ওযর থাকলে কুফরীর বিধান বা স্পষ্ট কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার পরও গ্রহণযোগ্য ওযর থাকলে কাউকে কাফির না বলা
ওযর থাকলে কুফরীর বিধান বা স্পষ্ট কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার পরও গ্রহণযোগ্য ওযর থাকলে কাউকে কাফির না বলা শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মূনীর এর প্রবন্ধটি পড়ুন এবং শেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ দিন।
উপরে আমরা দেখেছি, অস্পষ্ট ও ব্যাখ্যাসাপেক্ষ বিষয়াবলীর উপর নির্ভর করে কোনো মুসলিমকে কাফির বলা যাবে না যতক্ষণ না সে এমন কোনো কুফরীতে লিপ্ত হয় যা সুস্পষ্ট এবং সর্বসম্মত। এখন আমরা দেখবো এমন কি এধরণের সুস্পষ্ট কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তিও বিভিন্ন কারণে ওযরপ্রাপ্ত বলে গণ্য হতে পারে। ফলে তাকে কাফির বলা যায় না। কোনো একটি কাজকে কুফরী হিসেবে আখ্যায়িত করার অর্থ কখনও এই নয় যে, উক্ত কাজে লিপ্ত প্রতিটি ব্যক্তি কাফির বরং লক্ষ্য করতে হবে উক্ত ব্যক্তির কোনো প্রহণযোগ্য ওযর আছে কিনা যে কারণে তাকে কাফির বলা অবৈধ হয়।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রঃ বলেন, কোনো একটি ব্যাপারে আলেমরা যখন বলেন, এটা যে বলে (বা করে) সে কাফির এ থেকে কেউ কেউ মনে করে ঐ কাজে লিপ্ত প্রতিটি ব্যক্তি কাফির। তারা এটা চিন্তা করেনি যে, কোনো একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কাফির বলার বেশ কিছু নিয়মনীতি ও বাধা-বিঘ্ন রয়েছে কখনও কখনও তা (কুফরী কাজে লিপ্ত হওয়ার পরও) নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তিকে কাফির বলার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়ায়। সাধারনভাবে “যে কেউ এ কাজ করে সে কাফির” এমন বলা আর নাম ধরে কাউকে কাফির বলা একই বিষয় নয়। (মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া)
এ অনুচ্ছেদে আমরা সেসব ওযর সম্পর্কে আলোচনা করবো যেগুলোর কারণে স্পষ্ট কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার পরও একজন ব্যক্তিকে কাফির বলা যায় না। যেমন, ঘুমের ঘোরে বা ভুলক্রমে হঠাৎ মুখে কুফরী কথা উচ্চারিত হওয়া, অন্য কারো কুফরী কথা বর্ণনা করা, মস্তিস্ক বিকারগ্রস্ত হওয়া তথা পাগল হওযার পর কুফরী কথা উচ্চারণ করা, কোনো আয়াতের প্রকৃত ব্যাখ্যা অনুধাবন করতে ব্যার্থ হওয়ার কারণে ভুল ব্যাখ্যা বা তা’বিল করে কোনো কিছু অস্বীকার করা, বাধ্য হয়ে কুফরী করা, কোনো প্রভাবশালী শত্রুকে খতম করার জন্য কুফরী কথাকে কৌশল হিসেবে গ্রহণ করা ইত্যাদি। এই সকল বিষয়কে তাকফীরের ক্ষেত্রে ওযর হিসেবে গণ্য করার স্বপক্ষে কুরআন হাদীসের স্পষ্ট দলিল-প্রমান এবং ওলামায়ে দ্বীনের মতামত রয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই সকল বিষয় মূলত দুটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত আর তা হলো, ক। জাহালাত তথা অজ্ঞতার কারণে না জেনে কুফরী কথা উচ্চারণ করা। খ। ইকরাহ্ তথা অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাধ্য হয়ে কুফরী কথা উচ্চারণ করা।
মোট কথা, একজন ব্যক্তি কেবল তখন কাফির হবে যখন সে স্বেচ্ছায় এবং সজ্ঞানে কুফরীতে লিপ্ত হবে। না জেনে বা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভুলক্রমে বা বাধ্য হয়ে মুখে কুফরী কথা উচ্চারণ করলে কেউ কাফির হবে না। ইমাম নাব্বী রঃ বলেন, প্রাপ্ত বয়স্ক, বোধ সম্পন্ন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কুফরী কথা বললে কাফিরে পরিনত হবে। (আল-মাজমু)
না-বালেগ ও বোধহীন তথা পালগ অজ্ঞতার মধ্যে পড়ে। ঘুমের মধ্যে বা বেহুশ অবস্থায় কুফরী কথা উচ্চারণ করার বিষয়টিও অনিচ্ছাকৃত বা অজ্ঞতাপ্রসূত। কোনো শত্রুর হাত হতে নিজেকে বা অন্যান্য মুসলিমকে রক্ষা করার জন্য কৌশল হিসেবে কুফরী কথা উচ্চারণ করা বাধ্য হয়ে কুফরী বলা হিসেবে গণ্য। একারণে এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কাফির হবে না।
অন্য কারো কুফরী কথা বর্ণনা করা আদৌ কুফরী করা বা কুফরীতে লিপ্ত হওয়া বলে গণ্য নয় সুতরাং সেটা এসব আলোচনার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত নয়। যে কুফরীই করে নি তাকে কাফির বলার প্রশ্ন আসতে পারে না ফলে তার ওযর সম্পর্কে আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা নেই।
এই বিশ্লেষণ সাপেক্ষে বলা যায় তাকফীরের ক্ষেত্রে যেসব ওযরের কথা বলা হয়েছে তার সবই উপরোক্ত দুটি মূলনীতির সাথে সম্পর্কিত। সুতরাং ঐ দুটি মূলনীতির উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হলে তাকফীরের ক্ষেত্রে যাবতীয় ওযর ও বাধা-বিপত্তি সম্পর্কে অবহিত হওয়া সম্ভব। পরবর্তী পোষ্টে আমরা এই দুটি মূলনীতির উপর পৃথকভাবে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ।
ওযর থাকলে কুফরীর বিধান ওযর থাকলে কুফরীর বিধান