বিরল মত বর্জন করা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর

বিরল মত বর্জন করা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর – এর মাজহাব বনাম আহলে হাদীস হতে হুবহু সংকলন করা হয়েছে – এছাড়া শায়েখের অন্যান্য গ্রন্থ ও পবন্ধ পড়ুন আমাদের সাইটে

এমন অনেক বিষয় রয়েছে যে ব্যাপারে ইজমা বা ঐক্যমত সম্পাদিত হয়নি কিন্তু সে বিষয়ে বিপরীত মতের আলেমদের সংখ্যা খুবই কম। এই সব মতামতকে বলা হয় শায  (شاذ )  বা বিরল মত। পূর্ববর্তী ওলামায়ে কিরামের নীতি ছিল সর্বদা বিরল মত পরিত্যাগ করে চলা। কোনো মত শুধু শায বা বিরল হওয়ার কারণেই তারা এটির নিন্দা করতেন এবং তা হতে মানুষকে সতর্ক করতেন।

পুরুষদের জন্য কোন মেয়েকে বিবাহ করা হারাম এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, এবং তোমাদের স্ত্রীদের ঐ সকল মেয়েরা যারা তোমাদের কোলে লালিত পালিত হয়। (সূরা নিসা-২৩)

এখানে স্ত্রীর অন্য পক্ষের যে মেয়ে পরবর্তী স্বামীর গৃহে পালিত হয় তাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। যার স্পষ্ট অর্থ পরবর্তী স্বামীর গৃহে পালিত নয় এমন মেয়ে বিবাহ করা বৈধ। সাহাবায়ে কিরামের যুগ হতে এ বিষয়ে মতপার্থক্য চলে আসছে। কেউ কেউ আয়াতটির প্রকাশ্য অর্থ অনুযায়ী স্বামীর গৃহে পালিত নয় এমন কন্যাকে বিবাহ করা বৈধ মনে করেছেন। আলী রাঃ এই মত গ্রহণ করেছিলেন বলে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে। পরবর্তী আলেমদের মধ্যে দাউদ আজ-জাহিরী, ইবনে হিযাম ইত্যাদি আলেমরা এই মত গ্রহণ করেছেন। কিন্তু বিপুল সংখ্যাক আলেম এই মতটি গ্রহণ করেন নি। ইবনে হাযার আল-আসকালানী এই মতটির উপর বিস্তারিত আলোচনা করার পর বলেন,

যদি এ বিষয়ে পরবর্তীতে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত না হতো এবং এবিষয়ে দ্বিমত পোষণকারীদের সংখ্যা বিরল না হতো তবে (কোলে পালিত নয় এমন কন্যা হারাম না হওয়ার মতটি) গ্রহণ করাই বেশি সঠিক হতো। (ফাতহুল বারী)

দেখা যাচ্ছে দলীল প্রমাণের দিক হতে একটি মত শক্ত মনে হওয়ার পরও কেবল বিরল মত হওয়ার কারণে সেটি পরিত্যাগ করা হচ্ছে।

ইশার সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে রসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, এশার ওয়াক্ত অর্ধরাত পর্যন্ত।

শাফেঈ মাযহাবের আলেম আল-ইস্তিখারী ও অন্যান্য কিছু আলেম এই হাদীসের উপর নির্ভর করে বলেছেন অর্ধরাতের পর এশার ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়। যদি কোনো অমুসলিম অর্ধরাতের পর মুসলিম হয় বা হায়েজগ্রস্ত মহিলা পবিত্র হয় তবে এই মতে তাকে সলাত আদায় করতে হবে না। কিন্তু এই মতটি বিরল। জমহুর আলেমের মতে এশার ওয়াক্ত ফজরের সময় শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত বিদ্যামান থাকে তবে অর্ধরাতের আগেই তা পড়ে নেওয়া উচিৎ। এই মতে একজন ব্যক্তি অর্ধরাতের পর মুসলিম হলে বা কোনো হায়েজগ্রস্ত মহিলা পবিত্র হলে সে এশার সালাত আদায় করবে। ইবনে হাযার আল আসকালানী বলেন, এশার সলাতের ওয়াক্ত ফজরের আগ পর্যন্ত বিদ্যামান থাকার ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট সহীহ হাদীস আমি পায় নি। (ফাতহুল বারি)

এখন আমাদের করনীয় কি হবে? এর উত্তর হলো আমাদের বিরল মত পরিত্যাগ করতে হবে এবং জমহুর ওলামায়ে কিরামের মতকে গ্রহণ করতে হবে।

একইভাবে মিরাছের সম্পত্তি বন্টনের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি মারা যায় আর তার কোনো সন্তান না থাকে এবং তার একটি বোন থাকে তবে সেই বোন পাবে তার সম্পত্তির অর্ধেক। (সুরা নিসা-১৭৬) আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যার সন্তান নেই তার ভাই-বোন তার ওয়ারিছ হবে কিন্তু সামান্য কিছু মতপার্থক্য ছাড়া সকল ওলামায়ে কিরাম একমত যে ভাই-বোনদের ওয়ারিছ হওয়ার জন্য সন্তান ও পিতা উভয়ই বিদ্যামান না থাকা শর্ত। এ ক্ষেত্রেও আমাদের জমহুর ওলামায়ে কিরামের মতামতকে অনুসরণ করতে হবে। এরকম আরো বহু উদাহরণ দেওয়া যায় কিন্তু বুদ্ধিমানের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট মনে করি।

বিরল মত বর্জন করা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *