেশি গ্রহণযোগ্য কথা হলো সে একথা বলেছে, অতিরিক্ত ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত ও হতবিহ্বল হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারানোর কারণে। সে সজ্ঞানে একথা বলেনি।

তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে সর্বাধিক অগ্রহণযোগ্য মত হলো তার মত যে বলেছে, হয়তো তাদের শরীয়তে কাফিরের জন্যও ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ ছিল। (ফাতহুল বারী)

ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাঃ বলেন, এই ব্যক্তি পুড়িয়ে ফেলার পর তার শরীরকে আল্লাহ্ আবার সৃষ্টি করতে সক্ষম কিনা সে সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেছে। সে মনে করেছে আল্লাহ্ এটা করতে সক্ষম নন। সমস্ত মুসলিমদের ঐক্যমতে এটা কুফরী। কিন্তু এই ব্যক্তি অজ্ঞ ছিল সে এ বিষয়ে জানতো না। তবে সে আল্লাহকে বিশ্বাস করতো এবং তার শাস্তিকে ভয় করতো। একারনে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। (মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া)

মোট কথা স্পষ্ট কুফরী কথা উচ্চারণ করার পরও অজ্ঞতা বা অজ্ঞানতার কারণে এই ব্যক্তিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ওলামায়ে কিরাম এধরণের অবস্থায় একজন ব্যক্তি ওযর প্রাপ্ত হয় বলে মত দিয়েছেন। যদি কেউ নিজের অজান্তেই অবচেতনভাবে কুফরী কথা উচ্চারণ করে তবে আল্লাহর নিকট উক্ত ব্যক্তি ওযরপ্রাপ্ত বলে গণ্য হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে দুনিয়ার বিধানে তাকে কেবল তখন ওযরপ্রাপ্ত বলে গণ্য করা হবে যখন পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলীর মাধ্যমে বিষয়টি প্রমাণিত হবে। শুধুমাত্র কারো মুখের দাবীর মাধ্যমেই ওযর দেওয়া হবে না। উদাহরণস্বরুপ কোনো একজন নেককার ব্যক্তি কথা প্রসঙ্গে সঠাৎ কুফরী কথা উচ্চারণ করে ফেলল এবং সাথে সাথেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত হলো। এই ব্যক্তির ক্ষেত্রে নিশ্চিত বলা যায় যে, সে কুফরী করেনি। বিপরীত দিকে যদি কোনো ব্যক্তির আমল আখলাক সন্দেহজনক হয় এবং সে প্রায়ই কুফরী কথা-বার্তা বলে এমন প্রমাণ পাওয়া যায় তবে উক্ত ব্যক্তি ভুলক্রমে কুফরী করছে এমন ধরে নিয়ে তাকে ওযরপ্রাপ্ত প্রমাণ করা কখনও সঠিক হতে পারে না। ভুলক্রমে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার বিনিময়ে রক্ত মূল্য আদায় করতে হয় কিন্তু সেক্ষেত্রে কিসাস তথা হত্যার বিনিময়ে হত্যার বিধান প্রযোজ্য হয় না। কিন্তু শর্ত হলো, হত্যা যে, ভুলক্রমে হয়েছে সেটার প্রমাণ থাকতে হবে। কেবলমাত্র হত্যাকারী এটা দাবী করলেই গ্রহণযোগ্য হবে না। তার চেয়েও হাস্যকর হবে যদি পেশাদার খুনির ক্ষেত্রে ভুলক্রমে হত্যা করার বিধান প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হয়। বরং এসব ক্ষেত্রে ভুলক্রমে হয়েছে কিনা সেটা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ধরে নেওয়া হবে বিষয়টি স্বেচ্ছায় সংঘঠিত হয়েছে। এ বিষয়ে এটাই হলো, অলংঘনীয় মূলনীতি।

এই মূলনীতি অগ্রাহ্য করে কিছু সংখ্যক তাসাউফপন্থী হুসাইন ইবনে মানছুর আল-হাল্লাজের মতো সুস্পষ্ট শিরক-কুফরে লিপ্ত ব্যক্তিদের ওযর প্রমাণ করতে চায়। সুফীদের মধ্যে একদল বিভ্রান্ত লোক রয়েছে যারা বিভিন্ন কুফরী আক্বীদা-বিশ্বাস পোষণ করে এবং কুফরী কথা মুখে উচ্চারণ করে থাকে। ওয়াহদাতুল উযুদ তথা সৃষ্টি ও স্রষ্টা আসলে একই জিনিস, ফানা ফিল্লাহ্ তথা আল্লাহর অস্ত্বিত্বের সাথে মিশে যাওয়া ইত্যাদি ভয়াবহ আক্বীদা বিশ্বাস তাসাউফপন্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রশিদ্ধ ও পরিচিত। এই সব আক্বীদার বশবর্তী হয়ে তাদের কেউ কেউ নিজেকে আল্লাহ্ হিসেবে ঘোষণা করেছে। যেমন হুসাইন ইবনে মানছুর আল-হাল্লাজ বলেছিল, আনাল হক বা আমিই আল্লাহ্। আবার কেউ কেউ নিজেকে নবীদের চেয়েও উত্তম বলে দাবী করেছে। যেমন, তাদের কেউ কেউ বলেছে, “আমরা এমন এক সমুদ্রের মাঝে আছি নবীরা যার কিনারায় পৌছেছেন মাত্র” (নাউযু বিল্লহ্)। এধরণের আরো অনেক কুফরী কথা যা মুখে উচ্চারণ করার মতো নয়। সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা এখানে আমাদের উদ্দেশ্য নয়। এখানে আমরা তাদের সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই যারা অজ্ঞতা ও অসচেতনতার অজুহাতে এই সকল বিভ্রান্ত তাসাউফপন্থীদের ওযর প্রমাণের জন্য জান-প্রাণ দিয়ে প্রচেষ্টা করেন।

ঐ সকল লোকদের ওযর প্রমাণ করার জন্য তাসাউফপন্থীরা নানা-রকম যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপণ করে থাকে। তাদের মধ্যকার নির্বোধ প্রকৃতির লোকেরা বলে, “এটা মারেফতের ব্যাপারে, শরীয়ত দিয়ে এর বিচার করা চলে না। আল্লাহর ওলীদের উপর শরীয়ত প্রযোজ্য নয়।” এটা সুস্পষ্ট কুফরী কথা। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর শরীয়ত কোনো একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় এমন আক্বীদা স্পষ্ট কুফরী। পবিত্র কুরআনের আয়াত রাসুলুল্লাহ সাঃ এর হাদীস এবং উম্মতের ইজমার মাধ্যমে এটা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাঃ এর শরীয়ত সকল মানব ও জিনের উপর প্রযোজ্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “বলুন হে মানব সকল আমি তোমাদের সকলের জন্য রাসুল” (আ’রাফ-১৫৮) সহীহ্ উম্মতের যে কেউ আমার সম্পর্কে জানার পরও আমি যে দ্বীন সহ প্রেরিত হয়েছি তা গ্রহণ না করে মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামী হবে। তাছাড়া পবিত্র কুরআনের সুস্পষ্ট আয়াত এবং বিভিন্ন সহীহ্ হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর পর আর কোনো নবী বা রসুল আগমন করবে না এমন বলা হয়েছে। এই সকল সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণের আলোকে উম্মতের ওলামায়ে কিরাম একমত হয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাঃ নবুয়ত পাওয়ার পর হতে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ পৃথিবীতে আসবে তারা সকলে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর শরিয়ত মেনে চলতে বাধ্য। তাদের মধ্যে যে কেউ রাসুলুল্লাহ সাঃ এর শরীয়তের কোনো অংশ অস্বীকার করবে সে কাফির হবে। এমন কি রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যদি মুসা এখন বেঁচে থাকতো তবে আমার আনুগত্য করা ছাড়া তার কোনো উপায় থাকতো না।” (শায়েখ আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন, মিশকাত-১৭৭){মুসনাদে আহমাদ}

সুতরাং যারা স্পষ্ট শিরক-কুফরকে মারেফতের নামে বৈধ করতে চায় তারা নিজেরাই কাফিরে পরিনত হয়। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাঃ এর শরীয়তের কোনো অংশকে অস্বীকার করা কুফরী।

উপরের যুক্তিটি অত্যন্ত নির্বোধ প্রকৃতির লোকেরা উপস্থাপণ করে। তাসাউফপন্থীদের মধ্যে যারা শরীয়তের মূলনীতি সম্পর্কে জ্ঞাত তারা ভিন্নভাবে ঐ সকল পথভ্রষ্ট লোকদের পক্ষ অবলম্বন করে। তারা বলে, নিঃসন্দেহে এসব কথা শিরক-কুফর হিসেবেই গণ্য তবে হাল্লাজ বা ইবনে আরাবীর মতো লোকেরা এটা ঐ অর্থে ব্যবহার করে নি বরং তারা ভিন্ন অর্থে এসব কুফরী কথা ব্যবহার করেছে। উপরে আমরা কুফরীর মূলনীতি রিদা বিল-কুফর তথা কুফরী কথা বা কাজের উপর সন্তোষ প্রকাশ করা সম্পর্কিত আলোচনাতে আমরা বলেছি, যদি কেউ মুখে কুফরী কথা উচ্চারণ করে তবে তার অন্তরের ইচ্ছা যাই হোক তাকে কাফির বলা হবে। এর স্বপক্ষে আমরা বিভিন্ন ওলামায়ে কিরামের বক্তব্যও তুলে ধরেছি। সুতরাং কেউ মুখে কুফরী কতা উচ্চারণের পর অন্তরে কি অর্থ লুকিয়ে রেখেছিল সেটা ধার্তব্যের বিষয় নয়।

কেউ কেউ বলে,  এই সকল কুফরী কথা তারা বেহুশ অবস্থায় উচ্চারণ করেছিল। আল্লাহর প্রেমে!! মত্ত হয়ে হুশ হারিয়ে তারা এসব কথা বলেছে। তাসাউফপন্থীদের মধ্যে যারা আলেম হিসেবে পরিচিত তারা এই যক্তিটি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। যেহেতু বেহুশ অবস্থায় কুফরী করলে তা ধার্তব্য নয় এটা শরীয়তের গ্রহণযোগ্য মূলনীতি যেমনটি আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি। কিন্তু পথভ্রষ্ট ও বিভ্রন্ত সুফীদের ক্ষেত্রে এই যুক্তি ব্যবহার করে ওযর প্রমাণ করা সম্ভব নয়। কারণ,

১। অতিরিক্ত আনন্দ বা বেদনার কারণে মানুষ হুশ হারিয়ে ভুলক্রমে দু’একটি কুফরী কথা উচ্চারণ করে ফেলতে পারে এটা আমরা স্বীকার করি কিন্তু যে ব্যক্তি সারাটা জীবন ধরে কেবল কুফরী কথায় উচ্চারণ করে গেছে তার ক্ষেত্রে এ দাবী কিভাবে যৌক্তিক হতে পারে! ভুলক্রমে হত্যা করলে কিসাস হয় না কিন্তু দুর্ধর্ষ খুনির ক্ষেত্রে কি এটা বলা সঙ্গত যে, হয়তো ভুলক্রমে এতগুলো খুন করেছে? মানছুরে হাল্লাজের জীবনী পাঠ করলে দেখা যাবে সে ভুলক্রমে দু’একবার নয় বরং স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে বারবার কুফরী কথা উচ্চারণ করেছে। ইবনে কাছির, ইবনে হাযার আল-আসক্বলানী, ইমাম আজ-জাহাবী প্রমুখ ওলামায়ে কিরাম তাদের ইতিহাস গ্রন্থে তার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। হুসাইন ইবনে মানছুরে হাল্লাজের জীবনী প্রসঙ্গে পৃথক একটি গ্রন্থে আমরা সেসব কাহিনী সুবিস্তারে বর্ণনা করেছি। তার মধ্যে রয়েছে তার বদ অভ্যাস, কুচরিত্র এবং কুফরী আক্বীদা-বিশ্বাসের বহু উদাহরণ যেগুলোকে একবাক্যে ভুলক্রমে উচ্চারিত কথা হিসেবে মেনে নেওয়া একজন পাগলের পক্ষেও সম্ভব নয়। মুহিউদ্দিন ইবনে আরাবীর ব্যাপারে তো আরো ভয়াবহ। সে ফুতুহাত নামে যে বই লিখেছে তা ঈমান বিধ্বংশী আক্বীদাতে পরিপূর্ণ। একজন মানুষ বেহুশ অবস্থায় একটা গ্রন্থ লিখে ফেলতে পারে না। এরপরও এই সকল লোকদের ব্যাপারে ভুলক্রমে বা বেহুশ অবস্থায় কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার বিষয়টিকে কিভাবে ওজর হিসেবে পেশ করা যায়! বেহুশ হওয়ার ওযর এদের উপর প্রযোজ্য হলে, স্বয়ং ইসলীশ শয়তানও তো নিজেকে ওযর প্রাপ্ত বলে দাবী করতে পারে।

২। যে ব্যক্তি হঠাৎ বেহুশ হওয়ার কারণে বা ভুলক্রমে কুফরী কথা উচ্চারণ করে পরবর্তীতে তাকে সেটা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই সে তওবা করবে। কিন্তু হাল্লাজ, ইবনে আরাবী তাওবা করেছে কি? ইতিহাসের গ্রন্থে তাদের তওবা করার প্রমাণ নেই। বরং তারা মৃত্যু পর্যন্ত নিজেদের কুফরী কথার উপর টিকে থেকেছে। তাদের মধ্যে একজনকে কুফরী কথা উচ্চারণ করার অপরাধে হত্যা করা হয়েছে তবু সে ভুল স্বীকার করে নি। যে নিজেই নিজের ভুল স্বীকার করেনি তাকে ভুলের কারণে ওযর দেওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না।

৩। একজন ব্যক্তি সজ্ঞানে সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় কুফরী কথা মুখে উচ্চারণ করছে বা কাগজে লিপিবদ্ধ করছে এরপরও যদি তাকে বাঁচানোর জন্য জোর করে তাকে বেহুশ প্রমাণ করা হয় তবে এই প্রশ্ন সৃষ্টি হয় যে, হাল্লাজ ও অন্যান্য সুফী-দরবেশ ছাড়া আর কারো ক্ষেত্রে একই যুক্তি কেনো পেশ করা হয় না? সাধারন মুসলিমরা কুফরী কথা বা কাজে লিপ্ত হলে বেহুশ হওয়ার যুক্তি দেখিয়ে তাদের কেনো ছাড় দেওয়া হয় না। সাধারন মানুষের শরীয়ত আর সুফীদের শরীয়ত কি আলাদা? সুতরাং উপরে বর্ণিত ভুলক্রমে বা বেহুশ অবস্থায় কুফরী করার সাথে সম্পর্কিত মূলনীতিটি এই সকল ধর্মদ্রোহীদের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়।

ভয় খুশিতে কুফরী বলা ভয় খুশিতে কুফরী বলা ভয় খুশিতে কুফরী বলা ভয় খুশিতে কুফরী বলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *