সাজির সাজানো ঘর |ইসলামিক গল্প| ১ম পর্ব

সাজির সাজানো ঘর পর্ব প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

            ফজরের আজানটা কেবল কানে এসেছে| ছোটন জানে আজান হলেও সালাত একটু পরেই হবে| এমন ভেবে বিছানায় কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে আরো একবার চোখ বুজিয়ে ফেলল| আর তখনই সে সাজির ডাক শুনতে পেলো,

– ভাইয়া উঠে পড়ো, মসজিদে যাবে না?

ছোট বোনের ডাকা শুনে ছোটন অলস ভঙ্গিতে চোখ মেলে তাকায়| বিছানার পাশেই সাজিকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মনটা তার ভীষণ খুশি হয়ে গেলো| আজও নিশ্চয় সে রাতের সালাত পড়তে উঠেছিলো| প্রতিদিন না হলেও মাঝে মাঝে রাতে উঠে সালাত আদায় করে সাজি| নিজের জন্য আর পরিবারের সবার জন্য দোয়া করে| ভীষণ ভাল মেয়ে সে| ছোটন বিছানা ছেড়ে ওঠার আগে কিছুক্ষণ এক পলকে তাকিয়ে থাকে তার মুখের দিকে| তার চেহারার আয়নায়ই যেনো খুঁজে পেতে চায় হারানো কোনো জিনিস| হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় রোজি আপুর কথা| প্রায় পনের-ষোল বছর আগের কথা| সাপের কামড়ে তার আপু মারা যায়| তারপর তার বাবা মা শোকে কাতর হয়ে পড়েন| ছোটনও দুঃখ পেয়েছিল তবে একেবারে ভেঙে পড়েনি| কারণ তার বিশ্বাস তার রোজী আপু মরে গিয়ে জান্নাতী হয়েছে| সে এখন জান্নাতের নানা রকম ফল-মূল আর মজাদার খাবার খাচ্ছে| ইচ্ছামত এ বাগান থেকে সে বাগানে ঘুরে-ফিরে বেড়াচ্ছে| আজ পর্যন্ত সে এটাই বিশ্বাস করে| তাই রোজী আপুর জন্য খুব একটা দুঃখ করে না সে| কিন্তু তার বাবা-মা একমাত্র মেয়ের মৃত্যুতে ভীষণ দুঃখ পান| বড় লোকের বে নামাযী ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার জিদ ধরে তারা যে মেয়েটার উপর অন্যায় আর অবিচার করেছিলেন সেটাও এখন অকপটে স্বীকার করেন| পরে রোজীর মতো আরেকটি মেয়ের আশায় তারা আবারো সন্তান গ্রহণ করেন| আল্লাহ তাদের সে আশা পূরণও করেন| রোজীর মৃত্যুর দেড় দুই বছরের মাথায় তাদের কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে একটা মেয়ে| বড় বোন রোজীনার নামের সাথে মিল রেখে তারা তার নাম রাখেন সাজিনা| বড় বোনের ডাক নামের সাথে মিল রেখেই তারা তাকে ডাকেন সাজি বলে|  সাজি আবারও ধমকে উঠলো,

– আরে ওঠো ওঠো| চোখ খুলে কি জেগে জেগে ঘুমানোর ভান করছো নাকি?

সাজির এই কথায় হালকা শব্দে হেসে ওঠে ছোটন| সব দিক থেকে সে রোজী আপুর মতোই হয়েছে শুধু এই একটি বিষয় ছাড়া| রোজী আপু বড় হয়েও কখনও ধমক দিতো না ছোটনকে আর সাজি ছোট বোন হয়েও মাঝে মাঝেই ধমক দেয় ছোটনকে| সেই ছোট থেকে এটাই যেনো নিয়ম হয়ে গেছে| বাবা-মায়ের খুব আদরের মেয়ে সে| বড় ভাই কিছু একটা বললেই অমনি গিয়ে নালিশ করতো বাবা-মায়ের কাছে| আর তার বাবা-মাও বিনা তদন্তে ঘটনার দায় ছোটনের উপর চাপিয়ে দিয়েই বিচার শেষ করতেন| সে কারণেই হয়তো এমন এক তরফা আর মেজাজী মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে সাজির মধ্যে| সে যাই হোক| তার এই ধমক অবশ্য ছোটনের ভালই লাগে| ভাল লাগে তার মেজাজটাও| তের-চৌদ্দ বছরের একটা মেয়ের ধমক আর কতটাই বা কর্কষ হতে পারে| ধমকের মধ্যে শাসনের সাথে সাথে তোষণও কিছুটা থেকেই যায়| তোয়াজের একটা ভাব থাকে তার মেজাজের মধ্যেও| সাজির ছোট মুখে বড় ধমক শুনে ছোটন তাই না হেসে থাকতে পারে না| অমনি সাজি আবারো ধমকে ওঠে,

— আবার হাসে! ধমক শুনে ছোটন আবারো হেসে ওঠে| এভাবে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলতে থাকে একটা অন্তহীন চক্রের মতো| তারপর হাসতে হাসতেই ছোটন উঠে গিয়ে মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে| বাবা-মায়ের ঘর থেকেও খুট-খাট আওয়াজ আসতে থাকে| বোঝা যায় তারাও সালাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে| ছোট থেকেই সলাতের পাবন্ধ করেন ছোটনের বাবা| দাদার কাছ থেকেই এর দীক্ষা গ্রহণ করেন তিনি| বিয়ের পর ছোটনের মাকেও দিক্ষিত করেন এই দীক্ষায়| দাদার আমল থেকেই এলাকায় মোল্লাবাড়ি নামে পরিচিত এই বাড়িটি| যদিও এর মধ্যে মোল্লাটা ঠিক কে তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলে না| দাদা বেঁচে থাকতে তিনিই ছিলেন অঘোষিত মোল্লা| মানুষের দু’পাছটা ধর্মীয় সমস্যায় পরামর্শ আর দিক নির্দেশনা তিনিই দিতেন| রোজী আপু থাকতে সেও কিছুটা পালন করেছে এই দায়িত্ব আর এখন সাজি জবরদস্ত এক মোল্লা সেজে বসেছে সবার ঘাড়ে| কেবল প্রশ্ন করতে আসলে নয় অনেক সময় জেচেও অন্যের প্রশ্নের সমাধান করে দেয় সে| পাড়া প্রতিবেশীদের অনেকে তাতে খুশিও হয় কেউ কেউ বেজারও হয়| রোজী আপুর মৃত্যুর পর অনেক কটা বছর পার হয়ে গেছে| গ্রামের অবস্থা বদলে গেছে অনেকটাই| এখন ধর্মের কথায় মানুষ আর আগের মতো মাথা গলায় না| রোজী আপুর তুলনায় সাজির দায়িত্বটাও তাই হয়ে উঠেছে  অধিক ঝুকিপূর্ণ| খুব পড়াশুনা করে সাজি| রোজী আপুর সংগ্রহ করা বইগুলো তো সে শেষ করেছেই| তারপরও এখান সেখান থেকে সংগ্রহ করে নানা রকম বই পুস্তক| আর যেটা একবার পড়ে ফেলে সেটা জীবনে আর ভোলে না| ভোলা তো দূরের কথা একটুখানি পড়ে তার ভিতর থেকে কত রকম যে ডাল পাতা গজিয়ে ফেলে তার ইয়ত্তা নেই| ভীষণ মেধাবী সে| মেয়েদের মধ্যে তার জুড়ি মেলা ভার| এতটুকু বয়সেই কত যে বড় বড় রুই কাতলা তার হাতে ধরা খেয়েছে তার গোনতি নেই| এসব ভেবে ছোটন মুখ টিপে হাসতে থাকে| তখনই তার বাবা ঘর থেকে বের হয়ে আসেন| তার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে| প্রস্তুতি শেষ হয়েছৈ ছোটনেরও| দুজনে তারা একসাথে মসজিদে চলে যায়| ছোটনের মাও ঘর থেকে বের হয়ে আসেন| কিছুক্ষণ অপলকে তাকিয়ে থাকেন স্বামী আর সন্তানের চলে যাবার রাস্তার দিকে| তারপর ঘরে গিয়ে সলাতে দাড়িয়ে পড়েন|

সাজির সাজানো ঘর প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভূলবেন না। সাজির সাজানো ঘর গল্পটির দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *