হারাম কাজের আদেশ দেওয়ার বিধান – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মূনীর

হারাম কাজের আদেশ দেওয়ার বিধান – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মূনীর এর প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

আমরা পূর্বের পোস্টে আলোচনায় বলেছি, হারামকে হালাল মনে করা স্পষ্ট কুফরী। এ ব্যাপারে উম্মতে মুসলিমার ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে হারামকে হালাল মনে করার ব্যাখ্যা সম্পর্কে বেশ কিছু ভুল ধারনা প্রচলিত আছে। কেউ কেউ মনে করেন সরকারীভাবে কোনো হারাম কাজের অনুমতি প্রদান করা হলে বা পারমিশন দেওয়া হলে তা উক্ত হারাম কাজকে হালাল মনে করা হিসেবে গন্য। ফলে এটা কুফরী হবে। যেমন মদ বিক্রয় করা বা পতীতালয় খোলার লাইসেন্স প্রদান ইত্যাদি। তাদের দাবী, হালাল হারাম অর্থ বৈধ-অবৈধ। যারা একটি অবৈধ কাজকে লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে অনুমতি দেয় তারা মূলত কাজটিকে বৈধ তথা হালালে পরিনত করে একারণে তারা কাফির হবে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, একটিও মূলত খারেজীদের আক্বীদার নবসংস্করণ। যেহেতু এর মাধ্যমে হারাম কাজে লিপ্ত যে কোনো ব্যক্তিকে কাফিরে পরিনত করা যায়। কেননা যে নিজে হারাম কাজে লিপ্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে অন্যকে উক্ত হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। যে নিজে মদ পান করে সে নিজের বাড়িতে বন্ধুদের মদপান করার অনুমতি প্রদান করবে এটাই স্বাভাবিক। যে নিজে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলে না সে স্বীয় স্ত্রী, কন্যাদের বেপর্দা হাটে বাজারে ঘোরা-ফিরা করার অনুমতি প্রদান করে থাকে। কোনো কোনো বেহায়া পুরুষ তো নিজ স্ত্রী-কন্যাদের পরপুরুষের সাথে সম্পর্ক করার খোলামেলা অনুমোদন প্রদান করে। যখন একটি নারী অন্য পুরুষের সাহিত জেনায় লিপ্ত হয় তখন সে উক্ত পুরুষকে তার সহিত এই অপকর্ম করার অনুমতি প্রদান করে। তার অনুমতি ছাড়া উক্ত পুরুষের পক্ষে এহেন নিকৃষ্ট কাজ করা সম্ভব হতো না। মদ বিক্রেতা তার নিজের উপার্জনের জন্য অন্যকে মদ পান করার সুযোগ করে দেয়। যদি হারাম কাজের অনুমতি প্রদান করা কুফরী হয় তবে এই সকল ক্ষেত্রে কুফরীর ফতোয়া জারী করতে হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, “হারাম কাজের অনুমতি দিলে হারামকে হালালে পরিনত করা হয় এবং একারণে বিষয়টি কুফরী হয়” এই মূলনীতিটি কেবল রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। যে স্বামী স্বীয় স্ত্রীকে জেনা করার অনুমতি প্রদান করে, যে বাবা তার কন্যাদের বেপর্দা চলাফেরা করা বা এমনকি বয়ফ্রেন্ডদের সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার অবাধ স্বাধীনতা প্রদান করে তাদের ক্ষেত্রে এই মূলনীতি প্রয়োগ করা হয় না। এমন বৈষম্য কেনো করা হয়? অথচ রসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,

তোমাদের প্রত্যেকেই কর্তৃত্বশীল এবং স্বীয় কর্তৃত্বে থাকা বিষয়াবলী সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে। রাষ্ট্রপ্রধান তার প্রজাদের ব্যাপারে কর্তৃত্বশীল। তাকে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের লোকদের ব্যাপারে কর্তৃত্বশীল। তাকে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন মহিলা তার স্বামীর গৃহে কর্তৃত্বশীল তাকে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। একজন চাকর তার মনিবের সম্পদের উপর কর্তৃত্বশীল তাকে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

সুতরাং যদি নিজ কর্তৃত্বের অধীনে কাউকে হারাম কাজের অনুমতি প্রদান করলে সেটা হারামকে হালাল করা হিসেবে গণ্য হয় এবং কুফরী হয় তবে কেবল রাষ্ট্রপ্রধান নয় বরং এই সকল শ্রেণীর লোকেরা কাফিরে পরিনত হবে। আর বলাবাহুল্য যে এভাবে সকল প্রকার পাপী ও অপরাধীরা কাফিরে পরিনত হবে এবং খারেজীদের মতবাদ প্রতিষ্টিত হবে। এখানে যে বিষয়টি স্মরণ রাখতে হবে তা হলো,

হারাম কাজে নিজে লিপ্ত হওয়া যেমন কুফরী নয় অন্যকে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার মৌখিক বা লিখিত অনুমতি দেওয়া বা আদেশ দেওয়া বা এমনকি বাধ্য করাও কুফরী নয়। সেটা ব্যক্তিগতভাবে হোক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে। আল্লাহর বিধান সকলের জন্য সমান। একই বিষয় রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য কুফরী কিন্তু অন্যদের জন্য কুফরী নয় এমন হতে পারে না।

হারাম কাজের আদেশ দেওয়ার বিধান
হারাম কাজের আদেশ দেওয়ার বিধান

খোলাফায়ে রাশিদা তথা চার খলিফার যুগ অতিবাহিত হওয়া পর হতেই বিভিন্ন খলীফা রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন ফরমান জারী করতেন যাতে প্রজাদের বিভিন্নপ্রকার হারাম কাজে বাধ্য করা হতো। উমায়্যাদের শাসনামলে ইসলামী সম্রাজ্যের সকল প্রদেশে জুম্মার খুতবায় আলী রাঃ কে গালি দেওয়ার নির্দেশ ছিল। উমর ইবনে আব্দিল আজিজ রাঃ খলীফা হওয়ার পর সে প্রথা বাতিল করেন। অথচ মুসলিমকে গালি দেওয়া অবৈধ। এ ব্যাপারে ‍সাধারন নির্দেশ রয়েছে। আর আলী রাঃ এর ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা আছে। আলী রাঃ বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃ আমার সাথে ওয়াদা করেছেন যে, আমাকে কেবল মুমিনরাই ভালবাসবে আর কেবলমাত্র মুনাফিকরাই আমাকে ঘৃণা করবে। (সহীহ্ মুসলিম)

এছাড়া জনসাধারনের উপর বিভিন্ন প্রকার অবৈধ কর আরোপ এবং সেগুলো বাধ্যতামূলকভাবে আদায় করার জন্য লোক নিয়োগ করা। সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ যুদ্ধ-বিগ্রহ ও খুনো-খুনিতে লিপ্ত করা। কোনো এলাকা বিজিত হলে সেনাবাহিনীর জন্য সেখানে হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন ইত্যাদি যা খুশি তাই করার অনুমতি প্রদান করা ইত্যাদি ঘটনা তখনকার যুগের নিত্যনৈমিত্যিক ব্যাপার ছিল। ইতিহাসের গ্রন্থসমূহে এসব বিষয়ে অঢেল দলিল প্রমাণ রয়েছে। এসব বিষয় নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত পাপাচার হিসেবে গন্য তবে এগুলো কুফরী নয়।

হারাম কাজের আদেশ দেওয়ার বিধান – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মূনীর এর প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *