তোমার দ্বীন তোমার আমার দ্বীন আমার – এই আয়াতটির সঠিক মর্মার্থ – #শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মূনীর#

তোমার দ্বীন তোমার আমার দ্বীন আমার – এই আয়াতটির সঠিক মর্মার্থ – #শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মূনীর# এর গবেষণা মূলক প্রবন্ধটি পড়ুন এবং আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন

যারা মনে করে তোমার দ্বীন তোমার আমার দ্বীন আমার এ আয়াতে কাফিরদে নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করার পরিপূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়েছে। তারা উপরের আয়াতটির মতো এ আয়াতটির ব্যাপারেও স্পষ্ট ভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে। একটি উদহরণের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করা যায়।

ধরুন একদিন সন্ধায় আপনার এক আপনার নিকট আবদার করে বললো।

-চলো এখন গহরহাটির মেলা থেকে ঘুরে আসি।

আপনি ভাবলেন গহরহাটি বহুদুর, তাছাড়া গয়েষ পুরের মোড় পার হওয়ার পর থেকে আর কোন জনবসতি নেই। জিন-ভুত যদি ছেড়েও দেয় চোর ডাকাত যে আক্রমন করতে পারে তার সম্ভবনা প্রকট। দু একদিন অন্তর অন্তর সেধরণের খবরও আপনার কানে আসে। আপনি নিতান্ত মমতা মাখা কন্ঠে বন্ধুকে সব ঘটনা খুলে বললেন এবং তাকে বারবার নিষধ করলেন। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা। বন্ধুর অসহনীয় পিড়াপিড়িতে বিরক্ত ও রাগান্বিত হয়ে আপনি চিৎকার করে বললেন,

-তোর কাজ তুই কর আমার কাজ আমি করি।

আপনার এই কথা শুনে যদি আপনার বন্ধু মনে করে আপনি তাকে গহরহাটির মেলা দেখতে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন বা তাকে সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মতি প্রদান করছেন তবে এটা কি সুস্থ ভাষা জ্ঞান বলে গণ্য হবে?

উপরোক্ত আয়াতটির অর্থ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও একই বোকামী করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাঃ নবুয়ত প্রাপ্তির পর হতে দিন-রাত পরিশ্রম করে কাফির-মুশরিকদের বাতিল ধর্ম বিশ্বাস পরিত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণের জন্য আহ্বান করছেন। তাদের শিরক-কুফরের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করছেন। কিন্তু তারা সেসব সতর্কবাণী দম্ভভরে উপেক্ষা করে চলেছে। এ কারণে রাসুলুল্লাহ সাঃ ও অন্যান্য মুসলিমদের সাথে কাফিরদের সংঘর্ষ তীব্র থেকে তীব্র হয়ে উঠেছে। এমন এক পরিস্থিতিতে একবার কাফিররা সম্মিলিত হয়ে এসব সংঘর্ষ নিরসনকল্পে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নিকট সর্বধর্মীয় জোট গঠন করার প্রস্তাব নিয়ে আসে। তারা বলে, আমরা কিছু দিন আপনার ধর্ম পালন করবো আর আপনারা কিছুদিন আমাদের ধর্ম পালন করবেন।

তাফসীরে তাবারীতে বিষয়টি এভাবে লেখা আছে,

“মুশরিকরা বলল আমরা, একবছর আল্লাহর ইবাদত করব আর আপনি এক বছর আমাদের ইলাহসমূহের ইবাদত করবেন।”

তখন আল্লাহ তায়ালা সূরা কাফিরুণে সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দেন, “হে রসুল আপনি বলে দিন তোমাদের দ্বীন তোমার আর আমার দ্বীন আমার ” (সূরা কাফেরুন-৬)

এখানে কুফরী ধর্মের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে বা কুফরীতে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি প্রদান করে একথা বলা হয়নি। বরং কুফরী ধর্মের প্রতি বিরক্ত হয়ে এবং কুফরী-কার্য্‌ক্রমকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেই এটা বলা হয়েছে। একারণে সূরা কাফেরুন সম্পর্কে রসুলুল্লাহ সাঃ নিজেই বলেন, “এটা হলো, শিরক থেকে সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করা”। (আবু দাউদ, তিরমিযী) অন্য আয়াতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে,

যদি তারা আপনার কথাকে মিথ্যা বলে তবে আপনি বলুন, আমার কাজ আমি করি তোমাদের কাজ তোমরা করো। আমার কাজের সাথে তোমাদের কোনো সম্পর্ক নেই তোমাদের কাজের সাথেও আমার কোনো সম্পর্ক নেই। (সুরা ইউনুস-৪১)

এই স্পষ্ট বিষয়টি যারা বুঝে উঠতে সক্ষম হন না ইসলাম সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করার কোনো অধিকারই তাদের নেই। এই সব চিন্তাবিদদের কারণে মুসলিম উম্মার দুঃচিন্তাই কেবল বাড়তে থাকবে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সুতরাং একজন মুসলিম কখনই বিধর্মীদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও তাদের উপাস্যসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান প্রদর্শন করতে পারে না। যে এমন করে সে কাফির হয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *