ভবিষ্যতে কাফির হওয়ার ইচ্ছা – নিজের জন্য অতীতে বা ভবিষ্যতে কাফির অবস্থা কামনা করা কুফরী – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর
ভবিষ্যতে কাফির অবস্থা কামনা নিজের জন্য অতীতে বা ভবিষ্যতে কাফির অবস্থা কামনা করা কুফরী #শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মূনীর# এর গবেষণা মূলক প্রবন্ধটি পড়ুন এবং আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন
ইমাম নাব্বী রঃ বলেন,
যদি কেউ দীর্ঘদিন যাবৎ যন্ত্রনাদায়ক রোগে ভোগে এবং বিরক্ত হয় বলে, হে আল্লাহ তুমি আমার মৃত্যু দাও তা কাফির অবস্থায় হোক বা মুসলিম অবস্থায়। (আর-রাওদা)
এই মাসয়ালাটি উল্লেখের পর ইবনে হাযার হাইতামী রঃ বলেন,
এটা কাফির হওয়ার কারণ যা আমার পূর্বে বলেছে যে, কুফরী কামণা করা বা কুফরীর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করাও কুফরী। (আল-ই’লাম)
ফতোয়ায়ে আলমগীরীতে বলা হয়েছে, যদি কোনো খৃষ্টান মুসলিম হয় পরে তার বাবা মারা যায় আর সে বলে, হায়! যদি আমি এখন মুসলিম না হতাম তাহলে আমার বাবার সম্পদ পেতাম তবে সে কাফির হবে।
অনেকে এই বিষয়টির উপর আপত্তি উত্থাপন করে উসামা ইবনে যায়েদের একটি ঘটনা উল্লেখ করতে পারে। সহীহ্ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে উসামা ইবনে যায়েদ যুদ্ধের ময়দানে একবার একজন কাফিরকে হাতের নাগালে পেয়ে গেলে সে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ উচ্চারণ করে। উসামা রঃ মনে করেন এই ব্যক্তি মৃত্যুর ভয়ে লোক দেখানোর জন্য কালেমা পাঠ করেছে। ফলে তিনি তাকে হত্যা করে ফেলেন। পরে রসুলুল্লাহ সাঃ এই ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হয়ে তাকে ভীষণভাবে তিরস্কার করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ এভাবে আমাকে বারবার তিরস্কার করতে থাকলেন এমন কি আমার মনে হলো যদি আমি আজকের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ না করতাম! (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
ইসলাম গ্রহণ করলে পূর্বের সকল পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। ইসামা রাঃ যখন বুঝলেন তিনি মারাত্মক অপরাধ করেছেন তখন আখিরাতে উক্ত অপরাধের কারণে যাতে পাকড়াও না হতে হয় সে উদ্দেশ্যে তিনি ইচ্ছা করেছিলেন যদি তার ইসলাম গ্রহণ এই ঘটনার পরে হতো তবে ইসলাম গ্রহণের কারণে তা ক্ষমা হয়ে যেতো।
যে ব্যক্তি মুসলিম হওয়ার পর তার বাবা কাফির অবস্থায় মারা যায় এবং মুসলিম কাফিরের ওয়ারিশ হয় না আর কাফিরও মুসলিমের ওয়ারিশ হয় না ইসলামের এই নীতি অনুযায়ী উক্ত ব্যক্তি তার পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়। তার অন্যান্য (কাফির) ভায়েরা তার পিতার সম্পত্তির অংশ পায়। এটা দেখে সে বলে, “যদি আমি আজ পর্যন্ত থাকতাম তবে আমার পিতার সম্পত্তির অংশ পেতাম”। এই ব্যক্তিকে কাফির বলা সম্পর্কে ইমাম নাব্বী রঃ বলেন, “এটা ব্যাখ্যা স্বাপেক্ষ্য” এরপর তিনি উসামা রঃ এর ঘটনাটি উল্লেখ করেন এবং শেষে বলেন, তবে উভয় ঘটনার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। (আর-রাওদা)
ইবনে হাযার হাইতামী ইমাম নাব্বীর উপরোক্ত মন্ত্যটি উল্লেখ করার পর বলেন,
ইমাম নাব্বী শেষে উভয় ঘটনার মধ্যে যে পার্থক্যের দিকে উঙ্গিত করেছেন সেটিই স্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য। যেহেতু ঐ ঘটনাতে দেখা গেছে দুনিয়াবী ফায়দা হাসীলের জন্য কাফির অবস্থায় থাকার ইচ্ছা করা হয়েছে কিন্তু উসামা রাঃ তো কাফির হতে চান নি বরং এতটুকু ইচ্ছা করেছেন যে যদি তিনি আজকের পূর্বে মসলিম না হতেন তবে হয়তো এই ব্যক্তিকে হত্যা করার মতো মরাত্মক অপরাধ করতেন না যেহেতু সে ক্ষেত্রে তিনি উক্ত ্যিক্তির সাথে লড়াই করতেন না। অথবা তিনি উদ্দেশ্য করেছেন যদি তিনি আজ ইসলাম গ্রহণ করতেন তাহলে ইসলাম গ্রহণের কারণে (অন্যান্য পাপের সাথে) তার এই মহা-পাপটি ক্ষমা হয়ে যেতো (যেহেতু ইসলাম গ্রহণ করলে সকল পাপ ক্ষমা হয়ে যায়)। এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, তিনি কাফির হতে চান নি কাফির হওয়ার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেন নি। (আল-ই’লাম) অতএব, ওলামায়ে কিরামের নিকট গ্রহণযোগ্য মত হলো কিছু দুনিয়াবী মাল-সম্পদ বা মান-মর্যাদার লোভে, রোগ-ব্যধি কষ্ট যন্ত্রণা ইত্যাদি হতে মুক্তি পাওয়ার ইচ্ছায় অতীত, অর্তমান বা ভবিষ্যৎ যে কোনো সময় কাফির হওয়া বা কাফির অবস্থায় থাকার আকাঙ্খা প্রকাশ করলে সে তৎক্ষনাৎ কাফিরে পরিনত হবে। ওসামা রাঃ এর ঘটনা এ মতের বিরুদ্ধে নয় যেহেতু তিনি কুফরী কামনা করেন নি বরং ইসলাম গ্রহণ করে সকল পাপ মোচন করতে চেয়েছিলেন।
ভবিষ্যতে কাফির অবস্থা কামনা নিজের জন্য অতীতে বা ভবিষ্যতে কাফির অবস্থা কামনা করা কুফরী #শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মূনীর# এর গবেষণা মূলক প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না।