করব জিয়ারতে গিয়ে নিজের জন্য দোয়া করা বা কবরে শায়িত ব্যক্তির নিকট দোয়া চাওয়ার বিধান- শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মুনীর
কবর জিয়ারত করতে গিয়ে নিজের জন্য দোয়া করা বা কবরে শায়িত ব্যক্তির নিকট দোয়া চাওয়ার বিধান।
কবর জিয়ারতে গিয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করার বৈধতার ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু কোন নেককার ব্যক্তির কবরে হাজির হয়ে নিজের জন্য দোয়া করা বা সেখানে দোয়া করাতে অধিক ফজিলত মনে করা বৈধ কিনা সে বিষয়ে কেউ কেউ দ্বিমত করেছেন। একইভাবে মৃত ব্যক্তির নিকট নিজের জন্য দোয়া চাওয়ার ব্যাপারেও দ্বিমত রয়েছে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) কবরের নিকট নিজের জন্য দোয়া করা বা মৃত ব্যক্তির নিকট নিজের জন্য দোয়া চাওয়া উভয় বিষয়কে বিদয়াত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি বলেন,
এটা জানা কথা যে, যদি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কবরের নিকট নিজের জ্য দোয়াা করা বৈধ হতো তবে সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈনরা এটা করতেন। (মাজমুউল ফাতওয়া)
যদি কেউ বলে হে আল্লাহর রসূল আমার জন্য দোয়া করুন বা আমার জন্য শাফায়ত করুন অথবা অন্য কোনো নবী, মৃত ওলী বা অদৃশ্য ফেরেস্তাদের নিকট দোয়া বা সুপারিশ চায় তবে সেটা অপছন্দ করে তিনি বলেন, এসব কিছু খৃষ্টান ও অন্যান্য মুশরিকদের এবং এই উম্মতের ঐ সকল বিদয়াতীদের কার্যকলাপ যারা তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখে। এটা প্রথম যুগের মুহিাজির ও আনসারদের এবং তাদের অনুসারী পরবর্তী যুগের আইম্মায়ে কিরামের পন্থা নয়। (মাজমুউল ফাতাওয়া)
অন্য এক স্থানে তিনি বলেন,

একারণে পূর্ববর্তী ওলামায়ে কিরাম একমত হয়েছেন যে, নবী-রাসূল বা অন্য অন্য কারো কবরকে চুম্বন বা স্পর্শ করা যাবে না। সেখানে সলাত আদায় করা, নিজে দোয়া করা বা তার ওসীলায় দোয়া করা যাবে না। কেননা এসব কাজ শিরক ও মূর্তিপূজার দিকে নিয়ে যায়। (মাজমুউল ফাতওয়া)
যারা কেবলমাত্র ইমাম ইবনে তাইমিয়া রঃ এবং তার অনুসারী যুগের কিছু আলেম-ওলামা ছাড়া অন্য কারো মতামত উল্লেখ করেন না, উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে হয়তো স্বীকারও করেন না তারা এই সকল উদ্ধৃতির উপর নির্ভর করে এসব বিষয়ে ব্যপক কাড়াকাড়ি করে থাকেন। এদের মধ্যে অতি-উৎসাহী কিছু অধিক কড়াকড়ি করে বলেন, এসব কাজ স্পষ্ট শিরক-কুফর হিসেবে গন্য যা একজন মুসলিমকে কাফিরে পরিনত করে। বলা বাহুল্য যে, ইবনে তাইমিয়া নিজেও এ রায় দেন নি। তার মতামত থেকে বড়জোর বিসয়টি নিসিদ্ধ ও বিদয়াত প্রমানিত হয়, শিরক-কুফর নয়।
ইবনে তাইমিয়া রঃ এবং তার সমমতের কিছু সংখ্যক আলেম-ওলামা ছাড়া অন্যান্য সকল মুহাদ্দিস ও ফুকাহায়ে কিরাম এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তারা রাসূলুল্লাহ্ সাঃ ও অন্যান্য নেককার ব্যক্তির কবরের নিকট নিজের জন্য এবং সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য দোয়া করা উত্তম মনে করেছেন। রাসূলুল্লা সাঃএর কবরে হাজির হয়ে তার নিকট দোয়া বা শাফায়াত চাওয়াাকেও তারা বৈধ মনে করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাঃ নিজে তার সাহাবাদের কবর জিয়ারতের সময় যে দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন তাতে কবরবাসীর জন্য জিয়ারতকারী ও অন্যান্য সমস্ত মুসলিমদের জন্য দোয়া করার আদেম দিয়েছেন।
ইমাম মুসলিম বর্ণা করেন,
রসূলুল্লাহ সাঃ তাদের কবরস্থানে গমণ করে এই কথা বলতে বলেন, “ওহে মুসলিম কবরসাসীরা তোমাদের উপর সালাম, আমরাও একদিন তোমাদের সাথে মিলিত হবো। তোমাদের জন্য এবং আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাচ্ছন্দ্য প্রার্থনা করছি। (সহীহ্ মুসলিম)
এই হাদীস কবর স্থানে গমণ করে কবরবাসীর জন্য দোয়া করা এবং সেই সাথে নিজের জন্য ও সারা বিশ্বের মুসলিমদের দোয়া কার ফযিলত প্রমান করে।
রসূলুল্লাহ সাঃ এর কবর জিয়ারত করার সময় করনীয় সম্পর্কে ইমাম নাব্বী রঃ বলেন,
এরপর সে রসূলুল্লাহ সাঃ এর চেহারার নিকট দাড়াবে এবং তার নিজের ব্যাপারে রসূলুল্লাহ সাঃ কে ওসীলা করে দোয়া করবে। (আল-ইদাহ্)
ইমাম আজ-জাহাবী বিভিন্ন জনের জীবনী প্রসঙ্গে বলেছেন,
তার কবর বরকতের উদ্দেশ্যে জিয়ারত করা হয়। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
তিনি মা’রুফ আল-কারখীর জীবনী প্রসঙ্গে বলেন,
ইব্রাহীম আল হারবী বলেন, মা’রুফের কবর পরীক্ষিত স্থান। তার উদ্দেশ্য হলো সেখানে বিপদগ্রস্থ ব্যক্তির দোয়াা কবুল করা হয় যেহেতু পবিত্র স্থানসমূহতে দোয়া বেশি কবুল হয়ে থাকে। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
ইমাম আব্দুর রহমান আল-জাওজী তার সিফাতুস্ সফওয়া নামক কিতাবে অনুরুপ কথা উল্লেখ করেছেন।
ইবনে হিব্বান রঃ তার ছিকাত নামক গ্রন্থে আলী ইবনে মুসা আর-রিদার কাহিনী প্রসঙ্গে বলেন,
তিনি রসুলুল্লাহ সাঃ এর বংশধরদের নেতৃস্থানীয় ও জ্ঞানী ব্যক্তি।
এরপর বলেন, তার কবর রয়েছে ‘নুকান’ শহরের বাহিরে সানাবাজ নামক স্থানে রশীদের কবরের পাশে । আমি বেশ কয়েকবার তার কবর জিয়ারত করেছি । বাতুসে অবস্থানকালীন আমার কোনো সমস্যা হলে আমি আলী ইবনে মুসা আর-রিদার কবর জিয়াারত করে আল্লাহর নিকট উক্ত সমস্যা নিরসন করার দোয়া করতাম। এতে আমার সমস্যা দূরীভূত হতো। এটা আমি বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করে দেখেছি। আল্লাহ আমাদের তার রসূল এবং তার রসুলের বংশধরদের ভালবাসার উপর টিকে থেকে জীবন অতিবাহিত করার তৌফিক দিন। (আমিন)
কবর জিয়ারত করতে গিয়ে নিজের জন্য দোয়া করা বা কবরে শায়িত ব্যক্তির নিকট দোয়া চাওয়ার বিধান। প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।