অপ্রচলিত ও অপ্রসিদ্ধ শব্দসমূহ – শব্দের অর্থ নির্ণয় সংক্রান্ত সমস্যা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর
অপ্রচলিত ও অপ্রসিদ্ধ শব্দসমূহ – শব্দের অর্থ নির্ণয় সংক্রান্ত সমস্যা – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর মজহাব বনাম আহলে হাদীস গ্রন্থ হতে সংকলিত
প্রতিটি ভাষায় এমন কিছু শব্দ থাকে যেগুলোর ব্যবহার ও প্রচলন কম থাকে সে কারণে অধিকাংশ লোক সেসব সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে। আরবীতে এই ধরণের শব্দকে গরীব (غریب) বলা হয়। যার অর্থ অপ্রচলিত বা অপ্রসিদ্ধ শব্দ। ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, আমি জানতাম না “ফাতিরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি” (সূরা ফাতির-১) এর অর্থ কি পরে দুজন বেদুইন আমার নিকট আসলো তারা পরষ্পরের সাথে একটি কুপ নিয়ে বাক বিতন্ডা করছিল তাদের মধ্যে একজন বললো আমি ওটা সৃষ্টি করেছি, আমি ওটা প্রথম তৈরী করেছি। (বায়হাকী শুয়াবুল ঈমান, তাফসীরে তাবারী)
অর্থাৎ বেদুইনের মুখে ফাতির শব্দুটি শোনার পূর্বে ইবনে আব্বাস রা এর অর্থ জানতেন না। উমর রাঃ একবার মজলিসের মধ্যে সূরা নাহলের ৪৭ নং আয়াতে ব্যবহৃত তাখওয়ুফ শব্দটির অর্থ জানতে চাইলে হুজাইল গোত্রের এক ব্যক্তি বললেন,
হে আমীরুল মুমিনীন ওটা আমাদের ভাষা। আমাদের মধ্য হতে কোনো একজন ব্যাক্তি অন্য জনকে বলে তোমার দ্বীন-ঈমানের কি অবস্থাঃ উক্ত ব্যক্তি বলে তাখওয়াফতুহু এর মাধ্যমে তারা উদ্দেশ্য করে তানাক্কাসতুহু অর্থাৎ আমি আমার দ্বীন-ঈমানের মধ্যে কমতি অনুভব করছি।
উমর রাঃ বললেন, আরবদের কবিতার মধ্যে কি এ শব্দটি এই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? উক্ত ব্যক্তি হ্যা সূচক উত্তর দিয়ে একটি কবিতা পাঠ করে শোনালে উমর রাঃ খুশি হয়ে বলেন, ওহে মানব সকল তোমাদের উচিৎ জাহেলী যুগের কবিতাসমূহ মুখস্ত করা কেননা তাতে তোমাদের কিতাবের তাফসীর এবং তোমাদের ভাষার অর্থ লুকিয়ে রয়েছে। (তাফসীরুল কুরতুবী)
দেখা যাচ্ছে উমর ও ইবনে আব্বাস রাঃ এর মতো সাহাবাদের কোনো কোনো আররী শব্দের অর্থ বোঝার ক্ষেত্রে বিভিন্ন গোত্রের আরব বেদুইন ও জাহিলী যুগের কবিদের কবিতার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যে কোনো গ্রহণযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ খুললেই দেখা যাবে কোরানের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যায় তৎসময়ের কবিদের কবিতাকে শাহিদ (দলীল) হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিশেষ করে অপ্রচলিত ও অপ্রসিদ্ধ শব্দের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে এর কোনো বিকল্প নেই।
এই সকল শব্দের অর্থ নির্ণয় করতে গিয়ে আলেমদের মাঝে কখনও কখনও দ্বিমত হয়।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রঃ বলেন, আলেমদের মাঝে মতপার্থক্যের ষষ্ঠ কারণটি হলো কখনও কখনও হাদীসে ব্যাবহৃত শব্দটি গরীব (অপ্রচলিত) হওয়ার কারণে হাদীসটির অর্থ বুঝতে না পারা। যেমন মুযাবানা, মুহাকালা, মুখাবারা, মুলামাসা, মুনাবাযা, গরার এবং এছাড়া অন্যান্য শব্দ যেসবের ব্যাখ্যা সম্পর্কে আলেমদের মাঝে দ্বিমত আছে। এর উদাহরণ হিসাবে আরেকটি হাদীস পেশ করা যেতে পারে যেখানে রসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, “ইগলাকের মাধ্যমে তালাক ও দাস মুক্তি হয় না” (ইবনে মাযা, আলবানী হাসান বলেছেন)। আলেমরা বলেছেন ইগলাক অর্থ ইকরাহ বা জবরদস্তি করা। যিনি এ বিষয়ে দ্বিমত করেছেন হতে পারে তিনি এই ব্যাখ্যা জানেন না। কখনও কখনও এমনও হয় যে উক্ত আলেম যে অঞ্চলে শব্দটির অর্থ তা নয় কিন্তু তিনি শব্দটিকে নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করেন। (রফউল মালাম)
চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য ইবনে তাইমিয়া রঃ এর এই বিশ্লেষণটির মধ্যে শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
অপ্রচলিত ও অপ্রসিদ্ধ শব্দসমূহ