অজ্ঞান অবস্থায় কুফরী বলার বিধান – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর

অজ্ঞান অবস্থায় কুফরী বলার বিধান – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর

অজ্ঞান ও অবচেতন অবস্থায় কুফরী করার বিষয়টিও অজ্ঞতার মধ্যে গণ্য। এ অবস্থায় কুফরী করলে তা ধার্তব্য হবে না। যেমন, না বালেগ শিশু, পাগল বা বেহুশ ব্যক্তি, ঘুমন্ত ব্যক্তি ইত্যাদি। এই প্রকারের অজ্ঞতা তাকফিরের ক্ষেত্রে সর্বাধিক শক্ত ওযর হিসেবে গণ্য। যেহেতু আমরা উপরে অজ্ঞতার যেসব সীমা-পরিসীমা উল্লেখ করেছি এখানে সেগুলো ধার্তব্য নয়। একজন পাগল তাওহীদ রেসালাত বা অন্য যে বিধানই অস্বীকার করুক এর কারণে তাকে কাফির বলা হবে না। একইভাবে বেহুশ অবস্থায় বা ঘুমের ঘোরে একজন ব্যক্তি যে ধরণের কুফরী কথাই উচ্চারণ করুক সেটা ধার্তব্য হবে না। উক্ত বিধানটির প্রচার-প্রসার থাকা বা না থাকা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কোন এলাকায় বসবাস করে ইত্যাদি যাবতীয় নিয়ম-নীতি এখানে অকার্যকর। এই সকল বিষয়কে ওযর হিসেবে গণ্য করার দলিল হলো রাসুলুল্লাহ সাঃ এর হাদীস-

তিন জন ব্যক্তির ব্যাপারে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে (তাদের কোনো পাপ লেখা হয় না)- ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জেগে ওঠে, না-বালেগ শিশু যতদিন না সে বালেগ হয়, বোধহীন ব্যক্তি(পাগল বা বেহুশ) যতদিন না তার সুস্থ বোধ ফিরে আসে। (ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদিসটি হাসান গরীব। হাকিম মুস্তাদরাকে বর্ণনা করেছেন এবং সহীহ বলেছেন। ইমাম আজ-জাহাবী বলেছেন, হাদীসটি ইমাম মুসলিমের শর্তে সহীহ। শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।) মিশকাত-৩২৮৭}[আবু দাউদ ও তিরমিযী]

বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কিছু দ্বিমত থাকলেও সাধারনভাবে সমস্ত ওলামায়ে কিরাম এই হাদীসের উপর আমল করার ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তারা ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে এই সকল ব্যক্তিদের ওযরপ্রাপ্ত হিসেবে গণ্য করেছেন।

হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ ফিকাহ্ গ্রন্থ হেদায়াতে এসেছে, যেসব শিশুরা কিছুই বোঝেনা তারা কোনো কুফরী করলে তা ধার্তব্য নয়। যেহেতু তার কথা তার আক্বীদা পরিবর্তন বলে গণ্য নয়। পাগল ও মাতালের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। যতক্ষণ না তাদের জ্ঞান ফিরে আসে।

ইবনে হুমাম রঃ এর ব্যাখ্যায় বলেন, “পাগলের কুফরী করা বা ইসলাম গ্রহণ করা ইত্যাদি কোনো কিছুই ধার্তব্য নয় এ ব্যাপারে ইজমা সম্পাদিত হয়েছে। (ফাতহুল কাদীর) হাম্বালী মাজহাবের ফিকাহ্ গ্রন্থ আল-ইকনাতে বলা হয়েছে- অবুঝ শিশু, পাগল এবং ঘুমন্ত ব্যক্তি, কোনো বৈধ ঔষধ সেবন করা বা অন্য কোন কারণে জ্ঞানহারা ব্যক্তি কুফরী কথা বললে তা ধার্তব্য হবে না। এই অবস্থায় কোনো কাফির মুসলিম হলে সেটাও ধার্তব্য হবে না। কেননা এমন ব্যক্তির কথার কোনো মূল্য নেই।

ইবনে কুদামা রঃ আল-মুগনীতে অনুরুপ কথা বলেছেন। তিনি ইবনে মুনযির থেকে আরো উল্লেখ করেন, আমি যেসব আলেমদের কথা জানি সকলে এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, যদি কোনো মুসলিম পাগল অবস্থায় কুফরী কথা উচ্চারণ করে তবে সে পূর্বের মতোই মুসলিম বলে গণ্য হবে যদি কেউ তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে তবে নিহতের অভিভাবকরা হত্যার বিনিময়ে হত্যা দাবী করলে সেটাই করা হবে। (আল-মুগনী)

ইমাম নাব্বী রঃ বলেন, শিশু ও পাগলের কুফরী ধার্তব্য হবে না। (আল-মাজমু)

অজ্ঞান অবস্থায় কুফরী বলার বিধান

লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, অজ্ঞতার কারণে না-বালেগ শিশু বা পাগলকে তাকফীরের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে কেবল যখন জন্ম সূত্রে বা মুসলিমদের হাতে বন্দি হওয়ার মাধ্যমে মুসলিম হিসেবে গণ্য হওয়ার পর না-বালেগ অবস্থায় বা পাগল অবস্থায় কুফরীতে লিপ্ত হয়। পাগল ও না বালেগ শিশুর ক্ষেত্রে ইসলাম গ্রহণের প্রথম পন্থা তথা মুখে তাওহীদ ও রেসালাতের স্বীকৃতি দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের কুফরী কথা যেমন ধার্তব্য নয় একইভাবে তাদের ইসলাম গ্রহণও ধার্তব্য নয়। তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী দুটি পন্থা প্রযোজ্য তথা পিতা-মাতা মুসলিম হওয়া বা মুসলিমদের হাতে বন্দি হওয়া। যদি উপরোক্ত দুটি পন্থায় তারা মুসলিম হিসেবে গণ্য না হয় তাহলে তারা দুনিয়ার বিধানে কাফির হিসেবেই গণ্য হবে যেমনটি পূর্বে আমরা বলেছি। তবে তাদের হত্যা করা বৈধ হবে না। যেভাবে ইসলামের দাওয়াত যার নিকট পৌছায়নি এমন কাফিরকে হত্যা করা অবৈধ হয়। কিন্তু যদি কোনো মুসলিম ঐ অবস্থায় তাদের হত্যা করে তবে তার কিসাস হবে না।

ইমাম নাব্বী রঃ বলেন, পাগল ও অবুঝ শিশু নিজে ইসলাম গ্রহণ করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তারা মুসলিম হবে কেবল অন্য কারো সাথে সম্পর্কিত হয়ে। (রাওদাতুত্ তালেবীন)

অজ্ঞান অবস্থায় কুফরী বলার বিধান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *