কবিতায় জান্নাত – ইসলামীক কবিতা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর
কবিতায় জান্নাত -ইসলামীক কবিতা-শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর
হাশরের ময়দানে হিসাবের পরে
পাখা ওয়ালা সাদা উটে চড়ে
উড়ে যাবে নিজ ঠিকানায়।
দৃষ্টির আয়নায়, বহু দূরে…,
নদীর তীরে, দৃশ্য হবে এক স্বপ্নপুরী।
মনোহরী আলোতে নূর চমকিত
ঝুলন্ত ফলে অবনত গাছের সারি।
তারি নিচে লালচে গালিচা বিছায়িত।
গাঠ হতে নির্গত হবে ঝরণা ধারা।
জীবন সঞ্জীবনী সুপেয় সুরা
ঝরা পাতার মতো পবিত্র করে প্রাণ।
প্রশান্ত হবে মন মুখ হবে অম্লান।
আসমান ছুয়ে যাওয়া সোনালী প্রাসাদ।
নিখাদ সোনা-রোপার পোক্ত বুনিয়াদ।
যখনই সে দারে নাড়ে কড়া
মনোহরা হুর হয় আনন্দে দিশেহারা।
ত্বরা করে আসে দারে, বরণ করে বর।
অশ্রু জলে, সুর তুলে বলে,
তোমার অপেক্ষায়, কত বছর হয়েছে পার!
ছড়ানো মুক্তার মতো বালকেরা,
মনিবের আগমনে আনেন্দে মাতোয়ারা।
একঝাক পায়রার মতো তাকে ঘিরে,
গান গায় ঘুরে ঘুরে।
উপর থেকে নিচে, দৃষ্টি মেলে দেখে
নিজেকে হারায় এক অনাবিল সুখে।
স্বর্ণখচিত শাহী আসনে হেলে
অশ্রু জলে শিক্ত হয়ে বলে,
“প্রশংসিত সেই সুমহান রব
সব নিয়ামত যার দান
জ্ঞানের আলোতে পথ না দেখালে,
নিতলে হারাতো এই সুউচ্চ সম্মান।”
ঝর্ণার বরফ শিতল পানিতে
অমৃতের মায়াবী স্বাদ।
মদ, মধু আর দুধের ধারায়
প্রবাহিত হবে নদ।
বিবাদ রবে না কারো সাথে সেথা,
অসার কথা না শুনি।
চারদিকে শুধু সালাম, সালাম।
চিরো শান্তির বাণী।
গাছের সবুজ পাতায় হলূদ রঙ্গের ফুল
বাহারী ফলে শোভিত শাখা
পাখা মেলে উড়ে যায় বিহঙ্গকুল।
নির্ভুল ুতুলিতে আঁকা অদেখা ভুবন।
অসহন রবে না কোনো, সুখের জীবন।
পাহাড়ী ঝর্ণার নির্মল জল
ছলছল বয়ে চলা স্রোতসিনী নদী
কাদি-কাদি ঝুলন্ত ফল
বাতাসে ফুলের সুগন্ধি
পুষ্পিত কোমল কাননে
সারি সারি আসনে এলায়িত বধু
তার মধুময় প্রেয়সী মনে,
আমাকেই স্বপ্ন দেখে শুধু।
সময় সেখানে চাঁদনী প্রভাত।
রাত নেই, আধার অনাগত।
দুঃখ-শোকের ভয়াল আঘাত,
সেখানে নেই, মৃত্যু সেখানে মৃত।
অগনিত বৃক্ষরাজির প্রশস্ত ছায়ায়,
সুরেলা কন্ঠের বালিকারা গাইবে গান
“স্থায়ী এ জীবন; তার ক্ষয় নাই।
অম্লান বদন আর, প্রসন্ন প্রাণ।
সম্মান পেয়েছে যারা নেককার যুবক
মোরা সবে তাদেরই প্রেমের সেবক।”
তারি মাঝে, বধু সাজে এক জনা,
অতি মনরোমা, সুন্দরতমা।
বুকেতে লেখা তার, ওগো প্রিয়জনা,
তুমি প্রেম আমার, আমি তোমার প্রেমা।
তোমাতে সপেছি প্রাণ চাই না কিছু আর
তুমি ছাড়া এ ভুবন নিশিত-আধার।
সঙ্গিতের তালে, গাছের ডালে শিহরন জাগে
মানবীয় আবেগে জড় কাঠ গেয়ে ওঠে গান
সেই সুমধুর তান আর সুর উপভোগে
আবেগে শীতল হয় যুবক প্রাণ।
শতশত অনুগত অবুঝ বালকেরা,
মদ ভরা পেয়ালা থেকে
বর-বধুকে ঢেলে দেবে সঞ্জিবনী সূরা
তাতে নেই পীড়া বুদ্ধি যায় না বেকে।
নদীর দু’পাড়ে দীর্ঘ পথ ধরে
পেতে রাখা আসনের পরে
সারি সারি হুরদের মেলা
খোলা চুল বিছিয়ে এক-রাশ
তারা বসে আছে সারা বেলা
যদি হয় মোর অবকাশ।
সমুদ্রের সুরোভিত বাতাস
আকাশ নীলাভ আলোতে নীল
স্বপ্নীল প্রকৃতি, সোনালী সবুঝ ঘাস।
সুখের আবাস সেথা, অনন্ত অনাবিল।
শত শত প্লেটে সাজানো খাবার,
বারবার পেশ করা হবে সেবকের হাতে
সাথে সুপেয় পানীয় যেনো অমিয় সুধা।
বাঁধা নেই কোনো কিছু পেতে।
নিকুঞ্জবনে, মালাইকাগণে,
গেয়ে যায় সুমধুর তানে-
এ ভুবনে স্থায়ী সবে।
রোগ-শোক নাহি রবে।
এখানে অফুরণ যৌবন,
সদা তুষ্ট রবে মন।
পাখা মেলা ঘোড়ায় চড়ে
আকাশে উড়ে আনন্দ ভ্রমন
যখন যেখানে খুশি, যতো দূরে..।
যেতে চাই কৌতুহলী মন
বাতাসে উড়ে আসা মিসকের কনা;
অজানা, শরীরে বুলিয়ে যাবে হাত।
হঠাৎ শিহরনে, মন হবে আনমনা।
কামনা বাসনা সব পূরা হবে নির্ঘাত
ভ্রমন শেষে, অজানা অচিন দেশে
বাসরের বেশে এক সুমতি স্বজন
বদন রাঙ্গিয়ে বলে, শুভ্র হেসে;
আমাকে কি নেই প্রয়োজন?
নির্জনে রমনীর ধ্বনী
শানিত তীরের মতো বিধে
কাধে মৃদু তাল; চোখে রক্তিম লাল চাহনী
এখনই মিলিত হওয়ার সাধে
অবাধে আমাকে ডাকে।
কে তুমি? হে মানব হরিণী।
ক্ষমা করো, চিনতে পারিনি।
সেই বাসরী বধু মধুমাখা মুখে
চিকমিকে রেশমী ওড়নাটি কাধে ফেলে
দুলে দুলে শোনাবে আমাকে,
তুমি গেছো কি ভুলে,
কোরআনে যা বলে?
“সমগ্র রজনী যারা বিছানা ছেড়ে
অঝড়ে ক্রন্দন করে মুক্তির তরে
কেউ না জানে তার প্রতিদানে
মনোহরী কি আছে সঙ্গোপনে।”
বিনোদন শেষে বাতাসে ভেসে
স্বদেশে ফিরে যাবে স্বপ্নের কুমার।
হাজার হাজার মজার বিনোদনে
আগমনে সময় হবে পার।
তার ফাকে, থেকে থেকে,
স্মৃতিতে স্মরে সেই বিরহ বধুকে।
সুদুর অতীতে প্রথম দেখার স্বাদে
বাকিটা সময় তার কাটে আহলাদে।
সেখানে থাকবেনা কষ্ট ক্লেশ
নিঃশেষ হবে বিষাদের ব্যাথা
কথা হবে শান্তির বাণী
নেই কোনো অসারতা।
মাথায় শোভিত রত্নের তাজ
গায়ে শতভাজ রেশমী পোশাক পরে
বাগিচার মাঝে স্বর্গীয় সাজে,
সদা বিচরন করে।
দু’ধারে তার হাজার হাজার
চাকর বাকর প্রজা।
পিছু নেয় কাতারে কাতার।
সোনা-রুপার শাহী মহলে
বিশ্রাম করে সুখাসনে হেলে
প্রাসাদের প্রধান ফটক থেকে
দু’সারি সেবক দাড়িয়ে থাকে।
আকাশের মালাইকা
ফল নিয়ে থোকা থোকা।
সালাম দিলে, দাড়িয়ে থাকে দারে।
অনুমতি চায় প্রবেশের তরে।
চুপিসারে বেশুমার রক্ষিগণে
খবর শোনায় কানে-কানে।
রাজনের অনুমতি হলে,
তার প্রবেশধিকার মেলে।
হাতের ইশারায়, ঝর্ণা বয়ে যায়।
নেমে আসে ফলে ভরা ডাল।
শুয়ে-বসে, সেভাবে চায় ছিড়ে নেয়,
শূন্য বোটায় তখনি গজায় ফল।
জলভরা পাত্র সচল হয়ে এগিয়ে আসে,
পান শেষে ফিরে যায় নিজ আবাসে।
মানসে খাবারের বাসনা হলে,
ডানা মেলে উড়ে আসে পাখি।
ভোনা মাংস হয়ে বলে,
আমি আরশের পাশে থাকি।
খাবার পর, ছুড়ে ফেলে তার হাড়
পাখি হয়ে তা উড়ে যায় আবার
নিভৃত কোনো সবুজ কাননে
স্বর্নে সাজানো রাজার আসনে হেলে,
ফেলে আসা স্মৃতির মায়া-জাল বোনে।
মনের পর্দায়, ভাসমান জলে
পাল-তুলে যায়, গহীন গহনে।
এক অচেনা হাতের কোমল ছোয়ায়।
ফিরে পায় চেতনা; বিশ্ময়ে চায়।
এক পুষ্পিত রমণী।
মুখে তার শান্তির বাণী।
মাথায় তার ঝলমলে তাজ।
রেশমী ভুষনে অপরুপ কারুকাজ।
চেহারার ত্বকে, নিজের ছবি দেখে।
তাকে বলে, তুমি কে, কোথা থেকে?
একে-বেকে দুলে, সে গেয়ে যায় গান,
বিধাতার আমি এক অতিরিক্ত দান।
বায়দাখ নামক নদীর তটে
গজিয়ে ওঠে ফুটফুটে সব বালিকা।
সখারা তাদের গায়ে দুহাত বুলিয়ে,
বেছে নেয় পছন্দের প্রেমিকা।
শত শত ফুটন্ত ফুলপরী,
মূর্তিমান দাড়িয়ে থাকে সারি সারি।
তারি মাঝে যাকে মনে ধরে,
হাত রাখে তার কব্জির পরে।
মায়াবী মূর্তি প্রাণ ফিরে পায়।
বরের পিছু যায় বাসরায়।
সেই শূন্যতায় সৃষ্টি হয় নতুন কুড়ি
জীবনের অপেক্ষায় অগনিত ফুলপরী।
হে যুবক প্রাণ,
কান দিয়ে শোনো হুরদের কথা।
সেথা হও কুরবান।
চুল তার আধার কালো
হীরক আলো দাত।
প্রভাত রাঙ্গা শুভ্র বদন
চিকন শাখার হাত।
ভুষণে বাসর বধু
মধুমাখা রসন
নয়নে প্রেমের তীর
রমনে তৃপ্ত করে মন।
অক্ষিযুগোল তার পাগল করা।
উন্নিত বক্ষে সরস সুরা।
ক্রজোড়া, তুলি দিয়ে আকা।
বাকা ঠোট যেনো দুফালি চাঁদ।
অগাধ প্রেমের সাদ লজ্জায় ঢাকা।
স্বামীকে দেখার পর ভেঙ্গে দেয় বাঁধ।
রঙ্গিন ললনা তারা জান্নাতী নারী
সারি সারি তাবুতে বন্দিনী পরী।
হরীনী চোখ তার চির অবনত
স্বামীর সেবায় সদা নিবেদিত।
লোমহীন ত্বকের স্বচ্ছতায়
হাড়ের মজ্জা দেখা যায়।
অতিশয় লাবণ্যময় চিকন কটিদেশ
পরনে রেশমের সুশোভিত বেশ।
শরীরের ঘামে মিসকের সুরোভী
উদরের শুব্র ত্বকে কুঞ্চিত নাভি।
তার চেয়ে নিচে,
অবাক তথ্য আছে।
তাতে নেই হায়েজ নেফাস।
আছে শুধু বাসনা বিলাস।
দীর্ঘ রমনে হয়না ব্যাথুর
মর্তের নারী এ থেকে সুদুর।
রক্তে গন্ধে কুলুশিত তার দেহ।
শরীরে নির্গত হয় দুষিত পানি।
চাহনীতে তার অন্যের মোহ।
স্বামীকে শোনায় শুধু নিন্দার বাণী।
এখনি পরখ করো দুটি মন মাঝে
খুঁজে নাও বধু মধুমনি
রবের স্বরণ করো সকাল-সাঝে
পেতে চাও যদি স্বর্গের রানী।
এমটি মনরোম বাজারে,
হাজারে হাজারে যুবকের আগমন।
অগণন বিপনীতে ঘুরে-ফিরে,
বিনা দরে ক্রয় করে যা চায় মন।
সেথা অঙ্কিত রবে বহু সুদৃশ্য ছবি।
মায়াবী রুপের সব মানব-মানবী।
ইচ্ছা মতো সেই ছবির সাজে
নিজেকে সাজিয়ে নেবে সকাল-সাঝে।
আকাশে ওড়া মেঘের ছায়ায়
বর্ষিত হবে মন যা চায়।
পূবালী হাওয়ার শীতল পরশে,
মন হারাবে পরম হরষে।
সবি শেষে, মেঘ মুক্ত আকাশে
আরশ-অধিপতি, আল্লাহর সাক্ষাত।
হঠাৎ হারাবে সবে নূরের আবেশে
স্বকন্ঠে শোনাবেন, কোরানের আয়াত।
এ জান্নাত, বাতাসে দোলা ফুল।
শীতল পানির অকূল প্রবহ।
স্থায়ী আবসে চিরযুবা তরুণীকুল।
এসব পেতে ব্যাকূল হবে কি কেহ?
কবিতায় জান্নাত কবিতায় জান্নাত কবিতায় জান্নাত কবিতায় জান্নাত