আনদাদ শব্দের অর্থ – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর
আনদাদ শব্দের অর্থ – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর তাওহীদ আর রহমনা নামক গ্রহন্থ থেকে নেয়া হয়েছেে আনদাদ শব্দের অর্থ প্রবন্ধটি পড়ুন এবং আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।
আরবী আনদাদ শব্দটি নিদ শব্দের বহুবচন যার অর্থ সমকক্ষ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, মানুষের মধ্যে একদল লোক রয়েছে যারা আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করে। যেভাবে আল্লাহকে ভালবাসা উচিৎ তারা তাদের সেভাবেই ভালবাসে। কিন্তু মুমিন তারা আল্লাহকে অধিক ভালবাসে। (সুরা বাকারাহ-১৬৫)
অন্য আয়াতে এসেছে, (তোমরা আল্লাহর সাথে সমকক্ষ স্থির করো না। (সুরা বাকারা-২২)
এছাড়া আরো কিছু আয়াতে আল্লাহর বিপরীতে কোনো সমকক্ষ স্থির অর্থে আনদাদ শব্দটি ব্যাবহার করা হয়েছে। আনদান শব্দটির অর্থ সম্পর্কে তাফসীরে বিভিন্ন বক্তব্য এসেছে। যথা, ১। আল্লাহ ছাড়া যা কিছুর ইবাদত করা হয়।
জালালাইনে এসেছে, “আল্লাহর ইবাদতে যাদের শরীক করা হয়” ইমাম তাবারী রঃ বলেন, তাফসীরকারকদের কেউ কেউ বলেছেন আনদাদ হলো ঐ সকল উপাস্যসমূহ আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করা হতো। (তাফসীরে তাবারী)
এরপর তিনি এর স্বপক্ষে কাতাদা, মুজাহিদ, ইবনে যায়েদ প্রমুখ ব্যাখ্যাকরদের মত বর্ণনা করেন। এই অর্থে বিভিন্ন তাফসীরগ্রন্থে আনদাদ অর্থ করা হয়েছে মূর্তি। যেহেতু মূর্তির ইবাদত করা হয়। (বাইদাবী ও জালালাইন)
ইমাম কুরতুবী রঃ বলেন, আয়াতে আনদাদ অর্থ হলো, ঐ সকল মূর্তি ও প্রতিমা যাদের তারা ইবাদত করতো। (তাফসীরে কুরতুবী)
২। আল্লাহর বিপরীতে যাদের আনুগত্য করা হয়।
আনদাদ শব্দটির অর্থ সম্পর্কে আরেকদল মুফাসসির বলেছেন, যেসব নেতা-নেত্রীদের নির্দেশে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা হয় তারাই আসলে আনদাদ। ইবনে জারীর তাবারী আস-সুদ্দী থেকে উল্লেখ করেন, আনদাদ হচ্ছে ঐ সকল লোক আল্লাহকে যেভাবে আনুগত্য করা হয় তাদের ঐভাবে আনুগত্য করা হয়। তারা কোনো বিষয়ে আদেশ দান করলে তার আনুগত্য করা হয় এবং আল্লাহর আদেশ অমান্য করা হয়।
ইমাম কুরতুবী রঃ বলেন, ইবনে আব্বাস এবং আস-সুদ্দী বলেছেন, আনদাদ বলতে বোঝায় ঐ সকল নেতা-নেত্রীবর্গ আল্লাহর আদেশের বিপরীতে যাদের আনুগত্য করা হয়। (তাফসীরে কুরতুবী)
৩। কেউ কেউ বলেছেন, যা কিছু আল্লাহর দ্বীন হতে ফিরিয়ে নিয়ে যায় তাই আনদাদ।
ইমাম বাইদাবী বলেন, সম্ভবত আনদাদ শদ্বের সঠিক অর্থ এমন যে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু যা মানুষকে আল্লাহর স্বরণ বা আনুগত্য থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। (তাফসীরে বাইদাবী)
‘আনদাদ’ শব্দের অর্থ সম্পর্কে মুফাসসিরীনে কিরামের মতামত এটাই। এখন তাওহীদের আলোচনার সাথে আনদাদ শব্দটির সম্পর্কের ব্যাপারে কথা হলো, যদি আনদাদ অর্থ হয় বাতিল উপাস্য সমূহ আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করা হয় তবে এ বিষয়ে পূর্বে ইবাদতের যে ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে তা প্রযোজ্য হবে। এবং এ অর্থে কাউকে আনদাদ হিসেবে গ্রহণ করলে তা কুফরী হবে।
আর যদি আনদাদ অর্থ হয় নেতা-নেত্রীবর্গকে আল্লাহর আদেশের বিপরীতে আনুগত্য করা তবে কারো আনুগত্য কখন কুফরী হয় সে বিষয়ে যে আলোচনা পূর্বে গত হয়েছে তার উপর নির্ভর করতে হবে। এখানে সংক্ষেপে কথা হলো, কারো নির্দেশে কোনো একটি হারাম কাজে লিপ্ত হলেই কেউ কাফির হয়ে যায় না যতক্ষণ না সে উক্ত হারাম কাজটিকে হালাল মনে করে। সুতরাং কারো আনুগত্যের মাধ্যমে আনদাদ হিসেবে গ্রহণ করবে তা শিরক-কুফরী হবে কিনা সেটা উপরোক্ত বিশ্লেষণের আলোকে নির্ধারন করতে হবে। ঢালাওভাবে কারো আনুগত্য করলেই তাকে কাফির হিসেবে আখ্যায়িত করা যাবে না। আল্লাহর আনুগত্য বা স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় এমন ব্যক্তি বা বস্তুকে আনদাদ হিসেবে আখ্যায়িত করে বা কোনো স্পষ্ট কুফরীতে লিপ্ত হয়। উদাহরণস্বরুপ যদি স্ত্রী-সন্তানের সুখের কারণে কেউ চুরি-ডাকাতি, সুদ-ঘুষ ইত্যাদি অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয় তবে তাকে কাফির বলা যাবে না যতক্ষণ না সে আল্লাহর দ্বীন পরিত্যাগ করে বা কোনো স্পষ্ট কুফরীতে লিপ্ত হয়। উদাহরণস্বরুপ যদি স্ত্রী-সন্তানদের সুখের কারণে কেউ চুরি-ডাকাতি, সুদ-ঘুষ ইত্যাদি অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয় তবে তাকে কাফির বলা যাবে না। কিন্তু কারো স্ত্রী যদি খৃষ্টান হয়ে যায় এবং উক্ত স্ত্রীকে পাওয়ার জন্য স্বামীও খৃষ্টান হয়ে যায় তবে উক্ত ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীকে আনদাদ হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে গণ্য হবে এবং কাফির হবে। মোট কথা ‘আনদাদ’ শব্দটির মাধ্যমে শিরক-কুফরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে উপরোক্ত মূলনীতিসমূহের আলোকে তা করতে হবে। ‘আনদাদ’ শব্দটির যতগুলো অর্থ আছে তার সবগুলোর উপর ঢালাওভাবে শিরক-কুফরীর ফতোয়া আরোপ করা যাবে না।