ব্যাকরনিক নিয়মাবলী – শব্দের অর্থ নির্ণয় সংক্রান্ত সমস্যা – Shayekh Abdullah Al Munir
ব্যাকরনিক নিয়মাবলী – শব্দের অর্থ নির্ণয় সংক্রান্ত সমস্যা – Shayekh Abdullah Al Munir শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর মাজহাব বনাম আহলে হাদীস নামক গ্রন্থ হতে সংকলিত
শব্দের অর্থ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আরবী ব্যাকারণের নিয়মকানুনের উপরও বহু বিষয় নির্ভর করে। সূরা মায়েদার ৬নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সলাত পড়ার পূর্বে ওযূ করার আদেশ দিয়েছেন। সেখানে (وارجلكم ) শব্দটির দুটি কিরাত রয়েছে। কেউ পড়েছেন যবর দিয়ে কেউ পড়েছেন জের দিয়ে। দুটি কিরাতের কারণে আয়াতটির দুরকম অর্থ হয়। যবর দিয়ে পড়লে পা ধৌত করতে হবে এমন অর্থ হয় আর যের দিয়ে পড়লে পা মাসেহ করতে হবে এমন অর্থ হয়। একারণে এ বিষয়ে সামান্য দ্বিমত আছে। তবে জমহুর ওলামায়ে কিরামের মতে পা ধৌত করতে হবে। এভাবে নাহু (النحو ), সরফ (صرف ), বালাগাত (بلاغة ) ইত্যাদি নিয়মাবলীল উপর নির্ভর করে অনেক সময় মতপার্থক্য হয়। আরবী ভাষা ব্যবহারের নিয়মাবলিতে যথেষ্ট সুক্ষতা রয়েছে এমনকি আরবী ভাষাভাষীদের বেশিরভাগই ব্যাকারনিক নিয়ম কানুনের উপর দক্ষ নয়। ইবনে কাছীর বর্ণনা করেন,
আব্দুল আজীজ নাম একজন খলীফার নিকট এক ব্যাক্তি তার জামাতা সম্পর্কে অভিযোগ নিয়ে আসলে তিনি বলেন, তোমার খাতনা করিয়েছে কে?
এই অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন শুনে অভিযোগকারীর চোখ কপালে উঠে যায়। অবাক হয়ে বলে, আমার খাতনা সেই ব্যাক্তি করিয়েছে যে অন্য সব মানুষের খাতনা করায়।
উত্তর শুনে খলীফাও অবাক হন। তিনি আসলে এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে চান নি। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন “তোমার জামাতা কে?” কিন্তু সেটা করতে হলে তাকে ( َكѧُنَتَخ ) “খাতানুকা” বলতে হতো কিন্তু তিনি বলেছেন ( َكѧَنَتَخ ) “খাতানাকা”। এই ছোট ভুলটির কারণে এতোবড় বিভ্রাট সৃষ্টি হয়েছে।
এরপর তিনি এক সপ্তাহ্ ঘর হতে বাইরে বের হননি। বাড়িতে অবস্থান করে আরবী ব্যকরণ শিক্ষা করছিলেন। এক সপ্তাহ পর যখন বাইরে বের হলেন দেখা গেলো তিনি সর্বাপেক্ষা শুদ্ধ আরবী ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছেন। এরপর যে কেউ শুদ্ধ আরবীতে কথা বলতো তিনি তাকে অধিক ভাতা প্রদান করতেন আর যে ভুল করতো তার ভাতা কমিয়ে দিতেন। এই ঘটনার পর একজন ব্যক্তি তার নিকট গমণ করলে তিনি তাকে প্রশ্ন করেন, তুমি কোন বংশের লোক?
উক্ত ব্যক্তি বলে, আব্দুদ দার গোত্রের।
এই ব্যক্তির বলা উচিৎ ছিল “মিন বানী আব্দিদ দার” কিন্তু সে বললো “মিন বানু আব্দিদ দার”। এই ভুলের কারণে খলীফা তার ভাতা এক’শ দীনার কমিয়ে দেন। (আল-বিদাইয়া ওয়ান-নিহাইয়া)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ মুশরিকদের থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তার রসুলও। (সূরা তাওবা-৩)
একজন কারী এই আয়াতটির রসুল শব্দের লামের উপর জের দিয়ে পড়ছিলো। এর ফলে আয়াতটির অর্থ দাড়াচ্ছিল “আল্লাহ মুশরিকদের থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তার রসূল থেকেও(নাউযু বিল্লাহ)। একজন আরব বেদুইন এই তিলাওয়াত শুনে বলল, যদি আল্লাহ তার রসুল হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকেন তবে আমিও তার থেকে বিচ্ছিন্ন।
ঐ ব্যক্তির এই কথা শুনে উক্ত তেলাওয়াতকারী তার চাদর পেচিয়ে ধরে তাকে উমর রাঃ এর নিকট হাজির করলো। উক্ত ব্যক্তি তাকে সব খুলে বললো। উমর রাঃ ঘটনা বুঝতে পেরে সবাইকে আরবী ভাষার নিয়মকানুন শিক্ষা করার আদেশ দেন। (নাজমুদ্দুরার, কাশশাফ ইত্যাদি তাফসীর গ্রন্থ) সুতরাং কোরআন-হাদীস সঠিকভাবে বুঝতে হলে আরবীভাষার ব্যকরণের উপর দক্ষ হওয়া ভীষণ জরুরী বিষয়।
ব্যাকরনিক নিয়মাবলী ব্যাকরনিক নিয়মাবলী