স্বয়ং কবরওয়ালার নিকট প্রার্থনা করা স্পষ্ট শিরক- শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মূনীর
শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মূনীর এর স্বয়ং কবরওয়ালার নিকট প্রার্থনা করা স্পষ্ট শিরক প্রন্ধটি পড়া শেষ হলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।
(পূর্বের পর্ব) পূর্বে আমরা মৃতের নিকট নিজের জন্য দোয়া চাওয়ার বিধান সম্পর্কে এটা প্রমাণ করেছি যে, এটা বৈধ। কিন্তু এমন কিছু লোক রয়েছে যারা সরাসরি মৃত ব্যক্তির নিকট বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রার্থনা করে থাকে। এ বিষয়টি স্পষ্ট শিরক ও কুফর যেমনটি আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ওরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের আহ্বান করে তারা তো নিজেরা কিছুই সৃষ্টি করে না বরং ওদেরই সৃষ্টি করা হয়। আর তারা মৃত, জীবিত নয়। কখন যে ওদের পুনরায় জীবিত করা হবে সে সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না। (সুরা নামল-২০-২১)
ইমাম শাওকানী রঃ রসূলুল্লাহ সাঃ কে ওসীলা করে দোয়া করার বৈধতা বর্ণনা করার পর বলেন,
যে নিকৃষ্ট কাজটি অনেকেই করে থাকে তা হলো বহুসংখ্যক সাধারন লোক এবং কিছু সংখ্যক বিশিষ্ট ব্যক্তি কবরে শায়িত বা জীবিত ব্যক্তিকে এমন বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান মনে করে যা আল্লাহ ছাড়া কেউ দিতে সক্ষম নয়। তাদের অন্তরের এই আক্বীদার ফলস্রুতিতে তারা মুখ দ্বারা ঐ সকল ব্যক্তিদের নিকট প্রার্থনা করে থাকে।
তাদের কার্য্কলাপের আরো কিছু বর্ণনা দেওয়ার পর তিনি বলেন,
এটা যদি শিরক না হয় তবে তুমি শিরক খুঁজে পাবে না। আর যদি এটা কুফরী না হয় তবে দুনিয়াতে কুফরী বলতে কিছু নেই। (আদ্দুররুন-নাদীন)
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রঃ বলেন,
যারা ফেরেস্তা বা নবী-রাসুলকে মাধ্যম বানিয়ে তাদের উপর ভরসা করে, তাদের নকিট মঙ্গল কামনা করে এবং অমঙ্গল থেকে আশ্রয় চায়, যেমন:- তাদের নিকট গোনা মাফের জন্য প্রার্থনা করে বা সং পথ প্রদর্শনের জন্য প্রার্থনা করে অথবা বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রার্থনা করে তবে এই ব্যক্তি কাফির হওয়ার ব্যাপারে সমস্ত মুসলিম ইজমা করেছেন। (মাজমুউল ফাতওয়া)
যারা মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করে তাদের অবস্থা দুরাকম হতে পারে।
১। এদের কেউ কেউ দাবী করে আমরা আসলে এসকল মৃত ব্যক্তিদের কোনো ক্ষমতা আছে তা মনে করি না, প্রকৃত অর্থে তাদের নিকট প্রর্থনাও করি না। কিন্তু কেবল বরকতের উদ্দেশ্যে শাব্দিক ভাবে তাদের আহ্বান করে থাকি। পূর্বে আমরা রূপক অর্থে আহ্বান করা সংক্রান্ত আলোচনায় যেসব দলিল প্রমাণ উল্লেখ করেছি এর এক্ষেত্রে সেগুলো উল্লেখ পূর্বক নিজেদের শিরকী কর্মকান্ডকে বৈধ প্রমাণের চেষ্টা করে। তারা একটি বিষয় ভুলে যায় যে, কোন একটি কথার মাধ্যমে বক্তা তার অন্তরে কি উদ্দেশ্য করছে কেবল সেটিই বিবেচ্য বিষয় নয় বরং সকল মানুষ সেটার কি অর্থ বোঝে সেটাই বিবেচ্য বিষয়। রুপর অর্থে আহ্বান বলতে আমরা ঐ সকল বিষয়কে বুঝিয়েছি যেগুলো সকলের নিকট পরিচিত ও প্রশিদ্ধ। যদি কেউ রোগে শোকে কাতর হয়ে মাগো মাগো করে চিৎকার করে ওঠে এবং তার মা এর পূর্বে মারা গিয়ে থাকে তবু সেটা শির্ক-কুফর হবে না কেননা এটা স্পষ্ট বোধগম্য যে এখানে উক্ত ব্যক্তি তার মায়ের নিকট প্রকৃতই প্রার্থনা করছে না। যেহেতু কেউই নিজের মাকে উপাসনা করে না। ফলে এই কথাটি কুফরীর প্রমাণ বহন করে না। কিন্তু যদি কেউ মূর্তির উদ্দেশ্যে এধরণের আহ্বান করে তবে তার অন্তরে আক্বীদা যাই থাক যে কাফির হবে কেননা মূর্তিকে আহ্বান করা মূর্তিপূজারী ছাড়া অন্য কারো কাজ নয়। ফলে এটা কুফরীর প্রতীক ও কাফিরদের পরিচয় হিসেবে গন্য আর এ ধরণের বিষয়ে লিপ্ত হলে একজন ব্যক্তি কাফিরে পরিনত হবে তার আক্বীদা যাই হোক না কেন। পূর্বে আমরা দেখেছি কাজী ইয়াদ রঃ এ ব্যাপারে ওলামায়ে কিরামের ইজমা উল্লেখ করেছেন। যারা কবরওয়ালার নিকট সরাসরি প্রার্থনা করে আর বলে, আমাদের আক্বীদা তাওহীদ অনুযায়ীই আছে, আমরা এদের কোনো ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করি না। তাদের বিশ্বাস যদি সত্যিই সঠিক থকে তবু তারা কাফির হবে যেহেতু মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা মুশরিকদের কাজ এবং কুফরী আক্বীদা-বিশ্বাসের পরিচায়ক। যে এটা করবে তার কাজের মাধ্যমেই তার আক্বীদার পরিচয় পাওয়া যাবে তার মুখের দাবীকে মোটেও গুরুত্ব দেওয়া হবে না। যেহেতু কুফরী কথা মুখে উচ্চারণ করাও কুফরী অন্তরের আক্বীদা বিশ্বাস যাই থাক। পরর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এসেছে।
স্বয়ং কবরওয়ালার নিকট প্রার্থনা করা স্পষ্ট শিরক প্রন্ধটি পড়া শেষ হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।