হযরত তালহা ইবন ওবায়দুল্লাহ (রা.) এর জীবনী। bd islamic site

ওহুদ যুদ্ধে হযরত তালহার ভূমিকার কারণে রাসূল (সা.) বলেছিলেন, ‘কেউ যদি কোন মৃত ব্যক্তিকে দুনিয়ায় হেঁটে বেড়াতে আনন্দ পেতে চায়, সে যেনো তালহা ইবন ওবায়দুল্লাহকে দেখে’।
তাঁর নাম তালহা। ডাক নাম আবূ মুহাম্মদ তালহা ও আবূ মুহাম্মদ ফাইয়াজ। আব্বার নাম ওবায়দুল্লাহ এবং মা’র নাম সোবাহ বা সা’বা। তালহার বংশগত সম্পর্ক সপ্তম পুরুষ গিয়ে রাসূল (সা.)-এর বংশ লতিকার সাথে মিলিত হয়েছে। অপর দিকে তাঁর মা সোবাহ (রা.) প্রখ্যাত সাহাবী আলী ইবনুল হাদরামীর (রা.) বোন ছিলেন।
রাসূল (সা.)-এর নবুয়াত প্রাপ্তির প্রথম দিকেই তালহা (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র পনেরো বছর। হযরত তালহা (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণ ছিলো একটি চমকপ্রদ ঘটনা। ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে ঐ কিশোর বয়সেই অন্যান্য আরব ব্যবসায়ীর সাথে তালহা (রা.) ব্যবসায়িক কাজে বসরা যান। তাদের বাণিজ্য কাফেলা বসরা শহরে পৌঁছানোর পর সবাই কেনা-বেচার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এরই এক পর্যায়ে তালহা (রা.) অন্যান্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তিনি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বাজারে ঘোরাফেরার সময়ে এমন একটি ঘোষণা শুনলেন যা তাঁর জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিলো। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি তখন বসরার বাজারে। একজন খ্রিস্টান পাদ্রীকে ঘোষণা করতে শুনলাম ‘ওহে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। আপনারা এ বাজারে আগত লোকদের জিজ্ঞেস করুন, তাদের মধ্যে মক্কাবাসী কোন লোক আছে কিনা’। আমি নিকটেই ছিলাম। দ্রুত তার কাছে গিয়ে বললাম, ‘হ্যাঁ, আমি মক্কার লোক’। জিজ্ঞেস করলেন,

‘তোমাদের মধ্যে আহমদ কি আত্মপ্রকাশ করেছেন?’ বললাম, ‘কোন আহমদ?’ বললেন, ‘আবদুল্লাহ ইবন আবদিল মুত্তালিবের পুত্র। যে মাসে তিনি আত্মপ্রকাশ করবেন, এটা সেই মাস। তিনি হবেন শেষ নবী। মক্কায় আত্মপ্রকাশ করে কালো পাথর ও খেজুর উদ্যান বিশিষ্ট ভূমির দিকে হিজরত করবেন। যুবক, খুব তাড়াতাড়ি তোমার ‘তাঁর কাছে যাওয়া উচিত’। এরপর তালহা (রা.) বলেন, তাঁর এ কথা আমার অন্তরে দারুণ প্রভাব বিস্তার করলো। আমি আমার কাফেলা ফেলে রেখে বাহনে সওয়ার হলাম। বাড়িতে পৌঁছেই পরিবারের লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, আমার যাওয়ার পর মক্কায় নতুন কিছু কি ঘটেছে? তারা বললো, ‘হ্যাঁ, মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ (সা.) নিজেকে নবী বলে দাবী করছেন এবং আবূ কুহাফার ছেলে আবূ বকর তাঁর অনুসারী হয়েছেন’।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আবূ বকরের (রা.) কাছে গেলাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করলাম- এ কথা কি সত্যি যে, মুহাম্মদ নবুয়াত দাবী করেছেন এবং আপনি তাঁর অনুসারী হয়েছেন?’ তিনি বললেন হ্যাঁ, তারপর আমাকেও ইসলামের দাওয়াত দিলেন। আমি তখন তাঁর কাছে খ্রিস্টান পাদরীর সব কথা খুলে বললাম। অতঃপর তিনি আমাকে রাসূল (সা.)-এর কাছে নিয়ে গেলেন। আমি সেখানে কলেমা শাহাদাত পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করলাম এবং নবী (সা.)-এর কাছে পাদরীর সব কথা বললাম। তিনি শুনে খুব খুশি হলেন। এভাবে আমি হলাম হযরত আবূ বকর (রা.)-এর হাতে চতুর্থ ইসলাম গ্রহণকারী।
হযরত তালহা (রা.)-এর আব্বা ওবাইদুল্লাহ রাসূল (সা.)-এর নবুওয়াত লাভের পূর্বেই ইন্তেকাল করেন। তবে তাঁর মা সোবাহ ইসলাম গ্রহণ করেন এবং দীর্ঘজীবী হন। একটা ঘটনা থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। হযরত ওসমান (রা.) যখন বিদ্রোহীদের দ্বারা অবরুদ্ধ ছিলেন তখন সোবাহ (রা.) হযরত তালহা (রা.) কে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘বাবা! তুমি স্বীয় ব্যক্তিত্বের প্রভাবে বিদ্রোহীদেরকে সরিয়ে দাও’। এ সময় তালহার (রা.) বয়স ষাট বছর। এ হিসাব মতে সোবাহ (রা.) কমপক্ষে আশি বছর যাবত ছিলেন।
তালহা’র (রা.) শৈশব-কৈশোর সম্বন্ধে তেমন কিছুই জানা যায় না। এটুকু জানা যায় যে, তিনি রাসূল (সা.)-এর মদীনায় হিজরতের চব্বিশ কি পঁচিশ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন। আর একটা ব্যাপারে সবাই একমত- তা হলো তিনি খুব শৈশবকাল থেকেই ব্যবসার সাথে জড়িত হন এবং একটু বড় হলেই ব্যবসায়িক কাজে দেশ-বিদেশে গমন করেন। অন্যান্যের মতো হযরত তালহা (রা.) ইসলাম গ্রহণ করার পর নানাভাবে অত্যাচারিত হন। বিশেষ করে তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের পক্ষ থেকে তাঁর ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয় বেশি। এ ব্যাপারে তাঁর মা সোবাহও কম ছিলেন না। মাসউদ ইবন খারাশ বলেন, ‘একদিন আমি সাফা মারওয়ার মাঝখানে দৌড়াচ্ছি, এমন সময় দেখলাম, একদল লোক হাত পা বাঁধা একটি যুবককে ধরে টেনে নিয়ে আসছে। তারপর তাকে উপুড় করে শুইয়ে তাঁর পিঠে ও মাতার বেদম মার শুরু করলো। তাদের পেছনে একজন বৃদ্ধা মহিলা চেঁচিয়ে গলা ফাটিয়ে তাকে গাল দিচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম- ছেলেটির এ অবস্থা কেন? তারা বললো, এ হচ্ছে তালহা ইবন ওবাইদুল্লাহ। পৈতৃক ধর্ম ত্যাগ করে বানূ হাশিমের সেই লোকটির অনুসারী হয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম, এই মহিলাটি কে? তারা বললো, সোবাহ বিনতু আল হাদরামী, যুবকটির মা।
তালহার আপন ভাই ওসমান ইবন ওবাইদুল্লাহ এবং কুরাইশদের সিংহ বলে পরিচিত নাওফিল ইবন খুয়াইলিদও তাঁর সাথে নির্দয় ব্যবহার করে। তারা একই রশিতে তালহা (রা.) ও হযরত আবূ বকরকে এক রশিতে বাঁধা হয়েছিলো এ জন্য তাদেরকে বলা হয় ‘কারীনান’।