পাপকাজে লিপ্তহয়ে দ্বীনকে অবজ্ঞাকরা – ক্ষেত্র বিশেষে পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে দ্বীনকে অবজ্ঞা করা শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনির

পাপকাজে লিপ্তহয়ে দ্বীনকে অবজ্ঞাকরা – ক্ষেত্র বিশেষে পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে দ্বীনকে অবজ্ঞা করা শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনির এর গবেষণা মুলক প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন

পূর্বে আমরা বলেছি, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের সকল ওলামায়ে কিরামের ঐক্যমতে যে কোনো প্রকার পাপে লিপ্ত ব্যক্তিকে কাফির বলা হবে না। যতক্ষণ না সে শিরক-কুফরে লিপ্ত হয়। তবে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া অনেক সময় আল্লাহর দ্বীনকে অবজ্ঞা ও অবমাননা করা কুফরী যেমনটি আমরা পূর্বে বলেছি।

এ বিষয়ের উদাহরণ স্বরুপ পূর্বে উল্লেখিত কাজি ইয়াদ রঃ এর কথাটি পুনরায় উপস্থাপণ করা যায়। তিনি বলেন, যে কেউ নবী-রাসুলদের অবমাননা করে এবং তাদের ছোট করে বা তাদের কষ্ট দেয় অথবা কোনো নবীকে হত্যা করে বা তার সাথে যুদ্ধ করে সে কাফির হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (আশ-শিফা)

এখানে তিনি কোনো নবীকে হত্যা করা বা তার সাথে ‍ যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া কুফরী হওয়ার ব্যাপারে মুসলিম উম্মার ঐক্যমত উল্লেখ করেছেন। হত্যা একটি পাপ কিন্তু কোনো নবীকে হত্যা করা কেবল পাপ নয় বরং আল্লাহর বিধানকে অবমাননা করা হিসেবে গণ্য ফলে তা কুফরী। কোনো নবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার বিধানও এটাই। কেউ কেউ এ বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আরো বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন যেগুলো তারা কুফরী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তবে ঐ সকল বিষয়ে দ্বীনকে অবমাননা করা হচ্ছে কিনা সেটা স্পষ্ট না হওয়ার কারণে বেশিরভাগ আলেমের নিকট তা কুফরী হিসেবে গণ্য নয়।

ইবলীস আদম আঃ কে সাজদা না করার মাধ্যমে আল্লাহর বিধান অমান্য করার কারণে কাফির হলো অথচ আমরা জানি আল্লাহর বিধান অমান্য করলে কেউ কাফির হয় না এর ব্যাখ্যায় হাম্বালী মাজহাবের বিভিন্ন ফিকাহ্ গ্রন্থে বর্ণিত আছে, কেউ কেউ বলেছেন, সে (ইবলিস) আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি নির্দেশকে অস্বীকার করার কারণে কাফির হয়েছে। যেহেতু আল্লাহ্ তার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। (আল-ইনসাফ, আল-ইকনা প্রভৃতি) তবে বেশিরভাগ আলেমের নিকট এই মত গ্রহণযোগ্য নয়। এই মতটি উল্লেখের পর আল-ইকনার লেখক শায়েখ বুরহানুদ্দিন থেকে বর্ণনা করেছেন, তবে বেশিরভাগ আলেম বলেছেন ইবলিস কাফির হয়েছিল কারণ সে অহংকার করেছে এবং একগুয়েমী প্রদর্শন করেছে, সে আল্লাহর বিধানকে ত্রুটিপূর্ণ করেছে ও নিজের মতের উপর দৃড় থেকেছ। সে মনে করেছে এ বিষয়ে ঔদ্ধত্ব প্রদর্শন করে সে ঠিকই করেছে। এর স্বপক্ষে দলিল হিসেবে সে বলেছে “আমি তো আদম অপেক্ষা উত্তম” এর অর্থ হলো সে আদম আঃ কে সাজদা করেনি কারণ এ বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশকে সে যৌক্তিক মনে করে নি। (আল-ইকনা)

এই বিশ্লেষণটি চমৎকার। অর্থাৎ ইবলিস কাফির হয়েছিল আল্লাহর সরাসরি নির্দেশ অমান্য করার কারণে নয় বরং আল্লাহর বিধানকে অযৌক্তিক সাব্যস্ত করার জন্য। এর সর্বাপেক্ষা বড় প্রমান সাজদা না করা সত্ত্বেও আল্লাহ তাকে প্রশ্ন করেন “তুমি কেন সাজদা করো নি?” যখন সে বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম আপনি আমাকে আগুণ থেকে সৃষ্টি করেছেন আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে” এই যুক্তি প্রদর্শন করার পর আল্লাহ তাকে াকফির হিসেবে ঘোষণা দেন এবং জান্নাত থেকে বের করে দেন। সুতরাং কেবল সাজদা না করার কারণেই সে কাফির হয়নি বরং আল্লাহর নির্দেশের বিপরীতে যুক্তি প্রদর্শন করার মাধ্যমে আল্লাহর বিধানকে অযৌক্তিক সাব্যস্ত করার কারণে সে কাফির হয়েছে। এ বিষয়ে আরেকটি প্রমাণ হলো, আল্লাহ্, ইবলিসকে যেভাবে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন একই পন্থায় আদম আঃ কে একটি নির্দিশ্ট গাছের ফল আস্বাদন করতে নিষেধ করেন। আদম আঃ সে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেন কিন্তু এটা কুফরী হয় নি। এতে প্রমাণিত হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ নির্দেশ অমান্য করা হলেই কুফরী হবে এমন নয়।

অন্য আরেকটি মাসয়ালাতে হাম্বালী মাজহাবের কিছু আলেম একই পন্থা অবলম্বন করেছেন। তারা ইসলামী রাষ্ট্রের গন্ডির মধ্যে অবস্থান করে মদ পান করা বা শুকরের মাংস ভক্ষন করা ইসলামের বিধি-বিধানের সাথে তামাশা করা হয় এমন মনে করে এ বিষয়টিকে কুফরী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হাম্বালী মাযহাবের বিভিন্ন ফিকাহ্ গ্রন্থে কি করলে একজন মুসলিম কাফির হয়ে যায় সে প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যদি এমন কোনো কথা বা কাজ করে যাতে আল্লাহ্র দ্বীন নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয় (তবে সে কাফির হবে)। কেউ কেউ বলেছেন যদি কেউ ইসলামী রাষ্ট্রে বসে মদ পান করে বা শুকরের মাংস ভক্ষন করে (সে কাফির হবে) যদিও সে, ওটা হালাল মনে না করে। (আল-ইনসাফ, আল-ফুরু’ ইত্যাদি) বেশিরভাগ ওলামায়ে কিরামের নিকট এবং হাম্বালী মাজহাবের অন্যান্য ওলামায়ে কিরামের নিকট এই মতটি গ্রহণযোগ্য নয়। তারা এধরণের কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে পাপী হিসেবেই আখ্যায়িত করেছেন কাফির নয়। যেহেতু এখানে ইসলামী বিধি-বিধানকে অবজ্ঞা করার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় না।

পাপকাজে লিপ্তহয়ে দ্বীনকে অবজ্ঞাকরা – ক্ষেত্র বিশেষে পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে দ্বীনকে অবজ্ঞা করা শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনির এর গবেষণা মুলক প্রবন্ধটি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *