ইসলামে যুদ্ধ-বিগ্রহ তথা জিহাদ বা কিতাল – শায়েখ আব্দুল্লাহ আল-মুনীর

ইসলামে যুদ্ধ বিগ্রহ প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।

ইসলাম সম্পর্কে এক শ্রেণীর লোকের আপত্তি হলো, এটা মানুষকে মারা-মারি, হানা-হানি করতে উৎসাহিত করে। এ বিষয়ে কথা হলো, অকারণে খুনো-খুনি, হানা-হানি ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। রসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,

যে ব্যক্তি অন্ধকার পতাকাতলে যুদ্ধ করে, অন্যায়ভাবে নিজের গোত্রের পক্ষে উত্তেজিত হয়ে ওঠে অথবা গোত্রপ্রীতির দিকে মানুষকে ডাকে এবং অন্যায়ভাবে স্বগোত্রীয়দের সহযোগিতা করে সে যদি এভাবে মারা যায় তবে তার মৃত্যু হবে জাহেলী মৃত্যু। (সহীহ মুসলিম)

এখানে অন্ধকার পতাকা বলতে বোঝানো হয়েছে নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ-উদ্দেশ্য ছাড়া বা নিতান্ত মামুলী কারণে যুদ্ধ-বিগ্রহে জড়িয়ে পড়া। যেমনটি ইসলামপূর্ব আরব সমাজের নিত্যকার ঘটনা ছিল এবং বর্তমানে অহরহ ঘটে থাকে।

একজন ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাঃ কে প্রশ্ন করলেন, কেউ তো যুদ্ধ করে বীরত্ব প্রকাশের জন্য আবার কেউ যুদ্ধ করে সম্পদ হাসিল করার জন্য। এদের মধ্যে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে কে? রসুলুল্লাহ্ সাঃ বললেন, যে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য যুদ্ধ করে সেই মূলত আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে। (বুখারী ও মুসলিম)

ইসলাম আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধ করতে আদেশ করে। যেসব মানুষ আল্লাহর জমিনে বসবাস করে, আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক ভক্ষণ করে কিন্তু আল্লাহর উপর ঈমান আনে না এবং সত্য ধর্ম ইসলাম কবুল করে না তাদের সামনে তিনটি পথ খোলা রয়েছে। হয়তো তারা মুসলিম হয়ে যাবে অথবা জিজিয়া প্রদান করে ইসলামী রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার করবে নয়তো মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

ঐ সকল আহলে কিতাবীদের সাথে যুদ্ধ করো যারা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসে বিশ্বাস করে না, আল্লাহ ও তার রসুল যা হারাম করেছেন তা হারাম হিসেবে গ্রহণ করে না, এবং সত্য দ্বীনকে গ্রহণ করে না। যতক্ষণ না তারা অপমানিত অবস্থায় স্বহস্তে জিজিয়া কর প্রদান করে। (সূরা তাওবা/২৯)

রসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,

এক আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন না করা পর্য্ন্ত আমাকে মানুষের সাথে যুদ্ধ করতে আদেশ করা হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)

এ স্থানে কাফিররা আপত্তি করে বলে, ইসলাম একটি অসহিষ্ঞ ধর্ম। অন্য ধর্ম ও তার অনুসারীদের প্রতি যথেষ্ট পরিমান শ্রদ্ধা-সম্মান ও সহানুভুতি প্রদর্শন করা উচিৎ। প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ও অধিকার থাকা উচিৎ ইত্যাদি। এদের প্রচারে প্রতারিত হয়ে কিছু কিছু চৈতন্যহীন ইসলামী চিন্তাবিদ জিহাদের বিধানটির অপব্যাখ্যা করে থাকেন। তারা বলেন, জিহাদ কেবল আত্মরক্ষার জন্য হয়ে থাকে, দ্বীন রক্ষার জন্য নয়। মুসলিমদের দেওয়ালেপিঠ না ঠেকা পর্য্ন্ত তারা অস্ত্র ধরে না। অর্থাৎ কাফিররা আল্লাহর দ্বীনের যা কিছু ক্ষয়-ক্ষতি সাধন করুক তাতে মুসলিমদের টনক নড়েনা যতক্ষণ না তদের পিঠ ও পেটে আঘাত করা হয়। এরা সমস্ত মুসলিমদের নিজেদের মতো দুনিয়া লোভী ও স্বার্থান্বেষী মনে করে থাকে। অথচ আয়েশা রাঃ বলেন,

রসুলুল্লাহ সাঃ তার নিজের ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না তবে আল্লাহর দ্বীনের অবমাননা করা হলে তিনি আল্লাহর জন্য সেটার প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন। (সহীহ বুখারী)

অর্থাৎ রসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট তার নিজের জীবন অপেক্ষা আল্লাহর দ্বীন বেশি প্রিয় ছিল। ফলে তিনি আত্মরক্ষার তুলনায় দ্বীন রক্ষার উপর গুরুত্ব প্রদান করতেন বেশি। কিন্তু বর্তমান সময়কার অধিকাংশ ইসলামী চিন্তাবিদ নিজেদের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে অধিক সচেতন। তাই তারা আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য লড়াই করতে অস্বীকার করেন। তবে নিজের পেট ও পিঠ রক্ষার তাগিদে লড়াই করতে হলে সদা সর্বদা প্রস্তুত আছেন। এ বিষয়টিকে উদারতা বলা সঠিক নয় বরং এটা উদারতা বা পেট পূজা হিসেবে গন্য।

কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হলো, মুসলিমরা ইসলামকে একমাত্র সত্য ধর্ম বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্ম ও মতকে শিরক ও কুফর তথা জাহেলিয়াতের অন্ধকার ও দু্র্গন্ধময় আক্বীদা-বিশ্বাস বলে মনে করে। প্রতিটি মুসলিম মনে প্রাণে ইসলামের বিজয় ও কুফরীর ধ্বংস কামনা করে। যার অন্তরে এই সব ব্যাপারে সামান্য পরিমান সন্দেহ বা সংশয় অবশিষ্ট আছে সে মুসলিম হিসেবে গন্য হতে পারে না।

যারা অন্য ধর্ম ও তার অনুসারীদের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান প্রদর্শন ও তাদের নিজ নিজ মতের উপর স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে তারা মনে করে সকল ধর্মই মানব রচিত। এখানে সত্য-মিথ্যা বলে কিছু নেই। বরং এগুলো কিছু মানুষের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়। অতএব, একজনের উচিৎ নয় নিজের মত অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া। বরং এ ব্যাপারে একে অপরকে যতদূর সম্ভব ছাড় দিতে হবে। ধর্ম ও মতের উর্দ্ধে এসে সকল মানুষকে সমানভাবে বিচার করতে হবে।

অপরদিকে ইসলাম অন্য ধর্মের লোকদের উপর আক্রমণ করে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করে বা কমপক্ষে ইসলামী রাষ্ট্রের অনুগত নাগরিক হিসেবে বিভিন্ন প্রকার শর্ত মেনে নিয়ে জিজিয়া কর প্রদান করতে বাধ্য করে কারণ ইসলাম হলো, মহাবিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ জীবন বিধান। আর অন্য সকল ধর্ম হলো মানব রচিত ও মস্তিস্কপ্রসূত। যারা এই বিষয়টিকে অসহিষ্ঞু হিসেবে গন্য করে তাদের নিকট প্রশ্ন হলো, সত্য কি কখনও মিথ্যাকে সহ্য করে? সত্য কি চায় মিথ্যা স্বাধীনভাবে বিকশিত হোক? যখন স্পষ্ট জানা যায় কোনো একজন ডাক্তার ভুল পদ্ধতিতে রোগী চিকিৎসা করে থাকে তখন তাকে সহ্য করা উচি? নাকি বাঁধা দেওয়া উচিৎ? মিথ্যাকে সহ্য করা ও সম্মান করাই কি সঠিক চিন্তাধারা নাকি মিথ্যাকে ধ্বংস করা ও বাধাগ্রস্থ করা?

সত্যকে বিজয়ী করা ও মিথ্যা ও অন্যায়কে ধ্বংস করাই বীরত্বের পরিচয়, অ্যায়কে সহ্য করা নয়। এটা সর্বস্বীকৃত একটি মূলনীতি। এ বিষয়ে লম্বা আলোচনার প্রয়োজন নেই। এখন বাকী থাকে কেবল একটি কথা আর তা হলো ইসলাম একমাত্র সত্য ধর্ম আর অন্য সকল ধর্ম ভ্রান্ত কিনা? যারা এটা বিশ্বাস করে না তারা সকল ধর্মকে সমানভাবে শ্রদ্ধা করার মতবাদ প্রচার করে। কিন্তু যারা মনে-প্রাণে ইসলামকে একমাত্র সত্য ধর্ম হিসেবে বিশ্বাস করে আর কুফরীকে সর্বাপেক্ষা ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট অপরাধ বলে মনে করে তাদের পক্ষে ঐ ধরণের মতবাদে বিশ্বাস স্থাপণ করা সম্ভব নয়। সেটা যৌক্তিকও নয়।

অতএব, যারা কাফিরদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের জিহাদ বা যুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন উথ্থাপন করে তাদের সাথে প্রথমেই যুদ্ধের যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনার পরিবর্তে ইসলাম ধর্মের সত্যতা ও সকল কুফরী মতবাদের বাতুলতা সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে। যদি সে ইসলামকে সত্য ও সঠিক ধর্ম হিসেবে স্বীকার না করে তবে তার সাথে ভিন্ন কোনো আলোচনার প্রয়োজন নেই। আর যদি সে মেনে নেই যে, ইসলাম একটি সত্য ধর্ম তবে তার নিকট দ্বিতীয় প্রশ্ন হবে, সত্য ও সঠিক ধর্ম হিসেবে ইসলামের কি করা উচিৎ? মিথ্যা ও বাতিল সকল কুফরী মতবাদকে সহ্য করা না কি ধ্বংস করা? যদি সে উত্তর দিতে সক্ষম না হয় বা উত্তর দিতে না চায় তবে তাকে এই হাদীসটি শোনাতে হবে,

রসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, আমিই বিনাশকারী যার মাধ্যমে আল্লাহ কুফরীকে বিনাশ করবেন। (সহীহ বুখারী)

ইসলামে যুদ্ধ বিগ্রহ শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর প্রবন্ধটি পড়া শেষ হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এবং শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মুনীর এর ইসলামে যুদ্ধ বিগ্রহ পড়া শেষ হলে কমেন্টে আপনার মন্তব্য ব্যক্ত করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *