ঈমানের শর্তাবলী মুখে স্বীকার করা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর
ঈমানের শর্তাবলী মুখে স্বীকার করা
শাব্দিকভাবে ঈমান অর্থ অন্তরে বিশ্বাস করা কিন্তু ইসলামী পরিভাষায় অন্তরে বিশ্বাস করার পাশা-পাশি মুখে স্বীকার করা এবং কাজে পরিনত করার নামই ঈমান।
এ বিষয়ে আহলুসসুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, ঈমান হলো, তিনটিজিনিসের সমন্বয়। অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং আমলে পরিনত করা। (উমদাতুল কারী)
এটি একটি প্রশিদ্ধ মূলনীতি। এখানে ঈমানের সাথে তিনটি বিষয়কে যুক্ত করা হয়েছে।
এই তিনটি বিষয়ের প্রতিটি সম্পর্কে পৃথকভাবে আলোচনা প্রয়োজন। নিচে দেওয়া হলো
মুখে স্বীকার করা
উপরে আমরা ইবনে হাযার আসক্বালানী থেকে বর্ণনা করেছি যে, দুনিয়ার বিধানে একজন ব্যক্তি কেবলমাত্র মুখে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে মুমিন বলে গণ্য হবে। এটা স্পষ্ট প্রামাণ করে যে, দুনিয়ার বিধানে মৌখিক স্বীকৃতির বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। একজন ব্যক্তি অন্তরে ঈমান এনেছে কিনা সেটা আমরা তার মৌখিক স্বীকৃতির মাধ্যমে ছাড়া জানতে সক্ষম নই। সুতরাং যে মুখে ঈমানের স্বীকৃতি দেয় নি তার অন্তরে বিশ্বাস আছে কি নেই দুনিয়ার বিধানে সেটা ধার্তব্যের বিষয় নয়। এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি অন্তরে আল্লাহর দ্বীনকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে তবে মুখে ঈমানের স্বীকৃতি দেয়নি আখিরাতে সে মুমিন হিসেবে গণ্য হবে কিনা সে ব্যাপারে আলেমদের মাঝে কিছু দ্বিমত রয়েছে। তবে প্রশিদ্ধ ও সঠিক মতে সে ব্যক্তি দুনিয়া-আখিরাতে উভয় জাহানে কাফির হিসেবে গণ্য হবে এবং চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে।
বদরুদ্দিন আল-আইনী রঃ বলেন, কাজি ইয়াদ বলেছেন, যে ব্যক্তির অন্তরে ঈমান রয়েছে কিন্তু সে মুখে তা উচ্চারণ করেনি বা সে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও কালেমা পাঠ করে নি সে মুসলিম বলে গণ্য হবে কিনা সে ব্যাপারে আলেমদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে তবে প্রশিদ্ধ মত হলো সে মুসলিম হবে না। (উমদাতুল ক্বারী)
ইবনুল আরবী রঃ এ বিষয়ে দ্বিমত উল্লেখ করার পর সঠিক মতটি বর্ণনা করে বলেন, যদি কেউ অন্তরে ঈমান আনার সংকল্প করে সে মুখে উচ্চারণ না করা পর্য্ন্ত মুমিন বলে গণ্য হবে না। (আহকামুল কুরআন)
এবিষয়ে এটিই সঠিক মত যে, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং মুখে স্বীকার করা ছাড়া কেউ মুমিন বলে গণ্য হতে পারে না। এ বিষয়ে সর্বাধিক স্পষ্ট প্রমাণ হলো, রাসুলুল্লাহ সাঃ এর চাচা আবু তালিবের ঘটনা। যদি মুখে স্বীকার করা ছাড়া কেবল অন্তরের বিশ্বাসের মাধ্যমে কেউ মুমিন হতো তবে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর চাচা আবু তালিব আল্লাহর নিকট মুমিন বলে গণ্য হতেন যেহেতু তিনি অন্তরে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর প্রচারিত দ্বীনকে সত্য বলে বিশ্বাস করতেন তবে মানুষ তিরস্কার করবে এই ভয়ে তা মুখে স্বীকার করেন নি। যদি মৌখিক স্বীকৃতি ছাড়াও করো অন্তরের বিশ্বাস ঈমান আনা বলে গণ্য হতো তবে রাসুলুল্লাহ সাঃ নিজেও তার চাচা আবু তালেবকে বলতেন, আপনি তিরস্কারের ভয়ে মুখে স্বীকার করছেন না তবে কেবল অন্তরে বিশ্বাস রেখে মৃত্যুবরণ করুন আমি আল্লাহর দরবারে আপনার জন্য সাফায়াত করবো। কিন্তু তিনি এমন বলেন নি বরং বলেছেন, হে চাচা আপনি লা ইলাহা ইল্লল্লাহ্ বলুন আমি আপনার জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবো। (সহীহ বুখারী) এই ঘটনা স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, অন্তরে বিশ্বাস করার পাশাপাশি মুখে স্বীকার করা ছাড়া ঈমান আনা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তবে যে ব্যক্তি কথা বলতে সক্ষম নয় তার জন্য মৌখিক স্বীকৃতি প্রদান করা শর্ত নয়। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না। (বাকারা-২৮৬) তবে তাকে ইশারা-ইঙ্গিত বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে ঈমানের স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।
এখানে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ঈমান কবুল হওয়ার শর্ত হিসেবে যে মৌখিক স্বীকৃতির কথা বলা হচ্ছে তার মাধ্যমে কেবল কালেমা পাঠ করা বা মুখে ঈমানের স্বীকৃতি দেওয়াই উদ্দেশ্য নয় বরং সঠিক মতে যে কোনো কথা ও কাজের মাধ্যমে ঈমান গ্রহণ করার ঘোষণা দেওয়াই উদ্দেশ্য নয় বরং সঠিক মতে যে কোনো কথা ও কাজের মাধ্যমে ঈমান গ্রহণ করার ঘোষণা দেওয়াই এখানে উদ্দেশ্য। যেমন, যদি কোনো কাফির বলে, আমি মুসলিম হলাম বা আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলাম তবে সে মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে। একইভাবে যদি কোনো কাফির মুসলিমদের সামনে সলাত আদায় করে তবে একদল আলেমের মতে সে মুসলিম বলে গণ্য হবে। যেহেতু সলাত আদায় করার মাধ্যমে সে নিজের ঈমানের ঘোষণা দিয়েছে। মোট কথা কালেমা পাঠ করা ছাড়াও যে কোনো মাধ্যমে ঈমান গ্রহণের ঘোষণা দিলেই সেটা স্বীকৃতি বলে গণ্য হবে। এ বিষয়ে অবশ্য কিছু দ্বিমতও রয়ে সেসব বিষয়ে আমরা এই গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখানে সংক্ষেপে কেবল এতটুকু স্মরণ রাখাই যথেষ্ট্য হবে যে, ঈমানের স্বীকৃতি বলতে কেবল মুখে উচ্চারণ করা বোঝায় না বরং কথা ও কাজের মাধ্যমে যে কোনো ভাবে নিজের ঈমান আনয়নের ঘোষণা দেওয়াই স্বীকৃতি বলে গণ্য।
ঈমানের শর্তাবলী মুখে স্বীকার করা ঈমানের শর্তাবলী মুখে স্বীকার করা