উসুলে তাকফীর তাকফীরের নিয়মাবলী – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর

উসুলে তাকফীর তাকফীরের নিয়মাবলী – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর তাওহীদ আর রহমান গন্থ থেকে কোন রকম পরিবর্তন করা ছাড়াই তুলে ধরা হয়েছে। প্রবন্ধটি পড়ুন এবং আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।

পূর্বের অধ্যায়ে আমরা ঈমান ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে সুবিস্তারে আলোচনা করেছি। কোন ধরনের আক্বীদা-বিশ্বাস এবং কথা ও কাজ শিরক-কুফর হিসেবে গণ্য সে বিষয়ে উদাহরণসহ বর্ণনা করেছি। এখানে লক্ষ্যনীয় যে, ঐ সকল কথা বা কাজে লিপ্ত হলেই একজন ব্যক্তিকে কাফির বলা যায় না বরং একজন ব্যক্তিকে কাফির হিসেবে ঘোষণা করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়। এই অধ্যায়ে আমরা সেসব নিয়ম-নীতি সম্পর্কে আলোচনা করবো। এই সব মূলনীতির ভিত্তি হলো একজন মুসলিমকে কাফির বলার পূর্বে সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বন করা।

কোনো মুসলিমকে কাফির বলার ব্যাপারে সতর্ক করে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, যে কেউ কাউকে কুফরী নামে ডাকে অথবা বলে আল্লাহর শত্রু অথচ উক্ত ব্যক্তি তেমনটি নয় তবে এ কথা যে বলল, তার দিকেই ফিরে আসবে। (সহীহ মুসলিম)

পূর্বে আমরা এই হাদীসটির বিস্তারিত ব্যখ্যা বর্ণনা করেছি। সেখানে আমরা বলেছি, আসলে কাফির নয় এমন একজন মুসলিমকে কাফির হিসেবে আখ্যায়িত করার বিষয়টি কয়েক রকম হতে পারে-যদি কোন মুসলিমকে কাফির বলার মাধ্যমে খোদ ইসলামেই নিন্দা-মন্দ করা উদ্দেশ্য হয় তাহলে তা নিঃসন্দেহে কুফরী হিসেবে গণ্য হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কাফির হবে। আর কেবলমাত্র উক্ত ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে এমন বলা হলে তা কুফরী হবে না বটে কিন্তু নিঃসন্দেহে কবীরা গোনাহ্ হবে। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, মুসলিমকে গালি দেওয়া ফিসকী (পাপ কাজ)। (বুখারী ও মুসলিম)

এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, একজন ঈমানদার ব্যক্তিকে কাফির বলে গালি দেওয়া সর্বাপেক্ষা বড় অপবাদ যেহেতু একজন প্রকৃত ঈমানদারের নিকট কুফরীতে লিপ্ত হওয়া আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়ে অধিক ঘৃণিত। তাছাড়া একজন মুসলিমকে কাফির বলার কারণে তাকে হত্যা করা আবশ্যক হয় এবং তার সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া বৈধ হয়। এভাবে একজন মুসলিমের মান-সম্মান, রক্ত-সম্পদ ইত্যাদি যাবতীয় অধিকার বিনষ্ট হয়। একারণে মুসলিম উম্মার ওলামায়ে কিরাম কোনো মুসলিমকে কাফির বলার ব্যাপারে সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বন করেছেন।

কাজি ইয়াদ রঃ বর্ণনা করেন, একজন মুসলিমের এক শিঙ্গা পরিমাণ রক্ত ঝরানোর ব্যাপারে ভুল করার চেয়ে এক হাজার জন কাফিরকে (ভুলক্রমে মুসলিম মনে করে) ছেড়ে দেওয়া উত্তম। (আশ-শিফা)

তাকফিরের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের এই মূলনীতিটিই ওলামায়ে কিরামের নিকট সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিতী মূলনীতি। পূর্বযুগের খারেজীরা এবং বর্তমান যুগের কিছু আবেগপ্রবন যুবক এই মূলনীতিটি অগ্রাহ্য করে থাকে। তারা অন্য একটি মূলনীতির উপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তা হলো, “যে ব্যক্তি কাফিরকে কাফির মনে করে না সে কাফির”। ওলামায়ে কিরাম এই মূলনীতিটিও বর্ণনা করেছেন। আমরা কাজি ইয়াদ রাঃ থেকে বর্ণনা করেছি তিনি বলেন, একই কারণে আমরা কাফির বলবো যারা ইসলামের বিপরীত অন্য ধর্ম ও মতের লোকদের কাফির বলে না বা তাদের ব্যাপারে নিরাবতা অবলম্বন করে বা সন্দেহ প্রকাশ করে বা তাদের মতকে সঠিক বলে। (আশ-শিফা)

এই মূলনীতিটি কেবল তখন প্রযোজ্য হবে যখন কোনো ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করে যা কুফরী হওয়ার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই এবং উক্ত ব্যক্তির কোনো ওযর প্রমাণিত না হয়। সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তিকে কাফির মনে না করার অর্থ হয় শরীয়তের স্পষ্ট বিধানকে অস্বীকার করা। একারণে উক্ত ব্যক্তিকে যে কাফির মনে করে না সেও কাফিরে পরিনত হবে। যেহেতু আল্লাহর দ্বীনের অকাট্যভাবে প্রমাণিত কোনো বিধান অস্বীকার করা কুফরী যেমনটি আমরা ঈমান ভঙ্গের দ্বিতীয় মূলনীতির উপর আলোচনা প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছি। যেমন, ইয়াহুদী-খৃষ্টান, হিন্দু-বৌদ্ধ ইত্যাদি ধর্মের লোকদের কাফির মনে না করা বা কোনো প্রকাশ্য নাস্তিককে কাফির মনে না করা ইত্যাদি। কিন্তু যে কাজ কুফরী হওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত আছে বা সন্দেহ আছে উক্ত কাজে লিপ্ত মুসলিমের ব্যাপারে এই মূলনীতি প্রযোজ্য নয় বরং সেক্ষেত্রে একজন মুসলিমকে কাফির বলার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন সংক্রান্ত মূলনীতি অনুসরণ করতে হবে। এই সতর্কতার দুটি পর্যায় রয়েছে।

১। যে বিষয়ের উপর নির্ভর করে কাউকে তাকফীর করা হচ্ছে তা স্পষ্ট কুফরী হতে হবে। অস্পষ্ট বিষয়ের উপর নির্ভর করে কোনো মুসলিমকে কাফির বলা যাবে না।

২। যদি কোনো মুসলিম স্পষ্ট কুফরীতের লিপ্ত হয় তবে লক্ষ্য করতে হবে সে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে তাতে লিপ্ত হয়েছে নাকি তার কোনো প্রহণযোগ্য ওযর রয়েছে। যদি এ বিষয়ে তার কোনো ওযর থাকে তবে তাকে কাফির বলা যাবে না।

উসুলে তাকফীর তাকফীরের নিয়মাবলী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *