আঁধার ঘেরা এই পৃথিবীঃ সোবহে সাদিকের প্রতীক্ষায় | রাসুল সা: এর জীবনী | আর রাহিকুল মাখতুম
আঁধার ঘেরা এই পৃথিবীঃ সোবহে সাদিকের প্রতীক্ষায় রাসুল সা: এর জীবনী
আরবের ভৌগলিক পরিচয় এবং বিভিন্ন জাতির অবস্থান
সীরাতে নববী প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর শেষ পয়গম্বরের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানব জাতির সামনে তা উপস্থাপন করেছিলেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ পাক মানুষকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোয় এবং বান্দাদের বন্দেগী থেকে বের করে আল্লাহর বন্দেগীর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছিলেন। আল্লাহর পয়গাম তথা পয়গমে রব্বানী অবতীর্ণ হওয়ার পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ের অবস্থার তুলনামূলক আলোচনা ছাড়া সীরাতুন্নবীর পরিপূর্ণ চিত্ররূপ তুলে ধরা সম্ভব নয়। তাই মূল বিষয়ের আলোচনা শুরুর আগে ইসলামপূর্ব আরবের বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং এবং তাদের জীবনযাপনের অবস্থা বর্ণনা করা একান্ত প্রয়োজন। এতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবকালের অবস্থা সম্পর্কে সম্যক একটা ধারনা পাওয়া যাবে।
‘আরব’ শব্দের আভিধানিক অর্থ সাহারা বা বিশুষ্ক প্রান্তর বা অনুর্বর জমিন। প্রাচীনকাল থেকে এ শব্দটি জাযিরাতুল আরব এবং তার অধিবাসীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে।
আরবের পশ্চিমে লোহিত সাগর এবং সায়না উপদ্বীপ, পূব দিকে আরব উপসাগর, দক্ষিণে ইরাকের বিরাট অংশ, দক্ষিণে ইরাকের বিরাট অংশ এবং আরো দক্ষিণে আরব সাগর। এটি প্রকৃতপক্ষে ভারত মহাসাগরের বিস্তৃত অংশ। উত্তরে সিরিয়া এবং উত্তর ইরাকের একাংশ। এর মধ্যে কিছু বিতর্কিত সীমানাও রয়েছে। মোট আয়তন দশ থেকে তেরো লাখ বর্গ মাইল।
দ্বীপসদৃশ এই আরব দেশটি প্রাকৃতিক এবং ভৌগলিক দিক দিয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আভ্যন্তরীণ ও বহির্দিক থেকে এটি বহু প্রান্তর এবং মরুভূমিতে ঘেরা। এ কারণেই এ অঞ্চলটি এমন সংরক্ষিত। অন্যরা এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব সহজে বিস্তার করতে পারে না। তাই লক্ষ্য করা গেছে যে, জাযিরাতুল আরবের মূল ভূখন্ডের অধিবাসীরা প্রাচীনকাল থেকেই নিজেদের সকল কাজে সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ। অথচ আরবের এসব অধিবাসীরা ছিল তদানীন্তন বিশ্বের দু’টি বৃহৎ শক্তির প্রতিবেশী। এই প্রাকৃতিক বাধা না থাকলে সেই দুটি শক্তির হামলা প্রতিহত করার সাধ্য আরবদের কোনদিনই হতো না।
বাইরের দিক থেকে জাযিরাতুল আরব ছিল প্রাচীনকালের সকল মহাদেশের মাঝখানে। স্থলপথ এবং জলপথ ইভয় দিক থেকেই বাইরের বিশ্বের সাথে আরবের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল সহজ। জাযিরাতুল আরবের উত্তর পশ্চিম অংশ হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশের প্রবেশ বা তোরণদ্বার। উত্তর পূব অংশে ইউরোপের জাতি। পূর্বদিকে ইরান, মধ্য এশিয়া এবং দুর প্রাচ্যের প্রবেশ পথ। এ পথে চীন এবং ভারত পর্যন্ত যাওয়া যায়। এমনিভাবে প্রতিটি মহাদেশই আরব দেশের সাথে সম্পৃক্ত। এসকল মহাদেশগামী জাহাজ আরবের বন্দরে সরাসরি নোঙ্গর করে।
এ ধরনের ভৌগলিক অবস্থানের কারণ জাযিরাতুল আরবের উত্তর ও পশ্চিম অংশ বিভিন্ন জাতির মিলনস্থল এবং ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় প্রাণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল।
আরব জাতিসমূহ
ঐতিহাসিকরা আরব জাতিসমূহকে তিনভাগে ভাগ করেছেন।
এক. আরব বারেরা
আরব বারেবা বলতে আরবের সেইসব প্রাচীন গোত্র এবং সম্প্রদায়ের কথা বোঝানো হয়েছে যারা সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এসব গোত্র ও সম্প্রদায় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় বিস্তারিত তথ্য এখন আর জানা যায় না। যেমন আদ, সামুদ, তাছাম, জাদিছ আমালেকা প্রভৃতি জাতি।
দুই, আরব আবেরা
এ দ্বারা সেসব গোত্রের কথা বোঝানো হয়েছে যারা ছিল ইয়ারুব ইবনে ইয়াশজুব ইবনে কাহতানের বংশধর। এদেরকে কাহতানি আরবও বলা হয়।
তিন. আরবে মোস্তারেবা
এরা যেসব গোত্র, যারা হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের বংশধর। এদেরকে আদনানী আরব ও বলা হয়।
আরবে আবেরা অর্থাৎ কাহতানি আরবদের প্রকৃত বাসস্থান ছিল ইয়েমেনে। এখানেই এদের পরিবার এবং গোত্রের বিভিন্ন শাখা প্রসার লাভ কর। এদের মধ্যে দুটি গোত্র বিশেষ খ্যাতি লাভ করে। যথা:
(ক) হেমইয়ার: এদের বিখ্যাত শাখার নাম হচ্ছে যাইদুল যমহুর কোজাআহ এবং যাকাসেক।
(খ) কাহতান: এদের বিখ্যাত শাখার নাম হচ্ছে হামদান, আনমার, তাঈ, মাযহিজ, কেন্দাহ, লাখম, জুযাম আযদ, আওস খাজরায এবং জাফনার বংশধর। নিজস্ব এলাকা ছেড়ে এরা সিরিয়ার আশে পাশে বাদশাহি কায়েম করেছিল। এরপর এরা গাস্সান নামে পরিচিতি লাভ করে।
সাধারণ কাহতানি গোত্রসমূহ পরবর্তীকালে ইয়েমেন ছেড়ে দেয় এবং আরব উপদ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় বসতি স্থাপন করে। এরা নেই সময় দেশত্যাগ করেছিল, যখন রোমকরা মিসর ও সিরিয়া অধিকার করার পর ইয়েমেনবাসীদের জলপথের বাণিজ্যের ওপর নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং স্থলপথের বাণিজ্যও অধিকারে এনেছিল। এর ফলে কাহতানিদের বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
এমনও হতে পারে, কাহতানি এবং হেমইয়ারি গোত্রসমুহের মধ্যে বিবাদ -বিসম্বাদ দেখা দেয়র ফলে কাহতানিরা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। এরূপ মনে করার এটাই কারণ যে, কাহতানি গোত্রসমুহ দেশত্যাগ করেছিল, কিন্তু হিমইয়ারী গোত্রসমুহ তাদের জায়গায় অটল ছিল।
যেসব কাহতানি গোত্র দেশ ত্যাগ করেছিল তাদের চারভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
এক) আযাদ: এরা তাদের সর্দার এমরান ইবনে আমর মুযাইকিয়ার পরামর্শে দেশত্যাগ করে। প্রথমে এরা ইয়েমেনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয় এবং অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়ার জন্য বিভিন্ন দল পাঠাতে থাকে। এরপর এরা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে বসতি স্থাপন করে। এদের বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ,
ছালাবা ইবনে আমর : এই ব্যক্তি প্রথমে হেজায অভিমুখে রওয়ানা হয়ে ছালাবা এবং জিকার এর মাঝখানে অবস্থান গ্রহণ করেন। তার সন্তানরা যখন বড় হলে এবং খান্দান শক্তিশালী হয় তখন মদিনা অভিমুখে রওয়ানা হন এবং মদিনাতেই বসবাস শুরু করেন। এই ছালাবার বংশ থেকেই আওস এবং খাজরাযের জন্ম। আওস এবং খাজরায ছিল ছালাবার পুত্র হারেছার সন্তান।
হারেস ইবনে আমর : তিনি ছিলেন খোজাআর সন্তান। এই বংশধারার লোকেরা হেজায ভূমির বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরার পর মাররায যাহরানে অবস্থান নিয়ে পরে মদিনায় হামলা করে। মক্কা থেকে বনি জুরহুম গোত্রের লোকদের বের করে দিয়ে নিজেরা মক্কায় বসতি স্থাপন করে।
এমরান ইবনে আমর : এই ব্যক্তি এবং তার সন্তানরা আম্মানে বসবাস করেতে থাকেন। এ কারণে এদেরকে আজাদ আম্মান বলা হয়ে থাকে।
নাসর ইবনে আযাদ : এই ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত গোত্রসমুহ তোহামায় অবস্থান করে। এদের আযাদ শানুয়াতে বলা হয়ে থাকে। জাফনা ইবনে আমর: এই ব্যক্তি সিরিয়ায় চলে যান এবং সেখানে সপরিবারে বসবাস করেন। তিনি ছিলেন গাস্সানী বাদশাহদের প্রপিতামহ। সিরিয়ায় যাওয়ার আগে এরা হেজাযে গাস্সান নামক একটি জলাশয়ের কাছে কিছুদিন অবস্থান করেন।
দুই) লাখম জুযাম গোত্র, লাখমের বংশধরদের মধ্যে নসর ইবনে রবিয়া ছিলেন অন্যতম। তিনি হীরায় রাজত্বকারী শাসনকর্তাদের (যাদের বলা হতো আলে মোনযের) পূর্বপুরুষ ছিলেন।
তিন) বনু তাঈ গোত্র, এই গোত্র বনু আযাদের দেশ ত্যাগের পর উত্তর দিকে রওয়ানা হয় এবং আজা ও সালমা নামে দুটি পাহাড়ের মাঝখানে বসবাস করতে শুরু করে। তাঈ গোত্রের কারণে এই দুটি পাহাড় বিখ্যাত হয়ে ওঠে।
চার) কিন্দা গোত্র, এ গোত্রের লোকেরা প্রথমে বাহরাইনের বর্তমান আল আহমা নামক স্থানে বসতি স্থাপন করে। কিছুকাল পর তারা হাদরামাউত চলে যায়। কিন্তু সেখানেও তারা টিকতে পারেনি। অবশেষে তারা নাজদে গিয়ে বসতি স্থাপন করে এবং একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু সে সরকার ও স্থায়ী হয়নি। কিছুকালের মধ্যেই তাদের নাম নিশানা মুছে যায়।
কাহতান ছাড়া হেম্ইয়ারের আর একটি গোত্র ছিল, সে গোত্রের নাম ছিল কাজাআ। এ গোত্রের নাম হেমিরি হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। এরা ইয়েমেন থেকে চলে গিয়ে ইরাকের বাদিয়াতুল সামাওয়াতে বসবাস করতে থাকে (এ সকল গোত্র এবং তাদের দেশত্যাগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, তারিখুল ইমামিল ইসলামিয়া ১ম খন্ড, পৃ ১১-১৩ আল জাযিরাতুল আরব পৃ: ২৩১-২৩৫। দেশ ত্যাগের ঘটনাবলীর ব্যাপারে সময় নির্ণয়ের মতভেদ রয়েছে। নানা দিক বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য তথ্য আমরা উল্লেখ করেছি। )
আরবে মোস্তারেবা: এদের পূর্ব পুরুষ ছিলেন সাইয়েদেনা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। তিনি ছিলেন প্রকৃতপক্ষে ইরাকের উয শহরের অধিবাসী। এ শহর ফোরাত নদীর পশ্চিম উপকুল কুফার কাছে অবস্থিত ছিল। ফোরাত নদী খননের সময়ে পাওয়া নিদর্শনসমূহ থেকে এ শহর সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা গেছে। হযরত ইবরাহীম পরিবার এবং উয শহরের অধিবাসী ও তাদের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কেও এতে অনেক তথ্য উদঘাটিত হয়েছে।
হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম দ্বীনের তাবলীগের জন্য দেশের ভেতরে ও বাইরে ছুটোছুটি করেন। একবার তিনি মিসরে যান। হযরত ইবরাহীমের স্ত্রী সারার কথা শোনার পর ফেরাউনের মনে মন্দ ইচ্ছা জাগে। অসৎ উদ্দেশ্যে সে হযরত সারাকে নিজের দরবারে ডেকে নেয়। তারপর অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চায়। হযরত সারা আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। তার দোয়ার বরকতে আল্লাহ পাক ফেরাউনকে এমনভাবে পাকড়াও করেন যে, ফেরাউন অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করে। এতে সে বুঝতে পারে যে, সারা আল্লাহর খুবই প্রিয়পাত্রী এবং পুণ্যশীলা রমণী। হযরত সারার এ বৈশিষ্ট্যে মুগ্ধ হয়ে ফেরাউন তার কন্যা হাজেরাকে (হযরত হাজেরা দাসী ছিলেন বলে ভিন্ন গ্রন্থে বলা হয়, আসলে তিনি ছিলেন ফেরাউনের কন্যা। রহমতুল্লিল আলামিন, ২য় খন্ড.পৃ ৩৬-৩৭ দেখুন। ) হযরত সারার হাতে তুলে দেন। হযরত সারা হযরত হাজরাকে তাঁর স্বামী হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সাথে বিবাহ দেন (ঐ ২য় খন্ড, পৃ ৩৪, ঘটনার বিস্তারিত বিবরণের জন্য সহীহ বোখারী, ১ম খন্ড. পৃ-৪৮৪ দেখুন)।
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম হযরত সারা এবং হযরত হাজেরাকে সঙ্গে নিয়ে ফিলিস্তিন ফিরে যান। এরপর আল্লাহ রব্বুল আলামীন হযরত ইবরাহীমকে হযরত হাজেরার গর্ভ থেকে একটি সন্তান দান করেন। উল্লেখ্য, হযরত সারা ছিলেন নি:সন্তান। ভূমিষ্ঠ সন্তানের নাম রাখা হয় ইসমাইল। আস্তে আস্তে হযরত সারা হযরত হাজেরার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেন এবং নবজাত শিশুসহ হযরত হাজেরাকে নিবাসন দিতে হযরত ইব্রাহিম (আ.)কে বাধ্য করেন। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে একথা মানতে হয় এবং তিনি হযরত হাজেরা এবং ইসমাইলকে সঙ্গে নিয়ে মক্কায় গমন করেন। বর্তমানে যেখানে কাবা ঘর রয়েছে, সেই ঘরের কাছে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম স্ত্রী পুত্রকে রেখে আসেন। সে সময় কাবাঘর ছিল না। একটি টিলার মতো কারা ঘরের স্থানটি উঁচু ছিল। প্লাবন এলে সেই টিলার দুপাশ দিয়ে পানি চলে যেত। সেখানে মসজিদুল হারামের উপরিভাগে-পাশেই যমযমের কাছে একটি বড় বৃক্ষ ছিল। হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম সেই গাছের পাশে স্ত্রী হাজেরা এবং পুত্র ইসমাইলকে রেখে আসেন। সে সময় মক্কায় পানি এবং মানব বসতি কিছুই ছিল না। একারণে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম একটি পাত্রে কিছু খেজুর এবং একটি মশকে কিছু পানি রেখে আসেন। এরপর তিনি ফিলিস্তিন ফিরে যান। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই সে খেজুর ও পানি শেষ হয়ে যায়। কঠিন দু:সময় দেখা দেয়। সেই করুন দু:সময়ে আল্লাহ পাকের রহমতের ঝর্ণাধারা যমযমরূপে প্রকাশ লাভ করে এবং দীর্ঘদিন যাবত বহু মানুষের জীবন ধারণের উপকরণরূপে ব্যবহৃত হয়। এর বিস্তারিত বিবরণ মোটামুটি সবার জানা (সহীহ বোখারী, কিতাবুল আম্বিয়া, ১ম খন্ড, পৃ: ৪৭৪-৪৭৫)। কিছুকাল পরে ইয়েমেন থেকে একটি গোত্র মক্কায় আসে। ইতিহাস এ গোত্র জুরহুম সানি বা দ্বিতীয় জুরহাম নামে পরিচিত। এ গোত্র ইসমাইল আলাইহিস সালামের মায়ের অনুমতি নিয়ে মক্কায় বসবাস শুরু করে। বলা হয় থাকে যে, এ গোত্র আগে মক্কার আশে পাশের এলাকায় বসতি স্থাপন করেছিল। উল্লেখ্য রয়েছে যে, এই গোত্রের লোকেরা হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের আগমনের পরে এবং তাঁর যুবক হওয়ার আগে যমযমের জন্য মক্কায় আসে। এ পথে তারা আগেও যাতায়াত করছিল। (এই গ্রন্থ ১ম খন্ড, পৃ: ৪৭৫)।
হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম স্ত্রী-পুত্রের দেখাশোনার জন্য মাঝে মাঝে মক্কায় যেতেন। তবে কতোবার তিনি এভাবে যাতায়াত করেছিলেন সেটা জানা যায়নি। ঐতিহাসিক তথ্য থেকে চারবার যাওয়া আসার প্রমাণ পাওয়া যায়।
এক) পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন, হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তায়ালা এ মর্মে স্বপ্ন দেখান যে তিনি তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইলকে জবাই করেছন। এ স্বপ্ন ছিল আল্লাহ পাকের এক ধরনের নির্দেশ। পিতা পুত্র উভয়ই এ নির্দেশ পালনের জন্য প্রস্তুত হন। উভয়ে আল্লাহর ইচ্ছায় কাছে আত্মসমর্পণ করার পর পিতা তার পুত্রকে মাটিতে শুইয়ে দিলেন এবং জবাই করতে উদ্যত হলেন। এ সময় আল্লাহ পাক বললেন, হে ইবরাহিম তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্য করে দেখিয়েছ। আমি পুণ্যশীলদেরকে এভাবে বিনিময় দিয়ে থাকি। নিশ্চিতই এটা ছিল একটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আল্লাহ পাক এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পুরস্কারস্বরুপ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে কোরবানির মহান গৌরব দান করেন। (সুরা আস সাফফাত পৃ-১০৩-১০৭)।
বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামের চেয়ে তেরো বছরের বড় ছিলেন। কোরআনের বর্ণনা রীতি থেকে বোঝা যায়, এ ঘটনা ঘটেছিল হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্মের আগে। কেননা সমগ্র ঘটনা বর্ণনা করার পর এখানে হযরত ইসহাকের জন্মের সুসংবাদ উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের যুবক হওয়ার আগে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম কমপক্ষে একবার মক্কায় সফর করেছিলেন। বাকি তিন বারের সফরের বিবরণ বোখারী শরীফের একটি দীঘ বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে (সহীহ বোখারী ১ম খন্ড. পৃ ৪৭৫-৪৭৬)।
দুই) হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম যুবক হলেন। জুরহাম গোত্রের লোকদের নিকট আরবী ভাষা শিক্ষা করেন। গোত্রের লোকেরা হযরত ইসমাইলের সাথে তাদের এক কন্যাকে বিবাহ দেন। এ সময় হযরত হাজেরা আলাইহিস সালাম ইন্তেকাল করেন। এদিকে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর স্ত্রী পুত্রকে দেখার জন্য মক্কায় আসেন। কিন্তু হযরত ইসমাইলের সাথে দেখা হয়নি। পুত্রবধূর সাথে দেখা হলে তিনি অভাব অনটনের কথা ব্যক্ত করেন। হযরত ইবরাহিম পুত্রবধূকে বলে এলেন যে, ইসমাইল এলে তাকে বলবে সে যেন ঘরের চৌকাঠ পাল্টে ফেলে। পিতার এ উপদেশের তাৎপর্য হযরত ইসমাইল বুঝে ফেললেন। তিনি স্ত্রীকে তালাক দেন এবং অন্য একজন মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন জুরহাম গোত্রের সরদার মাজায ইবনে আমরের কন্যা (কলবে জাযিরাতুল আরব, পৃ:-২৩৩)।
তিন) হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের দ্বিতীয় বিয়ের পর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পুনরায় মক্কায় আগমন করেন। কিন্তু এবারও পুত্রের সাথে তাঁর দেখা হয়নি। পুত্রবধূর কাছে ঘর সংসারের অবস্থা জিজ্ঞাসা করার পর তিনি আল্লাহ পাকের প্রশংসা করেন। পুত্রবধূর মুখে আল্লাহর প্রশংসা শোনার পর হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পুত্রবধূকে বলেন যে, ইসমাইল এলে তাকে বলবে সে যেন তার ঘরের চৌকাঠ ঠিক রাখে। এরপর হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ফিলিস্তিন ফিরে যান।
চার) চতুর্থবার হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কায় এসে দেখতে পান তাঁর পুত্র ইসমাইল আলাইহিস সালাম যমযমের তীরে বসে তীর তৈরি করছেন। পরস্পরকে দেখা মাত্র আবেগে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরলেন। দীর্ঘকাল পর কোমল হদয় পিতা এবং অনুগত পুত্রের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল। এই সময়েই পিতাপুত্রে মিলিতভাবে কাবাঘর নির্মাণ করেন। মাটি খুড়ে দেয়াল তোলেন এবং হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সমগ্র বিশ্বের মানুষকে হজ্ব পালনের আহবান জানান।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন মাজাজ ইবনে আমরের কন্যার গর্ভে হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে বারটি পুত্র সন্তান দান করেন (কলবে জাযিরাতুল আরব, পৃ:২৩০)। তাঁদের নাম ছিল ১) নাবেত বা নিয়াবুত (২) কায়দার (৩) আদবাইল (৪) মোবশাম (৫) মেশমা (৬) দুউমা (৭) মাইশা (৮) হাদদ (৯) তাইমা (১০) ইয়াতুর (১১) নাফিস ও (১২) কাইদমান।
এই বারোজন পুত্রের মাধ্যমে বারোটি গোত্র তৈরি হয়। এরা সবাই মক্কাতেই বসবাস করেন। ইয়েমেন, মিসর এবং সিরিয়ায় ব্যবসা করে তারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরবর্তীকালে এসব গোত্র জাযিরাতুল আরবের বিভিন্ন এলাকায় এবং আরবের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এদের অবস্থা সম্পর্কিত বিবরণ মহাকালের গভীর অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। শুধু নাবেত এবং কাইদার বংশধরদের সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা যায়।
নাবেতিদের সংস্কৃতি হেজাযের উত্তরাংশে বিকাশ লাভ করে। তারা একটি শক্তিশালী সরকার প্রতিষ্ঠা করে এবং আশেপাশের লোকদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে। বাতরা ছিল তাদের রাজধানী। তাদের মোকাবেলা করার মতো শক্তি কারো ছিল না। এরপর আসে রোমকদের যুগ। রোমকরা নাবেতিদের পরাজিত করে। মওলানা সাইয়েদ সোলায়মান নদভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি দীর্ঘ গবেষণা ও আলোচনার পর প্রমাণ করেছেন যে, গাসসান বংশের লোকেরা এবং আনযারনি অর্থাৎ আওস ও খাজরায কাহতানিরা আরব ছিলেন না। বরং এ এলাকায় ইসমাইলের পুত্র নাবেতের অবশিষ্ট বংশধর বসবাস করতো (তারিখে আবদুল কোরআন ২য় খন্ড, পৃ:৭৭-৮৬)।
হযরত ইসমাইলের পুত্র কাইদারের বংশের লোকেরা মক্কায় বসতি স্থাপন করতে থাকে এবং কালক্রমে এদের বংশবৃদ্ধি ঘটে। পরবর্তী কালে আদনান এবং তৎপুত্র মা আদ-এর যমানা আসে। আদনানী বংশধারা সঠিকভাবে এ পর্যন্ত সংরক্ষিত আছে।
আদনান ছিলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উনিশতম পূর্ব পুরুষ। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম তাঁর বংশধারা বর্ণনা করার সময় আদনান পর্যন্ত পৌঁছে থেমে যেতেন। তিনি বলতেন, বংশধারা বিশেষজ্ঞরা ভুল তথ্য পরিবেশন করে থাকে। (তিবরি, উমাম অল মুলুক, ২য় খন্ড.পৃ: ১৯১-১৯৪ আল আলাম পৃ-৫-৬)। তবে এসব র্পূবপুরষদের সব বংশধারাও বর্ণনা করা সম্ভব । অনেকে উপরোক্ত বর্ণনাকে যঈফ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ সকল ওলামাদের মতে আদনান এবং হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মধ্যে চল্লিশ পুরুষের ব্যবধান রয়েছে।
মোটকথা মাআদ এর পুত্র নাজার থেকে কয়েকটি পরিবার জন্ম নেয়। এদের সম্পর্কে বলা হয় যে, উল্লিখিত মাআদ এর পুত্র ছিল মাত্র একজন, তার নাম ছিল নাজার। নাজার এর পুত্র সংখ্যা ছিল চার এবং প্রত্যেক পুত্রের বংশধর থেকে একটি করে গোত্র গড়ে ওঠে। সেই চার পুত্রের নাম ছিল ইয়াদ, আনমার, রবিয়া এবং মোদার। শেষোক্ত অর্থাৎ রবিয়া ও মোদার গোত্রের বহু শাখা প্রশাখা বিস্তার লাভ করেছে। রবিয়া থেকে আসাদ ইবনে রবিয়া, আনযাহ, আব্দুল কায়স ওয়ায়েল, বকর, তাগলাব এবং বনু হানিফের বহু গোত্র বিস্তার লাভ করে।
মোদার এর বংশধররা দুটি বড় গোত্রে বিভক্ত হয়েছিল (এক) কাইস আইনাম ইবনে মোদার (২) ইলিয়াস ইবনে মোদার।
কাইস আইলাম থেকে বনু সুলাইম বনু হাওয়াজেন, বনু গাতফান, গাতফান থেকে আরাস, জুরিয়ান, আশজা এবং গানি বিন আস্থর এর গোত্রসমুহ বিস্তার লাভ করে।
ইলিয়াস ইবনে মোদার থেকে তামিম ইবনে মাররা, বুদাইন ইবনে মাররেকা, বনু আসাদ ইবনে খুজাইমা এবকং কেনানা ইবনে খুজাইমার গোত্রসমুহ বিস্তার লাভ করে। কেনানা থেকে কোরাইশ গোত্র অস্তিত্ব লাভ করে। এ গোত্রের লোকেরা ছিল দেহের ইবনে মালেক, ইবনে নজর, ইবনে কেনানার বংশধর।
পরবর্তী সময়ে কোরাইশরা ও বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। কোরাইশ বংশের বিখ্যাত শাখাগুলোর নাম নিম্নরূপ-জমেহ, ছাহমা, আদী, মাখজুম, তাইম, কোহরা। কুসাই ইবনে ফেলারের পরিবার অর্থাৎ আবদুদ দার, আসাদ ইবনে আবদুল ওযযা এবং আবদে মান্নাফ। এ তিনজন ছিলেন কসাইয়ের পুত্র। এদের মধ্যে আবেদে মান্নাফের পুত্র ছিল চারজন। সেই চার পুত্র থেকে নিম্নোক্ত চারটি গোত্রের উৎপত্তি হয়। আবদে শামস, নওফেল, মোত্তালেব এবং হাশেম। হাশেমের বংশধর থেকে আল্লাহ পাক আমাদের প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামকে মনোনীত করেন (মোহাদেরাতে খাযরামি ১ম খন্ড. পৃ-১৪-১৫)।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ পাক ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বংশধরদের মধ্যে থেকে ইসমাইল আলাইহিস সালামকে মনোনীত করেন। এরপর ইসমাইল আলাইহিস সালামের বংশধরদের মধ্যে থেকে কেনানাকে মনোনীত করেন। কেনানার বংশধরদের থেকে কোরাইশকে মনোনীত করেন। এরপর কোরাইশ বংশধরদের মধ্য থেকে বনু হাশেমকে মনোনীত করেন। বনু হাশেম থেকে আমাকে মনোনীত করেন (সহীহ মুসলিম, ২য় খন্ড, পৃ;-২৪৫, জামে তিরিমিযি)।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন, আল্লাহ পাক মাখলুক সৃষ্টি করোর পর আমাকে সর্বোত্তম দলের মধ্যে সৃষ্টি করেন। এরপর পরিবার বাছাই করেন এবং আমাকে সবচাইতে ভালো পরিবার সৃষ্টি করেন। কাজেই আমি গোত্রর দিক থেকে উৎকৃষ্ট গোত্রজাত এবং পরবার বা খান্দানের দিক থেকে ও সর্বোত্তম (তিরিমিযি ২য় খন্ড, পৃ:২৩১)।
মোটকথা, আদনানের বংশ যখন বিস্তার লাভ করে তখন তারা খাদ্য পানীয়ের সন্ধানে আরবের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। আবদে কাইস গোত্র, বকর ইবনে ওয়ায়েলের কয়েকটি শাখা এবং বনু তামিমের পরিবারসমুহ বাহরাইন অভিমুখে রওয়ানা হয় এবং সেই এলাকায় গিয়ে বসবাস শুরু করে। বনু হানিফা ইবনে সব ইবনে আলী ইবনে বকর ইয়ামামা গমন করে এবং ইয়ামামার কেন্দ্রস্থল হেজর নামক জায়গায় বসবাস শুরু করে।
বকর ইবনে ওয়ায়েলের অবশিষ্ট শাখাসমুহ ইয়ামামা থেকে বাহরাইন, কাজেমার উপকুল ইরাক উপদ্বীপের আশেপাশে, ইবলা এবং জিয়াত পর্যন্ত এই এলাকায় বসতি স্থাপন করে।
বনু তাগলাব ফোরাত উপদ্বীপে অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। তবে তাদের কয়েকটি শাখা বনু বকরের সাথে বসবাস করেতে থাকে।
বনু সালিম মদিনার নিকটে বসতি গড়ে তোলে। ওয়াদ্লি কোরা থেকে শুর করে তারা খয়বর মদিনার পূর্বাঞ্চল হয়ে হাররায়ে বনু সোলাইমের সাথে সংশ্লিষ্ট দুটি পাহাড় পর্যন্ত ছিল তাদের বসতি এলাকা।
বনু ছাকিফ গোত্রের লোকেরা তায়েফকে বসতি স্থাপন করে। বনু হাওয়াজেন মক্কার পূর্বদিকে আওয়াস প্রান্তরের আশেপাশে বসতি গড়ে তোলে। তাদের বাসস্থান ছিল মক্কা-বসরা রাজপথের দুই পাশে।
বনু আসাদ তাইমার পূর্বদিকে এবং কুফার পশ্চিম দিকে বসবাস করতে থাকে। এদের এবং তাইমার মধ্য বনু তাঈ গোত্রের একটি পরিবার বসবাস করতো। এ পরিবারের লোকদের বলা হতো বোহতার। বনু আসাদের বাসস্থান এবং কুফার মধ্যেকার দূরত্ব ছিল পাঁচ দিনের পথ।
বনু জুবিয়ান তাইমার কাছে হাওয়ায় বসবাস করতো।
বনু কেনানা পরিবার তোহামায় বসবাস করতে থাকে। এদের মধ্যে কোরাইশী পরিবারসমুহ মক্কা ও তার আশেপাশে বসবাস করতো। এরা বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে জীবন যাপন করতো। পরবর্তীকালে কুসাই ইবনে কেলার আবির্ভূত হন এবং তিনি কোরাইশদের ঔক্যবদ্ধ করে মর্যাদা গৌরব এবং শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করেন (মোহাদেরাতে খাযরামি, ১ম খন্ড পৃ:১৫-১৬)।