মাজহাবকে অন্ধ অনুসরন করা বা কোনো মাযহাবের অনুসরণ করা অর্থ কোরআন হাদীসের পরিবর্তে উক্ত মাযহাবের ইমামকে অন্ধ অনুসরণ করা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর
মাজহাবকে অন্ধ অনুসরন করা বা কোনো মাযহাবের অনুসরণ করা অর্থ কোরআন হাদীসের পরিবর্তে উক্ত মাযহাবের ইমামকে অন্ধ অনুসরণ করা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর মাজহাব বনাম আহলে হাদীস গ্রন্থ হতে সংকলিত
এরা মনে করে হানাফী মাযহাব বলতে বোঝায় ছোট বড় সব বিষয়ে ইমাম আবু হানীফাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করা। একইভাবে অন্যান্য মাযহাবের ব্যাপারে তাদের ধারণা হলো উক্ত মাযহাবের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে অনুসরণ করে থাকেন। তাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল বরং প্রকৃত সত্য হলো প্রতিটি মাযহাবে যুগের পর যুগ শত-সহস্র আলেম ওলামা গত হয়েছেন। তারা ইজতিহাদ ও চিন্তা গবেষণার মাধ্যমে নিজেদের মাযহাবের মতামত সমূহ বিভিন্ন কিতাবে গ্রন্থিত করেছেন। যে সকল মত দূর্বল মনে করেছেন সেগুলো বাতিল করেছেন। এক মাযহাবের ওলামায়ে কিরাম অন্য মাযহাবের ওলামায়ে কিরামের সাথে আলোচনা করেছেন। একজন আরেকজনের দলীল প্রমানগুলো মাযহাবের মতামত উল্লেখ পূর্বক সেগুলোর দলীল প্রমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন, খন্ডায়নের চেষ্টা করেছেন কোনো কোনো মাসয়ালাতে বিরোধী পক্ষের দলীল শক্ত বলে মনে হলে তা স্বীকার করেছেন এবং সেটি গ্রহণ করেছেন। হাম্বলী মাযহাবের আলেম ইবনে কুদামার আল মুগনী, মালেকী মাযহাবের আলেম আল কুরতুবীর লেখা তাফসীরে কুরতুবী এবং ইবনে আরাবীর আহকামুল কুরআন, শাফেঈ মাযহাবের আলেম ইবনে হাযারের ফাতহুল বারী ও ইমাম নাব্বীর শারহে মুহাযযাব, হানাফী মাযহাবের আলেম বাদরুদ্দীন আইনীর উমদাতুল কারী ইত্যাদি গ্রন্থসমূহ এবিষয়ে স্পষ্ট প্রমান। এই ধরণের সুক্ষ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষনের কারণে চার মাযহাবের ভিতর যেসব ফতওয়া বর্তমানে টিকে আছে সেগুলো ইজমার বিপরীত বা শায হতে পারে না। অর্থাৎ একজন ব্যাক্তি কোনো একটি মাসয়ালাতে চার মাযহাবের মধ্যে কোনো একটি মাযহাব অনুসরণ করলে প্রায় নিশ্চিত থাকতে পারেন যে তিনি স্পষ্ট বিভ্রান্ত ও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য কোনো মতের উপর আমল করছেন না। এটাই চার মাযহাবের ফজীলত যা আহলে হাদীসরা অস্বীকার করার চেষ্টা করে। হানাফী মাযহাবের একজন যোগ্যতা সম্পন্ন আলেম যদি দলীল প্রমাণের উপর চিন্তা গবেষণা করে ইমাম আবু হানীফার কোনো মতের বিরুদ্ধে যায় তবে তিনি আর হানাফী থাকতে পারেন না এমন নয়। রুদ্দুল মুহতারে বলা হয়েছে,
যখন কোনো হাদীস সহীহ প্রমানিত হয় এবং সেটা হানাফী মাযহাবের বিরুদ্ধে যায় তবে হাদীস অনুযায়ী আমল করতে হবে আর এটাই ইমাম আবু হানীফার মাযহাব বলে গন্য হবে। যারা হানাফী মাযহাব অনুসরণ করেন তারা উক্ত হাদীসের উপর আমল করার কারণে হানাফী মাযহাব থেকে বের হয়ে যাবেন না। কেননা ইমাম আবু হানীফা হতে বির্ণত আছে যে তিনি বলেছেন “যখন কোনো হাদীস সহীহ প্রমাণিত হয় তবে সেটিই আমার মাযহাব”। (রুদ্দুল মহতার)
সুতরাং হানাফী মাযহাব অনুসরণ করা অর্ত কোরআন হাদীস পরিত্যাগ করে ইমাম আবু হানীফার মত মেনে চলা নয় বরং এর অর্থ হলো শত-সহস্র অভিজ্ঞ আলেম ওলামার জ্ঞানের ছায়ায় অবস্থান করে কোরআন হাদীস সঠিকভাবে বোঝার চেষ্টা করা। অন্যান্য মাযহাবের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
মাজহাবকে অন্ধ অনুসরন করা