মানব রচিত বিধান দিয়ে বিচার ফয়সালা করা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মূনীর
মানব রচিত বিধান দিয়ে বিচার ফয়সালা করা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মূনীর এর প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে শেয়ার করতে ভূলবেন না।
বর্তমান সময়ের আলোকে এ বিষয়টি অত্যাধিক গুরুত্বের অধিকারী। কাফির-মুশরিক ও নাস্তিক মুরতাদরা একযোগে প্রচার করে চলেছে, ইসলাম দেড় হাজার বছর পূর্বে যেসব বিধি-বিধান বর্ণনা করেছে সেগুলো বর্তমান সময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম নয়। তারা যুগের প্রয়োজনের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন-নতুন বিধি-বিধান প্রনয়নের কথা বলে এবং ইসলামী বিধি-বিধানকে মধ্যযুগীয় বর্বর আইন হিসেবে আখ্যায়িত করে। এই শ্রেণীর লোকদের আক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এমনকি মুসলিম নামধারী ও ইসলামী মনোভাবাপন্ন নেতা-নেত্রীবর্গও এটা মেনে নিয়েছে বা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। একারণে সারা পৃথিবীর কোথাও এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত নেই যেখানে রাষ্ট্রীভাবে ইসলামী বিধানকে পরিত্যাগ করে মানবরচিত বিধান গ্রহণের কথা লিখিত আছে। আর যেসব রাষ্ট্রে সাংবিধানিকভাবে ইসলামী বিধি-বিধানের প্রতি আনুগত্য ও অনুসরণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তারাও কার্যক্ষেত্রে সেই ঘোষণা বাস্তবায়িত করতে ব্যর্থ হয়। একদিকে তারা আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ধনী-গরীব, দূর্বল-সবল উভয় শ্রেণীর সাথে দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করে। যেমনটি ইয়াহুদীরা করতো। অপরদিকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তারা বেশ কিছু বিধানের বিকৃতি সাধন করে থাকে। যেমন কোনো কোনো দেশে বিবাহিত জেনাকারীকে রজম (পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা) এর পরিবর্তে ফাসি দিয়ে বা তরবারি দ্বারা আঘাত করে হত্যা করা হয় আবার কোথাও সাংবিধানিকভাবে ইসলামী আইনের স্বীকৃতি থাকলেও কার্যক্ষেত্রে তা পরিপূর্ণভাবে পরিত্যাগ করা হয়। এ কথা স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রে পরিপূর্ণভাবে ইসলামী বিধান প্রিতিষ্ঠিত নেই। পাপাচারী ও জালেমদের পক্ষ থেকে মানুষের উপর মানবরচিত আইন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে আর সাধারন মানুষ নিজেদের জান-মাল হেফাজতের জন্য তাগুতের নিকট বিচারপ্রার্থী হতে বাধ্য হচ্ছে। এমতাবস্থায় এই সকল রাষ্ট্রের পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের অনুসারীদের ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত সৃষ্টি হয়েছে। একদল লোক সাধারনভাবে এদের সকলকে তাগুত হিসেবে আখ্যায়িত করে। এরা মানব রচিত আইনের রচয়িতা এবং এই আইনের প্রচার, প্রসার ও প্রয়োগের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল শ্রেণীর লোকদের কাফির মুশরিক হিসেবে ঘোষণা দিয়ে থাকে। এদের কেউ কেউ এমনকি মানবরচিত আইনের নিকট বিচরপ্রার্থী সাধারন মুসলিমদেরও কাফির হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। যেহেতু তাদের ভাষ্য অনুযায়ী তারা তাগুতকে মেনে নিয়েছে। এর বেশ কিছু আয়াতকে নিজেদের স্বপক্ষে দলিল হিসেবে পেশ করে। যেমন, আল্লাহর বাণী,
আপনার রবের কসম তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তদের মধ্যে যা কিছু বিবাদ ঘটে তার বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ করে এবং আপনি যে বিচার করবেন সে ব্যাপারে তাদের অন্তরে সামান্যও সংশয় সৃষ্টি না হয়। বরং পরিপূর্ণভাবে মেনে নেয়। (সুরা নিসা-৬৪)
যারা আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করে না তারা কাফির। (মায়েদা-৪৪)
আপনি কি তাদের দেখেন নি যারা আপনার উপর অবতীর্ণ এবং আপনার পূর্বে অবতীর্ণ সকল কিতাবের উপর ঈমান রাখার দাবী করে অথচ তাগুতের নিকট বিচার প্রার্থী হতে চায়। তাদের তো তাগুতকে অস্বীকার করতেই বলা হয়েছিল। শয়তান তো তাদের বহু দূরে পথভ্রষ্ট করতে চায়। (নিসা-৬০)
এই সকল আয়াত থেকে তারা প্রমাণ করতে চায়, যে কেউ আল্লাহর বিধান দ্বারা বিচার করে না সে কাফির এবং যে এমন ব্যক্তির নিকট বিচার প্রার্থনা করে সেও কাফির।
বিপরীত দিকে এমন কিছু লোকও রয়েছে যারা এই সকল নেতা-নেত্রী ও রাষ্ট্রপ্রধান মনে করে এবং মুসলিমদের উপর তাদের আনুগত্য বাধ্যতামূলক মনে করে। তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা অবৈধ মনে করে। এক্ষেত্রে তারা আমীরের আনুগত্য সম্পর্কে বিভিন্ন আয়াত ও হাদীস পেশ করে থাকে এবং আমীরের মধ্যে কিছু দোষ ত্রুটি থাকলেও তার আনুগত্য করে যাওয়ার ব্যাপারে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো বিশেষ গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করে। (এই গ্রন্থে প্রথম প্রকারের ভ্রান্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে যেহেতু তাওহীদের বিষয়াবলীর সাথে দ্বীতীয় প্রকারের আলোচনা প্রসঙ্গিক নয়। দ্বিতীয় দলের ভ্রান্তি সম্পর্কে আমরা আত-তাবঈন ফি হুমমিল উমারা ওয়াস সালাতিন নামক পৃথক একটি গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছি)।
এই ধরণের বিপরীতমূখী মতামতের দিকে লক্ষ রেখে বিষয়টির সঠিক সমাধান জেনে নেওয়া একান্ত জরুরী। এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত অবগত হওয়ার জন্য বেশ কিছু মূলনীতির সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। পরবর্তী পোষ্টে সেসব মূলনীতি সম্পর্কে পৃথক শিরোনামে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মানব রচিত বিধান দিয়ে বিচার ফয়সালা করা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মূনীর এর প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।