বাধ্য হয়ে কুফরীতে তাওরিয়া অবলম্বন করা বা বাধ্য হয়ে কুফরী করার ক্ষেত্রে যতদূর সম্ভব তাওরিয়া (تورية ) অবলম্বন করা

বাধ্য হয়ে কুফরীতে তাওরিয়া অবলম্বন করা বা বাধ্য হয়ে কুফরী করার ক্ষেত্রে যতদূর সম্ভব তাওরিয়া (تورية ) অবলম্বন করা শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর

আরবী তাওরিয়া শব্দটি এসেছে, ওয়ারা (وراء) শব্দ হতে যার অর্থ পিছনে রাখা বা গোপন করা। তাওরিয়া অর্থ কোনো মিথ্যা বা ভ্রান্ত কথা সরাসরি উচ্চারণ না করে অস্পষ্টভাবে উচ্চারণ করা যাতে বক্তার উদ্দেশ্য হয় একরকম আর শ্রোতা ভাবে অন্যরকম। উদাহরণস্বরুপ কাফিররা যদি কোনো মুসলিমকে হত্যার ভয় দেখিয়ে আল্লাহর রাসুলের নামে গালি দিতে বাধ্য করে তবে সে মুখে মুহাম্মাদ নাম উচ্চারণ করবে কিন্তু অন্তরে আল্লাহর রাসুলকে উদ্দেশ্য না করে মুহাম্মাদ নামের অন্য কোনো ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করবে। ওলামায়ে কিরাম বলেছেন কাউকে কুফরীর উপর বাধ্য করা হলে তার উচিৎ যতদূর সম্ভব তাওরিয়া করা তথা কথার ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা অবলম্বন করা।

ইমাম কুরতুবী রঃ বলেন, মুহাক্কিক ওলামায়ে কিরাম বলেছেন, যখন কেউ কুফরী কথা বলতে বাধ্য হয় তার জন্য সরাসরি তা উচ্চারণ করা বৈধ নয়। সে মুখে যা উচ্চারণ করবে অন্তরে ভিন্ন অর্থ গোপণ রাখবে। (তাফসীরে কুরতুবী)

ইমাম কুরতুবী রঃ আরো বলেন, যদি সে এমন না করে তবে সে কাফির হয়ে যাবে কেননা অন্তরের ইচ্ছার উপর কাউকে বাধ্য বলে গণ্য করা যায় না। (তাফসীরে কুরতুবী)

আল-মাওরুদী রঃ বলেন, “এভাবে অস্পষ্ট ভাষায় কুফরী উচ্চারণ করাই উত্তম তবে স্পষ্ট ভাষায় তা উচ্চারণ করলে কেউ কাফির হবে না।

হানাফী মাজহাবের ওলামায়ে কিরাম এ ব্যাপারে সুন্দর বিশ্লেষণ উল্লেখ করেছেন। বাহরুর রায়েকে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তিকে রাসুলুল্লাহ সাঃ কে গালি দিতে বাধ্য করা হয় তার ব্যাপারটি তিন রকম হতে পারে।

১। হয়তো সে বলবে, অন্তরে আমি কাউকেই গালি দেওয়ার নিয়ত করিনি। মুখে আমাকে যা বলতে বাধ্য করা হয়েছে কেবল তাই বলেছি। এই ব্যক্তি কাফির হবে না।

২। যদি সে বলে, গালি দেওয়ার সময় মুহাম্মাদ নামের এক ইয়াহুদীর কথা স্মরণ হয়েছিল আমি তাকে গালি দিয়েছি। এই ব্যক্তিও কাফির হবে না।

৩। যদি সে বলে, গালি দেওয়ার সময় মুহাম্মদ নামের এক ইয়াহুদীর কথা আমার স্মরণ হয়েছিল কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি রাসুলুল্লাহ সাঃ কে গালি দিয়েছি তবে এই ব্যক্তি কাফির হবে। মোট কথা বাধ্য হয়ে কুফরী করা কেবল তখন ওযর হিসেবে গণ্য হবে যখন কারো অন্তরে পরিপূর্ণ ঈমান উপস্থিত থাকবে। তাই মুখে কুফরী উচ্চারণের সময় অন্তরকে সম্পূর্ণভাবে কুফরী থেকে দূরে রাখতে হবে। মুখে যতদূর সম্ভব অস্পষ্ট শব্দ উচ্চারণ করতে হবে আর অন্তরে কুফরীর পরিবর্তে অন্য কোনো উদ্দেশ্য গোপণ রাখতে হবে। এর বিপরীত করলে, কুফরীর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ বলে গণ্য হবে এবং কুফরী হবে। কিন্তু যদি পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে কারো অন্তরে কিছুই উদয় না হয় বা শব্দ উচ্চারণের ক্ষেত্রে চাতুর্যতা প্রদর্শনে সে অদক্ষ হয় তবে তাকে কাফির বলা যাবে না।

বাধ্য হয়ে কুফরীতে তাওরিয়া অবলম্বন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *