মাতাল অবস্থায় কুফরীর বিধান বা মাতাল অবস্থায় কেউ কুফরী করলে তার বিধান – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর
মাতাল অবস্থায় কুফরীর বিধান বা মাতাল অবস্থায় কেউ কুফরী করলে তার বিধান – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর তাওহীদ আর রহমান নামক গ্রন্থ হতে সংকলিত
উপরে আমরা দেখেছি, যে কোনো প্রকারের জ্ঞান হারিয়ে কুফরী কথা বললে তা ধার্তব্য না করার ব্যাপারে আলেমরা একমত হয়েছেন। তবে কোনো হারাম জিনিস যেমন মদ, গাজা ইত্যাদি সেবন করার মাধ্যমে যদি কেউ মাতাল হয় এবং মাতাল অবস্থায় কুফরীতে লিপ্ত হয় তাকে ওযর দেওয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে আলেমদের মাঝে দ্বিমত আছে। হানাফী ও মালেকী মাজহাব মতে উক্ত ব্যক্তিকে ওযর দেওয়া হবে। আর শাফেঈ ও হাম্বালী মাজহাবের গ্রহণযোগ্য মত হলো এই ব্যক্তি কাফির হবে এবং তার উপর কাফিরের যাবতীয় বিধান প্রযোজ্য হবে। তবে তাকে কখনই হত্যা করা হবে না বরং জ্ঞান ফিরে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ইবনে হুমাম রঃ বলেন, যে ব্যক্তি মাতাল হওয়ার কারণে কিছুই বুঝতে সক্ষম নয় সে পাগলের মতো। ইমাম মালেকের মত এটাই। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল হতে একটি রেওয়ায়েত এবং ইমাম শাফেঈর একটি মত এমন। (ফাতহুল কাদীর)
ইবনে নাজম আল-মিসরী বলেন, মাতাল ব্যক্তির সকল কার্যকলাপ ধার্তব্য হবে শুধু কুফরীর বিষয়টি ছাড়া। (বাহরুর রায়েকে) পরবর্তীতে তিনি বলেন, এটা সেক্ষেত্রে যখন উক্ত ব্যক্তি এতটা মাতাল হয় যে, সে কোনটি আকাশ আর কোনটি পৃথিবী তা চিনতে না পারে। যদি সে এটা চিনতে পারে তবে তার কুফরী ধার্তব্য হবে। (বাহরুর রায়েক)
হাম্বালী মাজহাবের ফিকাহ্ গ্রন্থ আল-ইনসাফে বলা হয়েছে, হাম্বালী মাযহাবের সঠিক মত হলো, মাতালের কুফরী ধার্তব্য হবে। ইবনে কুদামা রঃ আল-মুগনীতে ইমাম আহমাদ থেকে এ বিষয়ে দুটি রেওয়ায়েত আছে বলে উল্লেখ করেছেন এবং আবুল খাত্তাব রঃ থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন, মাতালকে কাফির বলার মতটিই অধিন প্রকাশ্য।
ইমাম নাব্বী রঃ বলেন, “এই মাজহাব (শাফেঈ মাজহাব) অনুযায়ী মাতালের কুফরী ধার্তব্য হবে।” (রাওদাতুত তালেবীন)
মোটকথা বেশিরভাগ ওলামায়ে কিরাম মাতাল অবস্থায় যে কুফরী করে তাকে ওযরপ্রাপ্ত মনে করেন নি। এর মূলত দুটি কারণ রয়েছে,
ক। আল্লাহ্ মদ হারাম করেছেন আর উক্ত ব্যক্তি মদ পান করার মাধ্যমে আল্লাহর অবাধ্য হয়েছে তাই সে ওযর পাওয়ার যোগ্য নয়। বেশিরভাগ আলেমের নিকট গ্রহণযোগ্য মূলনীতি হলো, একজন ব্যক্তির অবাধ্যতা তার জন্য কোনো সুযোগ সুষ্টি করতে পারে না। একারণে তারা অবৈধ উদ্দেশ্যে সফরে গমণকারীর ক্ষেত্রে কসরের সলাত প্রযোজ্য নয় এমন মত দিয়েছেন।
খ। সাধারনত মাতাল হওয়ার পরও একজন ব্যক্তির কম-বেশি বোধশক্তি অবশিষ্ট থাকে।
এদুটি কারণের মধ্যে প্রথমটিই প্রধান। দ্বিতীয় কারণটি খুব বেশি শক্ত নয়, যেহেতু ওলামায়ে কিরাম পাগলকে ওযর দেওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন আর বেশিরভাগ পাগলের কম বেশি ভাল-মন্দ বুঝার মতো জ্ঞান থাকে। এখানে পাগলকে ওযর দেওয়ার কারণ পাগল হওয়া কোনো অপরাধ নয়। একইভাবে ঔষধ সেবন করা বা অন্য কোনো বৈধ কারণে যার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে তার ক্ষেতেও আলেমরা ওযর দিয়েছেন। যেহেতু সে অপরাধী নয়। সুতরাং পাগল ও বেহুশ ব্যক্তির সাথে মাতালের মাঝে মৌলিক পার্থক্য হলো, মাতাল নিজের দোষে এবং অবৈধ পন্থায় হুশ হারা হয়েছে আর পাগল বৈধভাবে অপ্রকৃতিস্থ হয়েছে।
তাছাড়া সহীহ্ বুখারাীতে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, হামযা রঃ একবার মাতাল অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাঃ কে বলেন, “তোমরা তো আমার পিতার দাস ছাড়া কিছু নয়” (সহীহ বুখারী) এখানে হামযা রাঃ রাসুলুল্লাহ সাঃ কে উদ্দেশ্য করে যা বলেছেন যদি সুস্থ অবস্থায় বলতেন তবে তা কুফরী হিসেবেই গণ্য হতো কিন্তু মাতাল অবস্থায় বলার কারণে তাকে ওযর দেওয়া হয়েছে। যেহেতু তখন মদ পান করা বৈধ ছিল তাই মাতাল অবস্থায় বলার কারণে তাকে ওযর দেওয়া হয়েছে। যেহেতু তখন মদ পান করা বৈধ ছিল তাই মাতাল অবস্থায় কুফরী বলার পরও ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন মদ পান করা বৈধ নয় তাই মাতালকে ওযর দেওয়া হবে না। সুতরাং সাধারন পাগলের সাথে মাতালের বিধানে পার্থক্য করতে হলে সেটা বৈধতা ও অবৈধতার উপর নির্ভর করেই করতে হবে। যারা মাতাল অবস্থায় কুফরী কথা বললে কোনো ব্যক্তিকে কাফির হিসেবে গণ্য করার পক্ষে রায় দিয়েছেন তারা দুনিয়ার সকল বিধানে তাকে কাফির হিসেবেই গণ্য করেন। তবে সুস্থ বোধ ফিরে পাওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে হত্যা করা হবে না। যখন তার সুস্থ বোধ ফিরে আসবে তখন তাকে তাওবা করতে বলা হবে যদি সে তাওবা না করে তবে তাকে হত্যা করা হবে। বেশিরভাগ আলেমের নিকট এটিই সঠিক মত।
মাতাল অবস্থায় কুফরীর বিধান