ইমাম মাহাদী, ইয়াজুজ মাজুজ, ইসা আঃ এবং দাজ্জাল আগমনের কিছু কথা

ইমাম মাহাদী ও দাজ্জাল প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

কিছু মানুষ আজকাল ইমাম মাহদী আর দজ্জাল ইলুমিনাতি এসবের আলোচনা শুনতে খুব পছন্দ করে। আবার কিছু মানুষ এসব নিয়ে বক্তব্য দিতেও বেশ পছন্দ করে। এসব নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করেও ক্লান্তি আসে না।কিন্তু সেই একই মানুষগুলোকে যখন ঈমানের ব্যাপারে কিছু বলা হয়, আক্বীদার ব্যাপারে শেখানো হয়, তখন তা শুনতে অনেকেরই আগ্রহ থাকে না। এমন কেন?
আমাদের সমস্যা হল আমরা কখনোই মূল বিষয়ের প্রতি ফোকাস করি না, ফোকাস করি ঐসব বিষয়ে যেগুলা কিনা মূল বিষয়ের সাথে সম্পর্কই রাখে না। এখানে ইমাম মাহাদী, ইসা আঃ, দাজ্জাল বা ইয়াজুজ মাজুজকে এক বারে বাদ দেয়ার কথা বলছিনা। আমি বলছিনা যে, এসবের উপর ঈমান রাখতে হবে না।


ঘটনাটা অনেকটা এরকম যে-এক ব্যক্তি গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করেছে, আর ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। এখন তাকে হাসপাতালে নিতে হবে।কিন্তু সেটা না করে মানুষ তাকে ফেলে সে ড্রাইভারকে ধরতে গেল, যে ঐ এক্সিডেন্টটা করেছে। লাভ আছে কোনো?
না, নেই।
আমাদের নিজেদের বুদ্ধি খাটাতে হবে, মূল সমস্যার প্রতি ফোকাস করতে শিখতে হবে।ইলুমিনাতি, ইয়াজুজ মাজুজ এদের নিয়ে গবেষণা করা কোনও ঈমানী দায়িত্ব না। যদি ‘ইয়াজুজ মাজুজ কবে আসবে, এরা কোথায় লুকিয়ে আছে’- সেটা না জেনে আপনি মৃত্যুবরণ করেন, তবে এতে আপনার কোনও ক্ষতি হবে না। কবরে আপনাকে এদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে না। করবে আপনি জিজ্ঞাসিত হবেন, হালাল, হারাম, শিরক, কুফর, বিদাত ইত্যাদি বিষয়ের উপর।


কিন্তু যদি আপনার ঈমানে সামান্যতমও ভেজাল থাকে, তবে আপনি কোনওভাবেই নিজেকে আজাব থেকে বাঁচাতে পারবেন না।যদি আক্বীদাতে গলদ থাকে, তবে জান্নাতী হবার আশা চিরতরের জন্য বাদ দিতে হবে।কত মারাত্নক কথা!
.
কিন্তু তারপরেও মানুষেরা তাদের ঈমান আক্বীদার ব্যাপারে ভয়ঙ্কর রকমের উদাসীন। দ্বীনের অন্যন্য বিষয় নিয়ে খেদমত বাড়ছে, আলাপ আলোচনা বাড়ছে। গাজওয়াতুল হিন্দের সৈনিক, ইমাম মাহদীর সৈনিক এখন ঘরে ঘরে তৈরী হচ্ছে।কিন্তু ঈমান নিয়ে ফিকির না করে এসব সৈনিকগিরি করেও কোন লাভ আছে বলে আমি মনে করি না। যাদের ইমান আছে তাদের ভেতরে যুদ্ধের জজবা আছে অবশ্যয়। তারা আশা রাখে শহীদী মৃত্যুর । এখানে কথা হচ্ছে গাজওয়াতুল হিন্দে মুসলমানদের অবশ্যই বিজয় হবে এটা চিরাচরিত সত্য কথা।তিনশত তের জন্য সৈনিক নিয়ে এক হাজার কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়লাভ করেছিলেন আমাদের রাসূল সাঃ। বদর যুদ্ধে আল্লাহ যেসব ফেরেশতা পাঠিয়েছিলেন তাদেরকে কিয়ামত পরর্যন্ত উঠিয়ে নিবেন না। তারা সবসময় মুসলমানদের সাহায্য করতে থাকবে। এটাও একটি ঈমানী আকিদা।
.
ধরেন আপনি ইমাম মাহদীকে পেলেন।বা গাজওয়াতুল হিন্দে অংশগ্রহণ করে মুশরিকদের হাতে নিহতও হলেন।কিন্তু এতে আপনার কোনও লাভ হবে না, এমনকি আপনি জান্নাতেও যেতে পারবেন না যদি আপনার ঈমানে ভেজাল থেকে থাকে।
একটা উদাহরণ দেই।
আল কুরআনে বলা হয়েছে হযরত মুসা (আঃ) এর কাহিনী।ওনার একটা লাঠি ছিল আল্লাহ্‌ পাকের আদেশে যেটা সাপে পরিণত হতে পারত।
.
এখন কোনও মুসলমান যদি একথা জেনেও মনে মনে এমন সন্দেহ করে যে, “এটা তো চরম অবৈজ্ঞানিক কথা বা আদৌ এটা সত্যি হয়েছিল কি?”
তবে সে ইসলামের দৃষ্টিতে কাফের।সে যত আমলই করুক,সেগুলো তার কোনও কাজেই লাগবে না।এমনকি সে যদি ইমাম মাহদীর সৈনিক হয়ে মারাও যায় তবে সে জাহান্নামী হবে।তার মৃত্যু আল্লাহ্‌ পাকের নিকট শাহাদাত বলে গৃহীত হবে না।
তাহলে, এসব করে কোনও লাভ হল কী? আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে তিন সময় তাওবা কবুল হবে এক. ইসা আঃ এর আগমনের পর। দুই. দাজ্জালের আগমনের পর । তিন. সূর্য পশ্চিম দিক হতে উদিত হওয়ার পর। আর অনেকেই আশা করেন যে, আমাদের সময় যেন ইমাম মাহাদি দাজ্জাল এসবের আগমন হয়। যে সময় তাওবা কবুল হবে না, যে সময় চরম ফেতনার যুগ, যে সময় ভালো ভালো ঈমানদার লোক ফেতনার কারনে ঈমান হারা হবে সে সময়কে কিভাবে আমরা আশা করি। এখন একটি মোটামুটি স্বাভাবিক সময়, এ সময়েও ঈমান ধরে রাখা অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাহলে তখন কি অবস্থা হবে?
.
তাই ভাইয়েরা, ইসলামের অন্যান্য বিষয় সম্বন্ধে জানুন, গবেষণা করুন, ক্ষতি নেই। কিন্তু সবার আগে নিজের ঈমান আক্বীদাহ্ ঠিক করুন। আগে তো ঈমান ঠিক করে নিজেকে ইসলামে প্রবেশ করান, তারপর দ্বীনের খেদমত করুন। ঈমান ঠিক না রেখে জাহেল কাফের অবস্থায় দ্বীনের খেদমত করে কোনও লাভ আছে?
না, নেই।
যদি থাকত তবে আবু তালিবও তো কাফের অবস্থায় থেকেই রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর অনেক সাহায্য করেছিল।সে জাহান্নামী হল কেন? তাহলে এখন আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে যে, কোন এক সময় ইমাম মাহাদী আসবেন। ইসা আঃ আসবেন। দাজ্জাল আসবে। ইয়াজুজ মাজুজ আসবে। কিন্তু তাদের নিয়ে গবেষনা না করে তাওহীদ, শিরক, কুফর, হালাল, হারাম, বিদাত এসব বিষয়ে গবেষনা শুরু করুন। আর জান্নাতের হুরদের প্রেমে পড়ুন। সেই সাথে ইবনুল কাইয়ুমের সিফাতুল জান্নাহ কবিতাটি পড়ার অনুরোধ করছি। আর আল্লাহয় সঠিক পথ প্রদর্শন কারি।

ইমাম মাহাদী ও দাজ্জাল প্রবন্ধটি অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *