ইজমা অকাট্য দলিল – ইজমাকে অকাট্য দলীল হিসাবে মেনে নেওয়া – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর

ইজমা অকাট্য দলিল – ইজমাকে অকাট্য দলীল হিসাবে মেনে নেওয়া – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর মাজহাব বনাম আহলে হাদীস গ্রন্থ হতে সংকলিত

ইজমা (الإجماع ) অর্থ ঐক্যমত। সাহাবায়ে কিরাম ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীন শরীয়তের যেসব ব্যাপারে একমত হয়েছেন তাকে ইজমা বলা হয়। পূর্ববর্তী ওলামায়ে কিরামের অনুসরণের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো তাদের ঐক্যমত বা ইজমাকে অকাট্য দলীল মনে করা। রসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, আল্লাহ আমার উম্মাতকে ভ্রান্তির উপর একত্রিত করবেন না। (তিরমিযী/আলবানী সহীহ বলেছেন)

ইমাম সুয়ূতী বর্ণনা করেন, একজন বৃদ্ধ ইমাম শাফেঈ রঃ এর নিকট এসে বললো, শরীয়তের দলীল কি কি?

ইমাম শাফেঈ বললেন, আল্লাহর কিতাব, রসুলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাত, উম্মাতের ঐক্যমত…. এতদূর বলতেই উক্ত ব্যক্তি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, আপনি যে বললেন উম্মাতের ঐক্যমত এটা কিভাবে বললেন, আল্লাহর কিতাবে এর কোনো প্রমান আছে?

ইমাম শাফেঈ কিছুক্ষণ নিরব থাকলে উক্ত বৃদ্ধ আবার বললো, আমি আপনাকে তিন দিন তিন রাত সময় দিচ্ছি এর মধ্যে আপনাকে ইজমার স্বপক্ষে কোরআন থেকে দলীল পেশ করতে হবে যদি না পারেন তবে তওবা করবেন।

একথা শুনে ইমাম শাফেঈর মুখের রং পরিবর্তিত হয়ে গেলো। তিন দিন পর যখন উক্ত বৃদ্ধ উত্তরের জন্য তার নিকট আসলো তিনি আল্লাহর কিতাবের এই আয়াত তেলাওয়াত করলেন,

যে কেউ সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর রসুলের বিরুদ্ধাচারণ করে এবং মুমীনদের পথ ভিন্ন অন্য পথ অনুসরণ করে সে যে পথে চলে আমি তাকে সেদিকেই ফিরিয়ে দেবো এবং তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করবো যা অতি নিকৃষ্ট স্থান। (সূরা নিসা-১১৫)

এরপর ইমাম শাফেঈ বললেন, যদি মুমিনদের অনুসরণ করা ফরজ না হতো তাদের বিরুদ্ধচারণ করার কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হতো না।

একথা শুনে উক্ত বৃদ্ধ বলে আপনি সত্য বলেছেন। বর্তমানে এমন বহু লোক আছে যারা ইজমাকে অকাট্য দলীল হিসাবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের এই অস্বীকৃতির ফলাফল কতটা ভয়াবহ সে সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ অজ্ঞ। ইজমাকে অস্বীকার করলে শরীয়তের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি হয়। আমাদের হাতে এখন যে কোরআন রয়েছে এটিই যে আল্লাহর পক্ষ হতে নাযিল হওয়া কোরআন এটা আমরা ইজমার মাধ্যমেই জানতে পারি। ইজমাকে অস্বীকার করলে একজন ব্যক্তির অন্তরে এ বিষয়ে বিভিন্ন সন্দেহ ও সংশয় দানা বেধে উঠতে পারে। একইভাবে বুখারী ও মুসলিমের হাদীস সমূহ সহীহ হওয়ার ব্যাপারে উম্মাতের ইজমা সম্পাদিত হয়েছে।

ইমাম নাব্বী রঃ সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম সম্পর্কে বলেন, এই দুটি কিতাব সহীহ হওয়ার এবং এতে যেসব হাদীস আছে তার উপর আমল করা আবশ্যক হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের আলেমরা ইজমা করেছেন। (তাহযীব আল আসমা)

ইজমাকে অস্বীকার করলে একজন ব্যক্তি গভীর সমুদ্রের তলদেশে নিক্ষিপ্ত হবে যেখান থেকে পরিত্রান পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। একজন গবেষক যদি ইজমাকে উপেক্ষা করে গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন তবে তার আকীদা বিশ্বাস এতটাই বিকৃত ও বিভ্রান্ত হবে যে বহুকাল যাবত তার অবস্থা থেকে সঠিক পথে কেবল সেই ব্যাক্তিই চলতে পারবে যে ইজমাকে অকাট্য দলীল মনে করবে এবং যেসব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ইজমার বিরুদ্ধে যায় তা পরিত্যাগ করবে। যদি কোরআনের কোনো আয়াত বা আল্লাহর রসুলের কোনো হাদীস থেকে আমাদের এমন কিছু বুঝে আসে যা সাহাবায়ে কিরাম বা তাদের নিকটবর্তীযুগের ওলামায়ে কিরামের ইজমার বিপরীত তবে আমাদের বুঝতে হবে উক্ত আয়াতটির ভিন্ন কোনো ব্যাখ্যা রয়েছে যা আমরা জানি না কিন্তু তারা জানতেন (যেমনটি উমর ইবনে আব্দুল আজীজ বলেছেন)। অথবা আমাদের ধরে নিতে হবে উক্ত আয়াত বা হাদীসটি মানসুখ হয়ে গেছে এবং যে দলীলের মাধ্যমে মানসুখ হয়েছে তা আমাদের নিকট পৌছায়নি। ইমাম নাব্বী বলেন, কখনও কখনও ইজমার মাধ্যমে শরীয়তের কোনো বিধান মানসুখ হওয়ার ব্যাপারটি জানা যায়। যেমন মদপায়ীকে চতুর্থবারে হত্যা করার বিধানটি (আবু দাউদ বর্ণিত) মানসুখ হয়ে গেছে। ইজমার মাধ্যমে এটার মানসুখ হওয়ার বিষয়টি জানা গেছে। ইজমা শরীয়তের কোনো বিধানকে মানসুখ করে না তবে ইজমার মাধ্যমে বোঝা যায় যে বিধানটি মানসুখ করার মতো কোনো দলীল নিশ্চয় আছে। (শারহে মুসলিম)
বাদরুদ্দীন আল আয়নী বলেন, (তাওয়াফ সংক্রান্ত আবু দাউদ বর্ণিত একটি হাদীসের ব্যাপারে) ইবনে জারীর তাবারী বলেন এই হাদীসটির উপর কেউ আমল করেছেন বলে আমি জানি না। যদি এমনটাই হয়ে থাকে তবে হাদীসটি মানসুখ। ইজমা যদিও কোনো কিছু মানসুখ করে না কিন্তু ইজমার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে উক্ত বিধানটি অন্য কোনো বিধান দ্বারা মানসুখ হয়ে গেছে। যদিও সে বিধানটি আমাদের না পৌছায়। (উমদাতুল কারী) সুতরাং সাহাবায়ে কিরাম ও সালফে সালেহীনদের যুগে যেসব ব্যাপারে ইজমা হয়ে গেছে বর্তমানে কোনোভাবেই তা বাতিল করা যাবে না। যদি কোনো আয়াত বা হাদীস হতে ইজমার বিপরীত অর্থ বঝে আসে তবে ধরে নিতে হবে আমরা সেটা সঠিকভাবে বুঝতে পারছি না বা ওটি মানসুখ কিন্তু কোনো ক্রমেই সালফে সালেহীনদের ঐক্যমত হতে সরে এসে নিজের বুঝ অনুযায়ী আমল করা যাবে না।

ইজমা অকাট্য দলিল ইজমা অকাট্য দলিল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *