ইসলাম বিরোধী রাষ্ট্রীয় আইন এর বিধান -শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনির
ইসলাম বিরোধী রাষ্ট্রীয় আইন – ইসলাম বিরোধী নিয়ম-নীতিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন ও সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করা
ইসলাম বিরোধী রাষ্ট্রীয় আইন – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনির এর প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।
আমরা পূর্বের পোষ্টে বলেছি, হালাল-হারামের বিধান পরিবর্তন করা কুফরী হওয়ার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই তবে হালাল হারামের মধ্যে পরিবর্তন বলতে কি বোঝায় সে বিষয়ে কিছু ভুল চিন্তাভাবনা রয়েছে। একদল লোক মনে করে রাষ্ট্রীয়ভাবে হারাম কাজের অনুমতি (লাইসেন্স) প্রদান করা হলে তা হারামকে হালাল করা হিসেবে গণ্য হওয়ার কারণে কুফরী হবে। উপরে আমরা এ মত খন্ডায়ন করেছি। বিপরীত দিকে এমন কিছু লোকও রয়েছে যারা মনে করে “আমি অমুক হারাম জিনিসকে হালাল হিসেবে গ্রহণ করছি” এভাবে হারাম ও হালাল শব্দ দুটি উচ্চারণ না করা পর্যন্ত কেউ কোনো হারামকে হালাল হিসেবে গণ্য করেছে বলে মনে করা হবে না। যদিও তার অন্যান্য কথা-বার্তা ও কার্য্কলাপে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, হালাল-হারামের ব্যাপারে তার আক্বীদা-বিশ্বাস পরিবর্তিত হয়েছে। এটিও সঠিক চিন্তাধারা নয়। ইসলাম কোনো একটি নির্দিষ্ট শব্দের উপর বিধান আরোপ করে না বরং উক্ত শব্দ যে অর্থকে ধারন করে সেই অর্থের যে কোনো শব্দের বিধান একই হবে। যদি কেউ স্বীয় স্ত্রীর উদ্দেশ্যে “তালাক” শব্দের পরিবর্তে “তোমাকে বাদ দিলাম” বা “ডিভোর্স দিলাম” ইত্যাদি সমার্থবোধক শব্দ প্রয়োগ করে তবু তালাক সংঘঠিত হবে। একইভাবে যদি কেউ হালাল শব্দের পরিবর্তে “আমি মদ পান করা বৈধ মনে করি” বা “মদ পান করা ভাল” ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে তবু তা হরামকে হালাল করা বলেই গণ্য হবে এবং কুফরী হবে।
আমরা পূর্বে বলেছি যদি কেউ চুরি-জেনা বা অন্য কোনো শাস্তির ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে ভিন্ন কোনো বিধান অনুসরণ করে তবে সে কাফির হবে না বরং পাপী হবে যেহেতু সে আল্লাহর বিধান অমাণ্য করেছে। কিন্তু যদি সে এই সকল বিধানকে সঠিক মনে করে বা কমপক্ষে এগুলোর মাধ্যমে বিচারকার্য্ পরিচালনা করা বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত মনে করে তবে সে কাফির হবে। যেহেতু এর মাধ্যমে সে হারামকে হালাল হিসেবে গণ্য করেছে।
যদি বর্তমান যুগের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অবস্থা আমরা দেখি তবে দেখা যাবে বিশিরভাগ রাষ্ট্রে আল্লাহর বিধানের বিপরীত বিধানকে দেশের আইনে পরিনত করা হয়েছে ও সাংবিধানিকভাবে আইনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
আমরা যদি সংবিধান ও আইন এই দুটি শব্দের অর্থ সম্পর্কে চিন্তা করি তবে দেখবো এগুলো সাধারনত বৈধ, উত্তম ও আবশ্যকভাবে পালনীয় ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। এবং বিশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলোর মাধ্যমে কোনো বিধানের বৈধতা ও ন্যায় সঙ্গতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
সংবিধান বলতে বোঝায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন-কানুন ও নিয়ম-নীতি। দেশের নেতা-নেত্রীদের পক্ষ থেকে প্রায়ই ঘোষণা করা হয়, সংবিধানকে সম্মান করা এবং তার আনুগত্য করা সকলের উপর পবিত্র দায়িত্ব, রাষ্ট্রের সর্বস্তরের নাগরিক সংবিধান মেনে চলতে বাধ্য, সংবিধানের বিরোধিতা করা নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ ইত্যাদি। এমতাবস্থায় যদি পবিত্র কুরআনকে দেশের সংবিধান হিসেবে ঘোষণা করা হয় তবে তো এই সকল কথা যথাস্থানেই প্রযোজ্য হলো। কিন্তু যদি কুরআনের বিপরীত বিধি-বিধানকে দেশের সংবিধানে পরিনত করা হয় আর সেই সংবিধানের জন্য এই ধরণের সুউঁচ্চ সম্মান ও নির্ভেজাল আনুগত্য দাবী করা হয়, ঐ সকল কুরআন বিরোধী আইন মেনে চলা উচিৎ এবং সেগুলোর বিরুদ্ধাচারণ করা অন্যায় এমন আক্বীদা অন্তরে পোষণ করা হয় তবে এটা কুফরী হবে যেহেতু এর মাধ্যমে এই সকল শরীয়তবিরোধী অবৈধ নিয়মনীতিকে বৈধ ও ন্যায় সঙ্গত বলে দাবী করা হয়। যদিও এখানে সরাসরী হালাল হারাম শব্দ উচ্চারণ না করা হয়।
সাধারনভাবে আইন শব্দের অর্থই হলো বৈধতা। বৈধ যে কোনো কিছুকেই বলা হয় আইনসম্মত আর বেআইনী বলতে বোঝায় অবৈধ বিষয়। যখন জাতীয় সংসদে একদল লোক কোনো কিছুকে আইন হিসেবে ঘোষণা দেয় তখন তারা এটাই দাবী করে যে, বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়টি আমাদের নিকট সর্বোত্তম সমাধান ও উৎকৃষ্ট পন্থা হিসেবে মনে হচ্ছে বিধায় আমরা সেটিকে আইন হিসেবে গ্রহণ করছি। এমন কথা তারা কখনই বলবে না যে, যদিও এই বিষয়টি অকার্যকর ও অযৌক্তিক তবু আমরা এটা আপনাদের উপর আইন হিসেবে চাপিয়ে দিলাম। কেননা আইন বলতেই উত্তম ও উৎকৃষ্ট বিষয়কে বোঝায় যার সম্মান করা হবে এবং পরম ভক্তির সাথে তার আনুগত্য করা হবে। একটি বিষয়কে খারাপ ও অনুত্তোম হিসেবে স্বীকার করে নেওয়ার পরও সেটা আইন হিসেবে গ্রহণ করা পাগলামী ছাড়া কিছু নয়। এমন একটি উদাহরণও হয়তো খুজে পাওয়া যাবে না যেখানে একজন আইনপ্রনেতা কোনো একটি বিষয়কে আইন হিসেবে ঘোষণা করছে এবং সেই সাথে বিষয়টির ভ্রান্তি ও অযোগ্যতা স্বীকার করছে। বরং সে তার প্রণীত এই আইনকেই সঠিক ও সর্বোৎকৃষ্ট বলে দ্ব্যার্থহীনভাবে ঘোষণা করবে এটাই স্বাভাবিক। সে ঐ কথায় বলবে যা বলেছিল ফিরআউন তার সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে।
আমি তো তোমাদের ঐ পথই দেখায় যা আমার নিকট উত্তম মনে হয় আর আমি তোমাদের সঠিক পথই দেখায়। (সুরা মুমিন-২৯)
তবে যে ব্যক্তি শরীয়তবিরোধী আইন প্রনয়ন করে এমন হতে পারে যে, তার অন্তরে উক্ত বিধানটির বাতুলতা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত। সে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে, তার প্রণীত আইনটি আসলে ভ্রান্ত এবং আল্লাহ প্রদত্ত আইনই সঠিক ও যথার্থ তবে সে মুখে এ কথার স্বীকৃতি দেবে না বরং অন্তবের বিপরীত বিশ্বাস থাকলেও মুখে নিজের আইনটিকেই সঠিক ও যথাযোগ্য বলে দাবী করবে। যেহেতু উত্তম ও উৎকৃষ্ট দাবী করা ছাড়া কোনো বিষয়কে আইন হিসেবে গ্রহণ করা যায় না।
এখানে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, কোনো হারামকে মুখে বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া কুফরী। যদিও অন্তরে সেটার উপর বিশ্বাস না থাকে। যেমন যদি কেউ অন্তরে মদকে হারাম বলে বিশ্বাস করে কিন্তু কোনো দুনিয়াবী স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মুখে বলে আমি মদকে বৈধ মনে করি তবে সে কাফির হবে। মূর্তির ক্ষমতায় বিশ্বাস করে না এমন একজন ব্যক্তি যদি হিন্দুদের সন্তুষ্ট করার জন্য বলে, “আমি মনে করি মূর্তি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান” তবে সে কাফির হবে যদিও তার বিশ্বাস এমন নয়। এ বিষয়ে ওলামায়ে কিরামের নিকট গ্রহণযোগ্য মুলনীতি হলো, কুফরী কথা মুখে বলাও কুফরী যদিও অন্তরে সেটা বিশ্বাস না করা হয়। এ বিষয়ে ঈমান ভঙ্গের চতুর্থ কারণ, “কুফরীর প্রতি সন্তোষ জ্ঞাপন” সম্পর্কিত আলোচনাতে বিস্তারিত আলোকপাত করা হবে ইনশা-আল্লাহ। সুতরাং যারা অন্তরে আল্লাহর আইনের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখে এবং স্পষ্ট জানে যে, মানব রচিত আইন-কানুন অযোগ্য ও অযথার্থ কিন্তু ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বা অন্য কোনো কারণে মুখে সেগুলো সঠিক বলে ঘোষণা করে তারা কাফির হবে। এখানে মৌখিক স্বীকৃতিই কুফরীর প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট বিবেচিত হবে।
এখানে এটাও স্বরণ রাখতে হবে যে, আইন ও সংবিধান বলতে সাধারনত বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত বিধি-বিধান বোঝালেও ক্ষেত্র বিশেষে এগুলো কেবলমাত্র আদেশ-বির্দেশ বা বাধ্যতামূলক ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর আমরা উপরে বলেছি নিষিদ্ধ বিষয়ে আদেশ প্রদান বা কাউকে নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করা কুফরী নয়। সুতরাং যদি কেউ সংবিধান ও আইন শব্দের মাধ্যমে বৈধতা না বুঝিয়ে সাধারনভাবে আদেশ বা আবশ্যকতা বোঝায় তবে তা কুফরীর পর্যায়ে পড়বে না। যেহেতু এখানে কুফরীর সম্পর্ক হলো বৈধ মনে করা বা না করার সাথে। উদাহরণস্বরুপ যদি একজন ডাকাত সর্দার তার অনুচরদের উদ্দেশ্যে বলে, “এই এলাকার প্রতিটি পুরুষকে হত্যা করতে হবে এবং নারীদের অপহরণ করতে হবে এটাই আমার আইন” তবে তার এই কথা কুফরী হিসেবে গণ্য হবে না কারণ সে এখানে আইন বলতে এই কাজটি উত্তম ও বৈধ এটা বোঝাচ্ছে না বরং আইন বলতে সে আদেশ বোঝাচ্ছে আর হারাম কাজের আদেশ দেওয়া কুফরী নয়।
একইভাবে যদি কোনো রাষ্ট্রপ্রধান ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে ইসলামী আইন অনুসরণ করার আবশ্যকতা এবং ইসলামী আইনের গ্রহণযোগ্যতা দ্ব্যার্থহীনভাবে স্বীকার করে এবং মানবরচিত বিধি-বিধানকে ভ্রান্ত ও বাতিল বলে স্বীকার করে কিন্তু ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার অজুহাতে বা অন্য কোন কৌশলের কথা বলে ঐ সকল বিধি-বিধানকে রাষ্ট্রীয় সংবিধান ও আইনে পরিনত করে তবে তাকে কাফির বলা হবে না। যেহেতু সে ঐ সংবিধান ও আইনকে বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত দাবী করছে না।
এখানে যে বিষয়টি স্পষ্ট স্মরণ রাখতে হবে তা হলো, কেবলমাত্র শরীয়তবিরোধী বিধি-বিধান কাগজ-কলমে লিপিবদ্ধ করার কারণে বা সেসব বিধি বিধানের মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করার কারণে কাউকে কাফির বলা হবে না। বরং শরীয়ত বিরোধী নিয়ম-নীতিকে উত্তম বা কমপক্ষে বৈধ মনে করার কারণে কাফির বলা হবে। মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের যে কোনো মূল্যে কাফির হিসেবে আখ্যায়িত করার ব্যাপারে যারা বদ্ধপরিকর তারা এ রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেন না। তাদের কথা হলো, এখানে কুফরীর বিষয়টি উত্তম বা বৈধ মনে করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং ইসলাম বিরোধী আইন-কানুন গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করা, সেটা ধারায়-উপধারায় বিভক্ত করা ইত্যাদি কাজ স্পষ্ট কুফরী। তাদের কেউ কেউ একটু অগ্রসর হয়ে বলেন, এ ব্যাপারে ইজমা সম্পাদিত হয়েছে। তারা নিষিদ্ধ আইন-কানুনকে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করা এবং সেটাকে ধারা-উপধারায় বিভক্ত করার বিষয়টিকে কুফরীর একটি স্বতন্ত্র মুলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কিন্তু এই মূলনীতিটি কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো নিষিদ্ধ বিষয় খাতা-কলমে সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখে রাখলেই সেটা কুফরী হয়ে যায় না। বর্তমানে এমন বহু যুবক-যুবতী আছে যারা সারাদিন প্রেম-প্রীতি সহ নানাবিধ অপকর্ম করে এবং ঘরে ফিরে সেটা ডায়রীতে ডেট-টু-ডেট সুবিন্যস্তভাবে লিখে রাখে। অনেক কবি আছে যারা প্রেমিকার সাথে বিভিন্ন নিষিদ্ধ কর্ম কবিতার ছন্দে প্রকাশ করে। বিশেষ করে আরব দেশে এমন বেশ কিছু কবি ছিল যারা কেবল প্রেম কবিতার জন্য খ্যাত। যেমন, লাইলার প্রেমিক মজনু, বুছাইনার প্রেমিক জামিল প্রমুখ। তাদের কবিতার কিছু কিছু অংশে প্রেমিকার সাথে জেনা করা বা তাকে চুম্বন করা ইত্যাদি বিষয়ের বর্ণনা এসেছে। এই সকল বিষয়কে কেউ কখনও কুফরী বলেছে বলে শোনা যায় নি। তবে কোনো অপরাধকে লিখিত বা মৌখিকভাবে মানুষের সামনে প্রচার করা আরেকটি অপরাধ। রাসুলুল্লাহ সাঃ এমন ব্যক্তিকে বে-হায়া বলে আখ্যায়িত করেছেন। (সহীহ বুখারী) কিন্তু এ কারণে কাউকে কাফির বলা হবে না। একইভাবে আল্লাহর বিপরীত মানব-রচিত আইন-কানুন স্পষ্ট পাপাচার হিসেবে গণ্য। যারা মৌখিকভাবে এধরণের আইন কানুন চালু করে তারা যেমন অপরাধী যারা লিখিতভাবে চালু করে তারাও অপরাধী। তবে এমন হতে পারে যে, তাদের একজন অন্যজন অপেক্ষা বেশি অপরাধী কিন্তু যেটা নিষিদ্ধ ছিল সেটা লিপিবদ্ধ করার কারণে কুফরীতে পরিনত হবে তা কখনই বলা যায় না। যতক্ষণ না তারা আল্লাহর আইনকে অযোগ্য সাব্যস্ত করে বা আল্লাহ-বিরোধী আইনকে উত্তম বা কমপক্ষে বৈধ মনে করে।
অতএব, যারা ইসলাম বিরোধী আইন-কানুনকে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করা বা সেগুলোকে ধারা-উপধারায় সুবিন্যস্তভাবে সজ্জিত করা কুফরীর একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করতে চান তাদের মতামত পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।
এমন কিছু লোকও রয়েছে যারা বলেন, এটা স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি মূলনীতি নয় তবে ইসলাম বিরোধী আইন-কানুনকে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করা এবং সেগুলোকে ধারা-উপধারায় সুসজ্জিত করার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ ঐ সকল বিধি-বিধানকে বৈধ আইন মনে করে। এই মতামতটি পুরোপুরি অসঙ্গত নয়। কেননা যে ব্যক্তি কোনো নিষিদ্ধ কর্মকে লেখা বা কথার মাধ্যমে গর্বভরে প্রকাশ করে এমন সম্ভবনা রয়েছে যে সে উক্ত বিষয়টিকে বৈধ মনে করে। কিন্তু যেহেতু এ সম্ভাবনা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয় এবং কেবলমাত্র সম্ভাবনার উপর নির্ভর করে কোনো মুসলিমকে কাফির বলা সঙ্গত নয় তাই উক্ত ব্যক্তিকে কাফির বলা যাবে না।
এ আলোচনার সারমর্ম হলো, যে কেউ মানবরচিত আইন চালু করে বা সেগুলোকে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করে তাদের ঢালাওভাবে কাফির বলা সঠিক পন্থা নয় যতক্ষণ না ঐ সকল আইন-কানুনের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করা হয়। তাদের মধ্যে যে কেউ ঐ সকল বিধি-বিধানকে উত্তম বা কমপক্ষে বৈধ মনে করে তারা কাফির হবে। এক্ষেত্রে বৈধ-অবৈধ বা হারাম-হালাল শব্দ প্রয়োগ করা শর্ত নয় বরং যে ভাষা বা ভঙ্গির মাধ্যমেই বৈধ মনে করার বিষয়টি নিশ্চিতভাবে প্রকাশ পাবে সেটাই কুফরীর প্রমাণ হিসেবে ধরা হবে।
তবে যাদের চিন্তা-ধারা বিশ্লেষণ করে দেখা যাবে তারা মানব-রচিত বিধি-বিধান চালু করলেও সেটাকে বৈধ বা উত্তম মনে করে না এবং স্পষ্টভাবে এ ধরণের স্বীকৃতিও দেয় না তাদের কাফির বলা হবে না। যাদের ব্যাপারে সন্দেহ হয় যে, তারা হয়তো এই সকল বিধি-বিধানকে বৈধ মনে করে কিন্তু এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না হয় তারাও কাফির বলে গণ্য হবে না। যেহেতু সন্দেহের উপর নির্ভর করে কাউকে কাফির বলা সঙ্গত নয়। তবে গ্রহণযোগ্য বাধ্যবাধকতা না থাকলে এমন কাজে লিপ্ত ব্যক্তি পাপী বা গোনাহগার হবে তাতে সন্দেহ নেই।
যেসব বিচারক ইসলাম বিরোধী আইন দ্বারা বিচার ফয়সালা করে এবং যারা তাদের নিকট বিচার প্রার্থনা করে তাদের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। যদি তারা ইসলামী আইন-কানুন সম্পর্কে জানার পরও ইসলাম বিরোধী আইন-কানুনকেই সঠিক মনে করে তবে তাদের কাফির বলা হবে আর যদি তারা ইসলামী আইনকেই সঠিক মনে করে আর ইসলাম বিরোধী আইন-কানুনকে ভ্রান্ত মনে করে কিন্তু দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিলের জন্য বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এসব বিধি-বিধানের নিকট বিচার প্রার্থী হয় তবে তা পাপের কাজ হবে কিন্তু কখনই কুফরী হিসেবে গণ্য হবে না। দুস্কৃতিকারীর পাল্লায় পড়লে ক্ষেত্র বিশেষে বাধ্য হয়ে মানব রচিত আইনের নিকট বিচার প্রার্থী হওয়া বৈধও হতে পারে যেহেতু বাধ্য হলে যে কোনো নিষিদ্ধ কর্মই বৈধ হিসেবে গণ্য হয়। এ বিষয়ে আমরা এ গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই না যেহেতু এটা তাওহীদ ও শিরক-কুফরের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় নয় বরং হালাল-হারামের সাথে সংশ্লিষ্ট।
ইসলাম বিরোধী রাষ্ট্রীয় আইন শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনির এর প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না। একই সাথে ইসলাম বিরোধী রাষ্ট্রীয় আইন প্রবন্ধটি সম্পর্কে আপনার মতামত কমেন্টে জানান।