আল্লাহর দ্বীনকে অবহেলা করা – আল্লাহর দ্বীনকে অবজ্ঞা ও অবহেলা করা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর

আল্লাহর দ্বীনকে অবহেলা করা – আল্লাহর দ্বীনকে অবজ্ঞা ও অবহেলা করা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর গবেষণা মুলক প্রবন্ধ পড়ুন এবং আপনার বন্ধুদের নিকট শেয়ার করুন।

পূর্বের পোষ্টে আমরা আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে কোনো শব্দ প্রয়োগ করা বা কোনো অসঙ্গত স্থানে আল্লাহর দ্বীনকে প্রয়োগ করার মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনের অবমাননা করা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এছাড়া আরো অনেক পন্থায় আল্লাহর দ্বীনকে অবমাননা করা হয়ে থাকে। নিম্নে সেসব ব্যাপারে তিনটি পৃথক শিরোনামে আলোচনা করা হলো।

আল্লাহর দ্বীনের সাথে অন্য কিছুকে অসঙ্গতভাবে তুলনা করা।

রসুলুল্লাহ সাঃ স্পষ্ট বলেছেন,

তোমাদের মধ্যে কেউ মুমিন হবে না যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, সন্তান এবং অন্য সকল মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই। (বুখারী ও মুসলিম)

সূরা তাওবার ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পিতা, ভ্রাতা, সন্তান, ব্যবসা, বাসস্থান ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করার পর বলেছেন, যদি তোমাদের নিকট আল্লাহ, রসুল ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা অপেক্ষা এইসব দুনিয়াবী বিষয় অধিক প্রিয় হয় তবে আল্লাহর শাস্তির জন্য অপেক্ষা কর।

এছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন আয়াত ও হাদীসে আল্লাহ্, রসুল ও আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে সর্বোচ্চ ভালবাসা থাকা ইমানের জন্য শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো মুমিন এসবের বিপরীতে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে প্রাধান্য দিতে পারে না। যদি কেউ স্পষ্টভাবে দুনিয়াবী কোনো বিষয়কে দ্বীনী বিষয়ের উপর প্রাধান্য দেওয়ার দাবী করে এবং এভাবে আল্লাহর দ্বীনকে ছোট করে তবে সে কাফির হবে। ইমাম নাব্বী রঃ রাওদাতুল তালিবীন এ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, যদি কেউ বলে, এক বাটি পায়েস ইলম অর্জন অপেক্ষা উত্তম তবে সে কাফির হবে। মোল্লাহ্ আলী শারহে ফিকহে আকবারের মধ্যে বর্ণনা করেন, যদি কেউ বলে “লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্”। আর অন্য একজন বলে, এ দিয়ে কি হয়? এতে কি ক্ষিদে মেটে? তবে সে কাফির হবে।

যদি কেউ বলে, আল্লাহ আমাকে দুনিয়ার কোনো সম্পদ ও নেয়ামত দেন নি তাহলে আমাকে সৃষ্টি করলেন কেন? সে কাফির হবে। কারণ সে মানুষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য তথা আল্লাহর ইবাদত করার বিষয়টি অস্বীকার করছে। এবং দুনিয়ার ভোগ-বিলাশকেই একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে গণ্য করছে যা স্পষ্ট নাস্তিকতা।

যদি কেউ বলে, তোমাকে ছাড়া আমি জান্নাতেও যেতে প্রস্তুত নয়, বা বলে আল্লাহ্ যদি অমুক ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করান তবে আমি জান্নাতে প্রবেশ করবো না তবে সে কাফির হবে। কারণ সে আল্লাহ্ তায়ালার নেয়ামতকে তুচ্ছ জ্ঞান করছে। একইভাবে যদি কেউ বলে, তোমার সাথে আমি জাহান্নামে যেতেও প্রস্তুত আছি তবে সে কাফির হবে কারণ সে আল্লাহর শাস্তিকে তুচ্ছ জ্ঞান করছে।

যদি কেউ বলে, আমি দুনিয়াতে রুটি-রুজি চাই এর বিনিময়ে আখিরাতে যা হবার হবে। সে কাফির হবে। একইভাবে যদি কেউ অন্য কাউকে বলে তুমি দুনিয়া পরিত্যাগ করো আখিরাত পাবে আর সে বলে, আমি বাকীর বিনিময়ে নগদ পরিত্যাগ করবো না তবে এই ব্যক্তি কাফির হবে। কারণ সে আখিরাতকে তুচ্ছ জ্ঞান করছে। যদি কেউ তার স্ত্রীকে বা অন্য কাউকে বলে আমি তোমাকে আল্লাহর চেয়ে বা আল্লাহর রাসুলের চেয়ে বেশি ভালবাসী তবে সে কাফির হবে কারণ এ কথার মাধ্যমে আল্লাহ্ ও তার রাসুলকে অবমাননা করা হয়।

তবে যদি সে আফসোসের সূরে বলে আমাদের ঈমানের অবস্থা এতটাই দূর্বল যে আমরা আমাদের স্ত্রী-পুত্রদের আল্লাহ্-রাসুলের তুলনায় অধিক ভালবাসি তাহলে কুফরী হবে না বরং এটা ঈমানী চেতনা ও সচেতনতা হিসেবে গণ্য হবে।

যদি কেউ এমন কোনো দাবী করে যাতে ঔদ্ধত্ব প্রকাশ পায় এবং দ্বীনের কোনো বিষয়কে ছোট করা হয় তবে তা কুফরী হবে। কাজি ইয়াদ রঃ বিভিন্ন প্রকার কুফরীর বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, যদি কেউ দাবী করে, সে আকাশে উঠে যায়, জান্নাতে প্রবেশ করে জান্নাতের ফল খায় এবং হুরদের আলিঙ্গন করে তবে এরা সকলে কাফির হবে। (আশ-শিফা)

এই ব্যক্তি কাফির হওয়ার কারণ সে মৃত্যু ও হাশর-নাশরের পূর্বেই জান্নাতে প্রবেশ করা এবং তার নেয়ামত উপভোগ করার দাবী করে ঔদ্ধত্বতা প্রকাশ করেছে। সেই সাথে জান্নাতের মর্যাদা ও সম্মানকে সে খাটো করেছে।

যারা ওলী আওলিয়াদের কারামতের ব্যাপারে বাড়া-বাড়ি করে তারা অনেক সময় করামতের নামে এমনসব ঘটনা দাবী করে যা ক্ষেত্র বিশেষে নবী-রাসুলদের জন্য সংরক্ষিত মু’জিযার সমপর্যায়ের হয়ে যায়। এভাবে নবী-রাসুলদের মর্যাদাকে খাটো করা হয়। এ ধরণের দাবী কুফরী হিসেবে গণ্য হবে। উদাহরণস্বরুপ, যদি কেউ আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলার দাবী করে যেভাবে মুসা আঃ এর সাথে কথা বলেছেন বা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মতো মিরাজে গমণ করার দাবী করে তবে জান্নাতে প্রবেশ করার দাবী যে করে তার মতই এই ব্যক্তিও কাফির হবে। আল্লাহই ভাল জানেন।

আল্লাহর দ্বীনকে অবহেলা করা – আল্লাহর দ্বীনকে অবজ্ঞা ও অবহেলা করা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর গবেষণা মুলক প্রবন্ধ পড়ুন এবং আপনার বন্ধদের মাঝে শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *