সাঈদ ইবন ’আমের আল-জুমাহী (রাঃ) এর জীবনী

ঐতিহাসিকরা বলেছেনঃ সাঈদ ইবন আমের এমন ব্যক্তি যিনি দুনিয়ার বিনিময়ে আখিরাত খরিদ করে নেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সা. অন্য সব কিছুর ওপর প্রাধান্য দান করেন।
তাঁর পিতার নাম আমের এবং মাতা আরওয়া বিনতু আবী মুয়ীত। খাইবার বিজয়ের পূর্বে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
মক্কার কুরাইশরা ধোঁকা দিয়ে রাসূলুল্লাহর সা. সাহাবী খুবাইব ইবন আদীকে রা. বন্দী করে মক্কায় নিয়ে আসে এবং সমবেত জনমণ্ডলীর সামনে প্রকাশ্যে জীবিত অবস্থায় অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে তাঁকে শুলবিদ্ধ করে। এ হৃদয় বিদারক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য মক্কায় ঢেড়া পিটিয়ে দেওয়া হয়। এ দৃশ্য দেখার জন্য মক্কার তানয়ীম এলাকা থেকে আগত লোকদের মধ্যে সাঈদ ইবন আমের আল-জুমাহীও ছিলেন।  
তাঁর ধমনীতে তখন যৌবনের টগবগে রক্ত। মানুষের ভীড় ঠেলে তিনিও চলেছেন সামনের দিকে। এক সময় তিনি এসে দাঁড়ালেন প্রথম সারির কুরাইশ নেতৃবৃন্দ- আবু সুফিয়ান ইবন হারবসাফওয়ান ইবন উমাইয়্যা প্রমুখের পাশাপাশি। কুরাইশদের বন্দীকে তিনি দেখলেন বেড়ী লাগানো অবস্থায়। নারী-পুরুষআবাল বৃদ্ধ-বণিতা তাঁকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর আংগিনার দিকে। তঁঅর হত্যার মাধ্যমে বদর যুদ্ধে নিহত কুরাইশদের বদলা নেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য। তাই তারা পৈশাচিক উল্লাসে মাতোয়ারা।
বন্দীকে সংগে নিয়ে অগনিত মানুষ বধ্যভূমিতে উপস্থিত হল। দীর্ঘদেহী যুবক সাঈদ ইবন আমের দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলেন। নারী ও শিশুদের চীৎকার ও শোরগোলের মধ্যে তাঁর কানে ভেসে এল খুবাইবের দৃঢ় ও শান্ত কণ্ঠস্বর। বলছেঃ আমাকে শূলীতে চড়াবার পূর্বে তোমরা যদি অনুমতি দাওআমি দা’ রাকাআত  নামায আদায় করে নিতে পারি।’ তারা অনুমতি দিল।সাঈদ ইবন আমের দেখলেনতিনি কাবার দিকে মুখ করে দু’ রাকাআত নামায আদায় করলেন। সে নামায কতই না সুন্দরকতই না চমৎকার! তারপর কুরাইশ নেতৃবৃন্দের দিকে ফিরে তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ আল্লাহর কসম! তোমরা যদি মনে না করতেআমি মরণ-ভয়ে নামায দীর্ঘ করছিতাহলে আমি নামায আরও  দীর্ঘ করতাম।অতঃপর সাঈদ ইবন আমের স্বচক্ষে দেখলেনতাঁর গোত্রের লোকেরা জীবিত অবস্থায় খুবাইবের দেহ থেকে একটার পর একটা অংগ কেটে ফেলছে। আর তাঁকে জিজ্ঞেস করছেঃ তোমার স্থানে মুহাম্মাদকে আনা হোকআর তুমি মুক্তি পেয়ে যাওতা কি তুমি পছন্দ কর?’
তাঁর দেহ থেকে রক্তের ধারা প্রবাহিত হচ্ছেআর তিনি বলছেনঃ
আল্লাহর কসমআমি আমার পরিবার ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে নিরাপদে অবস্থান করিআর বিনিময়ে মুহাম্মাদের সা. গায়ে একটি কাঁটার আঁচড় লাগুক তাও আমার মনঃপুত নয়।’ একথা শুনে চতুর্দিক থেকে লোকেরা হাত ওপরে উঠিয়ে চীৎকার করে বলতে লাগলঃ হত্যা করওকে হত্যা করা।
অতঃপর সাঈদ ইবন আমর দেখলেনশূলীকাষ্ঠের ওপর দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি বলছেনঃআল্লাহুম্মা আহসিহিম আদাদা-ওয়াকতুলহুম বাদাদা ওয়ালা তুগাদির মিনহুম আহাদা-ইয়া আল্লাহতাদের সংখ্যা তুমি গুণে রাখ তাদেরকে তুমি এক এক করে হত্যা কর এবং কাউকে তুমি ছেড়ে দিও না।’ এই ছিল তাঁর অন্তিম দুআ। তারপর তরবারি ও বর্শার অসংখ্য আঘাতে তাঁর দেহ জর্জরিত করা হয়।
কিছুদিনের মধ্যে কুরাইশরা বড় বড় ঘটনাবলীতে লিপ্ত হয়ে খুবাইব ও তাঁর শূলীর কথা ভুলে গেল। কিন্তু যুবক সাঈদ ইবন আমের আল জুমাহীর অন্তর থেকে খুবাইবের স্মৃতি এক মুহূর্তের জন্য দূরীভূত হলনা। ঘুমালে স্বপ্নের মধ্যেজেগে থাকলে কল্পনায় তিনি খুবাইবকে দেখতেন। তিনি যেন দেখতে পেতেনখুবাইব শূলীকাষ্ঠের সামনে অত্যন্ত ধীর-স্থির ও প্রশান্তভাবে দুরাকাআত নামায আদায় করছেন। কুরাইশদের ওপর অন্তিম বদ-দুআর বিনীত সুরও যেন তিনি দুকান দিয়ে শুনতে পেতেন। তাঁর ভয় হত এখনই হয়ত তাঁর ওপর বজ্রপাত হবে অথবা আকাশ থেকে প্রস্তর বর্ষিত হবে।তাছাড়া খুবাইবের নিকট থেকে তিনি এমন কিছু শিক্ষালাভ করেনএর পূর্বে যা তিনি জানতেন না।
যেমনঃ বিশ্বাস এবং বিশ্বাসের পথে আমরণ জিহাদই হচ্ছে প্রকৃত জীবন। মজবুত ঈমান অনেক অভিনব ও অলৌকিক বিষয় সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া একজন মানুষ যাঁকে তাঁর সংগীরা এত গভীরভাবে মুহাব্বাত করতে পারেতিনি আল্লাহ প্রেরিত নবী ছাড়া আর কিছু নন।
সেই সময় থেকে আল্লাহ তাআলা সাঈদ ইবন আমেরের অন্তরকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। একদিন তিনি জনমণ্ডলীর সামনে উঠে দাঁড়িয়ে কুরাইশদের দেব-দেবী ও মূর্তির সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিন্নকরে ইসলাম গ্রহণের প্রকাশ্য ঘোষণা দেন। খাইবার যুদ্ধের পূর্বে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
সাঈদ ইবন আমের হিজরাত করে মদীনায় এলেন এবং সর্বক্ষণ রাসূলুল্লাহর সা. সাহচর্য অবলম্বন করেন। তিনি খাইবারসহ পরবর্তী সব যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেন।
রাসূলুল্লাহর সা. তিরোধানের পর তাঁর দাখলীফা আবু বকর রা. ও উমারের রা. খিলাফতকালে সাঈদ ইবন আমের উন্মুক্ত তরবারি হাতে তাঁদের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করেন। হযরত উমারের রা. খিলাফতকালে সেনাপতি আবু উবাইদা রা. ইয়ারমুক যুদ্ধের জন্য অতিরিক্ত সৈন্য সাহায্য তলব করেন। খলীফা মদীনা থেকে সাঈদের নেতৃত্বে এক বাহিনী পাঠিয়ে দেন। ইয়ারমুকে সাঈদ রা. উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। দুনিয়ার বিনিময়ে আখিরাতকে ক্রয় করে এবং আল্লাহর রিজামন্দীকে অন্তর ও দেহের সকল কামনা বাসনার ওপর প্রাধান্য দান করে এবং আল্লাহর রিজামন্দীকে অন্তর ও দেহের সকল কামনা বাসনার ওপর প্রাধান্য দান করে মুসলিমদের জন্য তিনি এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। রাসূলুল্লাহর সা. প্রথম দুখলিফা সাঈদ ইবন আমেরের সততা আল্লাহ-ভীতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। এ কারণে সব সময় তাঁরা তাঁর উপদেশ গ্রহণ করতেন।
খলীফা হযরত উমারের রা. খিলাফতকালের প্রথম পর্ব তখন চলছে। একদিন সাঈদ ইবন আমের খলীফাকে বললেনঃ
‘‘ওহে উমারআমি আপনাকে মানুষের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করার উপদেশ দান করছি। তবে আল্লাহর ব্যাপারে মানুষকে ভয় করবেন না। আপনার কথা আপনার কাজের পরিপন্থী যেন না হয়। কারণকর্মদ্বারা সত্যায়িত কথাই সর্বোৎকৃষ্ট কথা।
ওহে উমারদূর ও নিকটেই যে মুসলিম উম্মার শাসক আল্লাহ আপনাকে বানিয়েছেনতাদের ব্যাপারে সর্বদা আপনি সজাগ থাকবেন। আপনার নিজের ও পরিবার বর্গের জন্য যা আপনি পছন্দ করবেন তাদের জন্যও তা আপনি পছন্দ করবেন। আপনার নিজের ও পরিবার বর্গের জন্য যা অপছন্দ করবেন তাদের জন্যও তা অপছন্দ করবেন। সত্যে উপনীত হওযার জন্য সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করবেন। আল্লাহর নির্দেশের ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় আপনি করবেন না।’’
উমার জিজ্ঞেস করলেন,
সাঈদএ কাজ করতে সক্ষম কে?’
তিনি বললেনঃ আপনার মত ব্যক্তি। আল্লাহ যাঁকে উম্মাতে মুহাম্মাদীর কর্তৃত্ব দান করেছেন এবং আল্লাহ ও আপনার মাঝে অন্য কোন প্রতিবন্ধক নেই।
তখনই তিনি সাঈদের নিকট আল্লাহর কসম দিয়ে বলছিআমার ওপর এ বিপদ চাপাবেন নাআমাকে এ দুনিয়ার দিকে টেনে আনবেন না।
উমার রেগে গিয়ে বললেন,আপনাদের ধ্বংস হোক! খিলাফতের এ দায়িত্ব আমার কাঁধে চাপিয়ে এখন আমার থেকে দূরে থাকতে চানআল্লাহর কসম! আমি আপনাকে ছাড়বো না।’ একথা বলে তিনি সাঈদকে হিমসের ওয়ালী নিযুক্ত করেন। তারপর জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার ভাতা নির্ধারণ করে দেব কি?’ সাঈদ বললেন, ‘আমীরুল মুমিনীনআমি তা দিয়ে কি করববাইতুল মাল থেকে যে ভাতা আমি লাভ করে থাকি তাইতো আমার প্রয়োজনের তুলনায় বেশী হয়ে যায়।’ সাঈদ হিমসে চলে গেলেন।
কিছুদিন পর আমীরুল মুমিনীন উমারের কতিপয় বিশ্বস্ত লোক হিমস থেকে মদীনা এল। উমার তাদেরকে বললেনঃতোমাদের গরীব মিসকিনদের একটা তালিকা তোমরা আমাকে দাও। আমি তাদের কিছু সাহায্য করব। তারা একটি তালিকা প্রস্তুত করে উমারকে দিল। তাতে অন্যান্যের সংগে সাঈদ ইবন আমেরর নামটিও ছিল। খলীফা জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ সাঈদ ইবন আমের কে?’ তারা বলল, ‘আমারের আমীর।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের আমীরও কি এতো গরীব?’
তারা বললঃ হ্যাঁ। আল্লাহর কসম। একাধারে কয়েকদিন যাবত তাঁর বাড়ীতে উনুনে হাড়ি চড়ে না।
একথা শুনে খলীফা উমার এত কাঁদলেন যেচোখের পানিতে তাঁর দাড়ি ভিজে গেল। তারপর এক হাজার দিনার একটি থলিতে ভরে বললেন, ‘আমার পক্ষ থেকে তাঁকে সালাম জানিয়ে বলবেআপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজন পূরণের জন্য আমীরুল মুমিনীন এ অর্থ পাঠিয়েছেন।
দিনার ভর্তি থলি নিয়ে তারা সাঈদের নিকট উপস্থিত হল। থলির মুখ খুলেই তিনি দেখতে পেলেন তাতে দিনার। অমনি ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলতে বলতে থলিটি এমনভাবে দূরে সরিয়ে দিলেন যেন তাঁর ওপর বড় ধরণের কোন বিপদ আপতিত হয়েছে। তাঁর স্ত্রী ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন।
সাঈদকি হয়েছে আপনারআমীরুল মুমিনীন কি ইন্তিকাল করেছেন?’তিনি বললেন, ‘না। বরং তার থেকেও বড় কিছু।
মুসলিমদের ওপর কি কোন বিপদ আপতিত হয়েছে?’তিনি বললেন, ‘না। তাঁর থেকেও বড় কিছু।
স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, ‘সেই বড় জিনিস কি?’তিনি বললেন, ‘আমার পরকালের সর্বনাশের জন্য দুনিয়া আমার কাছে ঢুকে পড়েছে। আমার ঘরে বিপদ এসে পড়েছে।স্ত্রী বললেন, ‘বিপদ দূর করে দিন।’ তখনও তিনি দিনারের ব্যাপারটি জানতেন না।
সাঈদ বললেন, ‘এ ব্যাপারে তুমি আমাকে সাহায্য করবে?’স্ত্রী জবাব দিলেন, ‘নিশ্চয়ই।
তারপর দিনারগুলি কয়েকটি থলিতে ভরে তিনি গরীব মুসলিমদের মধ্যে বিলিয়ে দিলেন।কিছুদিন পর হযরত উমার ইবনুল খাত্তার রা. স্বচক্ষে সিরিয়ার অবস্থা দেখার জন্য হিমসে এলেন। সেকালে হিমসকে বলা হত কুয়াইফা। কারণ কুফাবাসীদের মত হিমসবাসীরাও তাদের শাসকদের বিরুদ্ধে সব সময় অতিরিক্ত অভিযোগ উত্থাপন করতো। তাই বলা হত হিমসও যেন ছোট-খাট একটি কুফা। যাই হোকখলীফার আগমনের পর হিমসবাসীর তাঁকে সালাম জানাতে এলে তিনি জি্জ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের আমীরকে কেমন পেলে?’
তারা আমীরের (সাঈদ) চারটি কাজের কথা উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করল। গুরুত্বের দিক দিয়ে সে চারটি কাজের প্রত্যেকটি সমান।
উমার বলেন, ‘আমি হিমসবাসী ও তাদের আমীরকে একসাথে উপস্থিত হতে বললাম। আল্লাহর কাছে আমি দুআ করলাম,তাঁর সম্পর্কে আমার ধারণা যেন হতাশাব্যঞ্জক না হয়। কারণ তাঁর প্রতি ছিল আমার দারুণ বিশ্বাস।
হিমসবাসী ও তাদের আমীর আমার নিকট এলে আমি জিজ্ঞেস করলাম,তোমাদের আমীরের বিরুদ্ধে তোমাদের অভিযোগ কি?’তারা বলল, ‘বেশ খানিক বেলা না হওয়া পর্যন্ত তিনি আমাদেরকে দেখা দেন না।উমার জিজ্ঞেস করলেন, ‘সাঈদএ অভিযোগ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি?’তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
‘‘আল্লাহর কসম! বিষয়টি কারও কাছে প্রকাশ করা আমার পছন্দনীয় নয়। তবে না বললেই নয়তাই বলছি। আমার পরিবারের জন্য কোন চাকর-বাকর নেই। সকালে বাড়ীর সব কাজই আমাকে নিজ হাতে করতে হয়। আটা মাখা ও রুটি তৈরীর কাজও আমি করে থাকি। তারপর হাত মুখ ধুয়ে মানুষকে সাক্ষাৎ দিই। তখন খানিকটা বেলা হয়ে যায়।’’
উমার জিজ্ঞেস করলেন,তোমাদের আরও অভিযোগ আছে কি?
তারা বলল,তিনি রাতের বেলা কাউকে সাক্ষাৎ দান করেন না।
উমার জিজ্ঞেস করলেন,সাঈদএ ব্যাপারে তোমার বক্তব্য কি?’
তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এ বিষয়টিও প্রকাশ করা আমার মনঃপূত নয়। তবুও বলছিআমি দিন মানুষের জন্য ও রাত আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করেছি।উমার জিজ্ঞেস করলেন,তোমাদের আর কি অভিযোগ?’তারা বলল,
মাসে একটে দিন তিনি কাকেও সাক্ষাৎ দান করেন না।উমার জিজ্ঞেস করলেন, ‘সাঈদ বিষয়টি কি?তিনি বললেন, ‘‘আমীরুল মুমিনীনআমার কোন খাদেম নেই। পরনের এ কাপড় ছাড়া অন্য কোন কাপড়ও আমার নেই। মাসে একবার আমি নিজ হাতে তা পরিষ্কার করি এবং শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করি। এজন্য দিনের প্রথম ভাগে লোকদের সাক্ষাৎ দিতে পারিনা। তবে শেষ ভাগে সাক্ষাৎ দিই।উমার আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে আর কোন অভিযোগ আছে?’তারা বলল,মজলিসে মানুষের সাথে কথা বলতে বলতে মাঝে মাঝে হঠাৎ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন।উমার জিজ্ঞেস করলেন, ‘ব্যাপার কি সাঈদ?’
তিনি বললেন,‘‘আমি মুশরিক অবস্থায় খুবাইব ইবন আদীকে শূলীতে চড়ানোর দৃশ্য দেখেছিলাম। আমি আরও দেখেছিলাম কুরাইশরা তাঁর অংগ-প্রত্যংগ এক এক করে কেটে ফেলছে। সে সময় কুরাইশরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল,তোমার স্থানে মুহাম্মাদকে সা. আনা হোক তা কি তুমি পছন্দ কর?’
উত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ আল্লাহ কসমআমি আমার পরিবার বর্গ ও সন্তান সন্ততির মাঝে নিরাপদে ফিরে যাইআর এর বিনিময়ে মুহাম্মাদের সা. গায়ে কাঁটার একটি আঁচড়ও লাগুক তাও আমার মনঃপূত নয়। আল্লাহর কসম! যখনই আমার সে দিনটির স্মৃতি মনে পড়ে এবং কেন আমি সেদিন তাঁকে সাহায্য করিনি- এ অনুভূতি আমার মধ্যে জেগে ওঠেতখন আমি চেতনা হারিয়ে ফেলি। আমার মনে হয়আল্লাহ আমার এ অপরাধ ক্ষমা করবেন না।
উমার তখন বললেনসকল প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমার ধারণাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেননি। তারপর তিনি সাঈদের প্রয়োজন মিটানোর জন্য এক লাখ দিনার পাঠালেন। তাঁর সহধর্মিনী দিনারগুলি দেখে বলে উঠলেনঃসকল প্রশংসা আল্লাহরযিনি আমাদেরকে আপনার সেবা গ্রহণ থেকে মুক্তি দিয়েছেন। যানআমাদের জন্য খাদ্য-খাবার কিনে আনুন এবং একটি চাকর রাখুন।
একথা শুনে তিনি স্ত্রীকে বললেনঃএর থেকে উত্তম কিছু লাভ কর তাকি তমি চাওনাস্ত্রী বললেন, ‘সেই উত্তম বস্তু কী?’’তিনি বললেন, ‘আমরা এ দিনারগুলি আল্লাহকে করজে হাসানা দিয়ে দিই। তিনি আমাদের উত্তম বিনিময় দান করবেনআমরা তো সেই বিনিময়ের সর্বাধিক মুখাপেক্ষী।স্ত্রী বললেন, ‘হাঁতা দিন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
সেই মজলিসে বসে তিনি দিনারগুলি কয়েকটি থলিতে ভরলেন। তারপর পরিবারের প্রত্যেকে সদস্যের হাতে একটি করে থলি দিয়ে তিনি বললেনঃ অমুক বিধবাঅমুক ইয়াতিমঅমুক গোত্রের মিসকীন এবং অমুক গোত্রের অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিলি করে এস।
নিজের প্রয়োজন সত্ত্বেও অন্যকে যাঁরা প্রাধান্য দেয়সাঈদ সেই মহান ব্যক্তিদের একজন।
হিমসের ওয়ালী থাকা অবস্থায় খলীফা হযরত উমার রা. তাঁকে একবার মদীনায় ডেকে পাঠান। তিনি মদীনায় এলেন। হাতে তাঁর একটি লাঠি এবং খাওয়ার জন্য একটি মাত্র পিয়ালা। খলীফা জিজ্ঞেস কেরলেনতোমার সাজ-সরঞ্জামত এতটুকুইজবাব দিলেন এর চেয়ে বেশী জিনিসের প্রয়োজন কি জন্যপিয়ালায় খাই এবং লাঠিতে সাজ-সরঞ্জাম ঝুলিয়ে নিই।
ইবন সাদের মতেহিমসের ওয়ালী থাকা অবস্থায় হিজরী ২০ সনে তিনি ইনতিকাল করেন। আবু উবাইদার মতে তাঁর মৃত্যু সব হিজরী ২১।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *