কাফিরদের কুফরী কাজে সহযোগিতা করা শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর প্রবন্ধ
কাফিরদের কুফরী কাজে সহযোগিতা করা #শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর# এর প্রবন্ধটি পড়ুন এবং শেয়ার করুন।
যে কোন কুফরী কাজে কাউকে যে কোনোভাবে সহযোগিতা করা কুফরী।
রুদ্দুল মুহতারে ইমাম কারাফী রঃ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে,
যে সকল গীর্জা ধ্বংসপ্রপ্ত হয় সেগুলো পুননির্মাণ করা যাবে না। যে ব্যক্তি ওগুলো পুননির্মানে সহযোগিতা করবে সে কুফরীর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করছে বলে গণ্য হবে আর কুফরীর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করা কুফরী।
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি শাস্তি হবে তাদের যারা চিত্র বা মূর্তি নির্মাণ করে। (সহীহ্ মুখারী) এখানে প্রশ্ন হতে পারে কাফিরদের সর্বাপেক্ষা অধিক শাস্তি দেওয়া হবে বলে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু হাদীসে বলা হচ্ছে চিত্রকরদের সর্বাপেক্ষা ভয়ংকর শাস্তি দেওয়া হবে এর মধ্যে সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্য উমাম ইবনে জারীর তাবারী রঃ বলেন,
এই হাদীসে তাদের কথা বলা হচ্ছে যারা আল্লাহর পরিবর্তে যার উপসনা করা হয় এমন মূর্তি বা চিত্র নির্মাণ করে। কারণ যে স্বেচ্ছায় জেনে-শুনে এমন চিত্র বা মূর্তি নির্মাণ করে যার উপসনা করা হবে সে কাফির হয়ে যায়। (ফাতহুল বারী ও উমদাতুল কারী)
বর্তমানে এমন লোক পাওয়া যায় যারা নিজেদের প্রগতিশীল ও উদারপন্থী প্রমাণ করার জন্য কাফিরদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে যোগদান করে। তাদের কেউ কেউ কাফিরদের বিভিন্ন শিরক-কুফরে সরাসরি সহযোগিতা প্রদান করে। কাফিরদের মন্দির, মঠ বা গীর্জা নির্মাণে আর্থিক বা শারিরীকভাবে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি তো বর্তমানে ফ্যাশানে পরিনত হয়েছে। কয়েক বছর পূর্বে একটি সংবাদপত্রে সর্বাপেক্ষা আশ্চর্যজনক খবরটি পড়েছিলাম। একজন মুসলিম নামধারী যুবক হিন্দুদের দূর্গাপূজা উপলক্ষ্যে মূর্তি নির্মাণ করেছিল। তার যুক্তি ছিল, আমার পেশা মূর্তি নির্মাণ করা আমি তাই করেছি, আমি তো মূর্তির পূজা করছি না। তখন রমজান মাস ছিল। সে এও দাবী করেছিল যে, আমি রোজা পালন করি। এর অর্থ, আমি পূজা করার জন্য মুশরিকদের মূর্তি নির্মাণ করে দিলেও আমি একজন ভাল মুসলিম। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে সাধারনভাবে মূর্তি নির্মাণ বা চিত্র অংকন হারাম আর যেসব মূর্তি বা চিত্রের ইবাদত করা হয় সেগুলো নির্মাণ করা কুফরী যেমনটি আমরা পূর্বে বলেছি।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নেতাদের বদ অভ্যাস হলো, সব ধর্মের লোকদের ভোট নিশ্চিত করার জন্য তাদের নিকট ধরনা দেওয়া। ক্ষেত্র বিশেষে তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া বা তাদের মন্দির, গীর্জা, মঠ ইত্যাদি উপাসনালয় বিনির্মাণে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। নিজেকে আলেম দাবী করে বা সাধারন মানুষ তাকে আলেম মনে করে এমন কিছু দাড়ি-টুপি ওয়ালা ইসলামপন্থী নেতাও এধরণের ঈমান বিধ্বংশী কর্মকান্ডে লিপ্ত। তাদের যুক্তি হলো, হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ, মুসলমান সর্বশ্রেনীর জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। অতএব, তাদের সবার স্বার্থে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। এরা আরো বলে, একজন নেতা সকল ধর্মের লোকদের নেতা এবং একজন রাজা সকল ধর্মের লোকদের রাজা অতএব তিনি সকল ধর্মের লোকদের সমান দৃষ্টিতে দেখবেন।
তাদের এই সকল যুক্তির সুস্পষ্ট জবাব হলো, ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনবিধান। সকল স্তর এবং সকল পেশার লোকেরা ইসলামী বিধান মেনে চলতে বাধ্য। কেউ বলবে, আমার পেশা মূর্তি নির্মাণ করা অতএব, আমি মূর্তি নির্মাণ করলে কোনো ক্ষতি নেই। আরেকজন বলবে, আমার পেশা পতীতাবৃত্তি অতএব, জেনা-ব্যাভিচার আমার জন্য দোষনীয় নয়। আবার অন্য আরেকজন বলবে, আমি রাজনৈতিক নেতা জাত-পাত দেখতে গেলে আমার চলবে না। ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে এসব যুক্তি প্রমাণ ধার্তব্য নয়। দল-মত শ্রেণী-সংঘ নির্বিশেষে সকলেই নিজ নিজ স্থানে ইসলামী বিধানের আনুগত্য করতে বাধ্য। রাসুলুল্লাহ সাঃ নিজে এবং তারপর তার অনুসারী সত্যপন্থী খোলাফায়ে রাশেদা দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। তাদের অধীনে একদিকে মুসলিম প্রজারা ছিল অপর দিকে অমুসলিম জিম্মীরাও ছিল। পূর্বে জিজিয়া সম্পর্কিত আলোচনাতে আমরা স্পষ্ট করে দেখিয়েছি যে, তারা মুসলিম ও অমুসলিমদের মাঝে সমতা বন্টন করেন নি। ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের প্রকাশ্যে ধর্মপালনের স্বাধীনতাও দেওয়া হয়নি। তাদের ধর্ম স্বাধীনভাবে প্রচার করার অধিকারও তারা পায়নি। উমর ইবনে খাত্তাব রাঃ শামের খৃষ্টানদের নিকট শর্ত করেছিলেন, তারা নতুন কোনো গীর্জা নির্মাণ করতে পারবে না। ইবনে কাছীর সূরা তাওবার ২৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় এই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। যেখানে তারা নিজেরাই কোনো গীর্জা নির্মাণ করতে পারবে না সেখানে রাষ্ট্রপ্রধান নিজ তত্ত্বাবধায়নে তাদের গীর্জা নির্মাণ করে দেবেন এটা কেমন হতে পারে! একারণে ওলামায়ে কিরাম স্পষ্ট করে বলেন,
যে সকল গীর্জা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় সেগুলো পুননির্মাণ করা যাবে না। সে ব্যক্তি ওগুলো পুননির্মান সহযোগিতা করবে সে কুফরীর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করছে বলে গণ্য হবে আর কুফরীর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করা কুফরী। (রুদ্দুল মুহতার) সুতরাং পেশা, রাজনীতি বা রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডের অজুহাতে বিধর্মীদের ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রদান করার মাধ্যমে পূজা-উপাসনা ও শিরক-কুফরের আড্ডাখানা নির্মাণ করা শিরক-কুফরীতে সহযোগিতা করা তথা স্পষ্ট কুফরী হিসাবে গণ্য।
কাফিরদের কুফরী কাজে সহযোগিতা করা শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে অবশ্যই আপনার বন্ধদের মাঝে শেয়ার করবেন।