পরকালের পথে যাত্রা পর্ব-১৯। জান্নাতী বনাম জাহান্নামী। অডিও সিরিজ ডাউনলোড করুন
জান্নাতিরা যখন অনেক সময় ধরে জান্নাতে থাকবে তখন এই ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হবে। সে কোন রকমে জাহান্নাম থেকে বের হয়েছে, তার এত বেশি পাপ ছিল যে সে জাহান্নামে অনেক অনেক দীর্ঘ সময় যাবৎ ছিল। একেবারে শেষে আল্লাহ (সুব) তাকে জাহান্নাম ত্যাগ করার অনুমতি দিবেন, এই ব্যক্তিটি জাহান্নামে অনেকদিন আযাব ভোগ করার পর জাহান্নাম থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বের হবে, এবং সে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করবে। সে এখনও জান্নাতে প্রবেশ করে নি। সে জাহান্নাম থেকে বের হওয়াতেই অনেক খুশি, যদিও সে জান্নাত বা জাহান্নাম কোথাও নেই। তারপরও সে অনেক খুশি।
কিন্তু যেহেতু আমরা মানুষ, তাই আমরা লোভি। আমরা সব সময়ই যা আছে তার চেয়ে বেশি চাই। তারপর এই ব্যক্তি্কে দূর দিগন্তে আল্লাহ (সুব) একটি গাছ দেখাবেন। এই ব্যক্তিটি যে স্থানে ছিল ওই স্থানটা পতিত ভুমি যেখানে কিছুই জন্মায় না। স্থানটা জাহান্নামের খুবই কাছাকাছি তাই জাহান্নামের তাপ এই ভুমিকে ধংস করে দিয়েছে, যদিও এটা জাহান্নামের কোন অংশ নয়। আল্লাহ (সুব) এ স্থান থেকে কিছু দূরে একটি গাছ দেখাবেন।
যদিও এই লোকটি জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানের স্থানে ভালই ছিল, তারপরও এই গাছ দেখে আল্লাহ (সুব) কে বলবে ‘ও আল্লাহ আপনি কি আমাকে দয়া করে ওই গাছের নিচে যেতে দিবেন ? যাতে আমি এ গাছের ছায়ায় থাকতে পারি, আর এর থেকে ফল খেতে পারি, আর এ গাছকে যে পানি দিয়ে সেচ দেয়া হয়েছে ওই পানি পান করতে পারি। তখন আল্লাহ (সুব) তাকে গাছের নিচে যাবার অনুমতি দিবেন।
তারপর আল্লাহ (সুব) তাকে আরেকটি গাছ দ্বারা প্রলুব্ধ করবেন, যা এর চেয়েও বড় এবং দেখতেও অনেক সুন্দর। এই গাছ দেখেও ব্যক্তিটি আল্লাহকে বলবে, ‘ও আল্লাহ আপনি কি দয়া করে আমাকে এই গাছের নিচে যেতে দিবেন ? তখন আল্লাহ (সুব) বলবেন ‘ও আদম সন্তান কি তোমাকে সন্তুষ্ট করবে ? যদি আমি তোমাকে কিছু দেই তাহলে তুমি তার চেয়েও বেশি চাও। ব্যক্তিটি বলবে, ও আল্লাহ আমি আর কিছুই চাই না, ওই গাছই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি আপনাকে আর কোন কিছুর জন্যই বলবনা।
তখন আল্লাহ (সুব) তাকে ঐখানে যাবার অনুমতি দিবেন এবং লোকটি ওই গাছের নিচে যাবে। এরপর লোকটি আরও বড় একটা গাছ দেখতে পাবে, যখনই সে এরকম গাছ দেখতে পাবে তখনই সে বলবে, ‘ও আল্লাহ দয়া করে আমাকে ওই গাছের নিচে যেতে দিন ? তখন আল্লাহ (সুব) বলবেন, ‘“তুমি কি আমাকে বলনি যে তুমি আর কিছু চাইবে না? ও আদম সন্তান তুমি কিসে সন্তুষ্ট হবে? ব্যক্তিটি বলবে ও আল্লাহ, আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আমি আর কিছুই চাইবো না। শুধুমাত্র ওই গাছটার নিচে যেতে চাই।
আল্লাহ (সুব) তাকে ওই গাছের নিচে যাবার অনুমতি দিবেন। ধীরে ধীরে গাছ আরও বড় ও সুন্দর হচ্ছে কারন আমরা ধীরে ধীরে জান্নাতের দিকে যাচ্ছি এবং জাহান্নাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এর কারণ হচ্ছে, জাহান্নাম পরিবেশের জন্য দুর্যোগের মত, আমরা আগেই বলেছি, যদি এক ফোটা যাক্কুম পৃথিবীতে পড়ে তাহলে পৃথিবীতে মহামারী ঘটবে।
রাসুলুল্লাহ সা. বলছেন, “যদি যক্কুমের একফোটা এই পৃথিবীতে পড়ে তাহলে এই ফোটা পৃথিবীর সকল কিছুকেই বিষাক্ত করে ফেলবে”
তাই বলা যায় জাহান্নামের কাছাকাছি এই পতিত জমি জাহান্নামের কারনে একেবারেই অনুর্বর। কিন্তু এখন আমরা জান্নাতের কাছাকাছি যাচ্ছি, তাই গাছও বড় এবং সুন্দর হচ্ছে।
তো যখন লোকটি আরও বড় গাছের নিচে যাবে, সে কি দেখতে পাবে? সে তার চোখের সামনে জান্নাতের দরজা দেখতে পাবে। কিছুদুরেই সে জান্নাতের গেট দেখতে পাবে। এখন কোনভাবেই সে নিজেকে ধরে রাখতে পারবে না। সে বলবে ‘ও আল্লাহ যদিও আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, তারপরও দয়া করে আমাকে জান্নাতের দেয়ালের নিচে বসার অনুমতি দাও। আমি জান্নাতে যেতে চাইনা আমি শুধুমাত্র জান্নাতের দরজার কাছাকাছি থাকতে চাই। তখন আল্লাহ (সুব) বলবেন, ও আদম সন্তান তুমি বার বার আমার কাছে চাচ্ছ আর প্রতিজ্ঞা করছো, যে তুমি আর কিছু চাইবে না, আর আমি বার বার তোমাকে দিয়েই যাচ্ছি, তুমি কি আর কিছু চাও? লোকটি বলবে ও আল্লাহ আমি আর কিছু চাই না, এটাই আমার শেষ চাওয়া। আমাকে শুধু জান্নাতের দরজার নিচে থাকতে দাও। এখন লোকটি জান্নাতের দেয়ালের নিচে থাকতে যাবে। যখন সে সেখানে যাবে তখন সে জান্নাতের লোকদের কথার আওয়াজ শুনতে পাবে, সে জান্নাতিদের হাসি, কথাবার্তা শুনবে এবং সে মনে মনে হিংসা অনুভব করবে। সে জান্নাতের আনন্দের এ শব্দ শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারবে না, তখন সে বলবে, ও আল্লাহ আমাকে শুধু গেটের ভিতরে ঢুকতে দাও।
আল্লাহ (সুব) বলবেন, হে আদম সন্তান, তোমাকে কিসে আনন্দ দিবে ? যদি আমি তোমাকে সম্পুর্ণ পৃথিবী এবং এর মধ্যে যা আছে সব সম্পদ দেই তাহলে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? এই লোকটি প্রত্যেকবারই আরও বেশি আরো বেশি চাচ্ছে। তাই আল্লাহ (সুব) বলছেন আমি যদি তোমাকে এই পৃথিবী এবং এর মধ্যে যা আছে সম্পুর্ণ তোমাকে জান্নাতের মধ্যে দেই তাহলে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে ও আল্লাহ হ্যা, আমি সন্তুষ্ট হব। তখন আল্লাহ (সুব) বলবেন আমি তোমাকে এটা দিব, এরকম আরেকটা দিব, এরকম আরেকটা দিব, এরকম আরেকটা দিব, আল্লাহ একে বার বার গুন করবেন যতক্ষন না পর্যন্ত আল্লাহ (সুব) পৃথিবী এ এর মধ্যে যা আছে তাকে ৫ বার গুন না করবেন। লোকটি আল্লাহ (সুব) কে বলবে, ও আল্লাহ ও আল্লাহ যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে, আমি সন্তুষ্ট, আমি সন্তুষ্ট। আল্লাহ (সুব) বলতেই থাকবেন, আর লোকটি বলতে থাকবে ও আল্লাহ এতটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট, ও আল্লাহ এতটুকুই যথেষ্ট। আল্লাহ (সুব) বলবেন আমি একে আরও ১০ গুন করব, তারপর এর বাইরেও আমি তোমাকে দিব যা তোমার চোখকে আনন্দিত করবে আর তোমার মনকে সন্তুষ্ট করবে।